আপডেট : ০২ October ২০১৮
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি যে কোনো জনগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় খাদ্য সভ্যতা। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, নোয়াখালীর খাদ্য অভ্যাস ও খাদ্যসভ্যতার সঙ্গে ধর্মীয় প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। এ দেশে মুসলমানদের আগমনের আগে খাদ্যসভ্যতা ছিল এক আচারের। হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসনমতে নিরামিষ খাবারে বিশেষ অনুরক্ত। বিভিন্ন পূজা-পার্বণ উপলক্ষে হিন্দুদের তাদের ধর্মমতে খাবার খেতে হতো। বিশেষ করে হিন্দু বিধবাদের ক্ষেত্রে এই বিধান ছিল অত্যন্ত কঠিন। একইভাবে হিন্দু উপসম্প্রদায়ের মধ্যেও খাবার নিয়ে রয়েছে পার্থক্য। মুসলমানদের আগমনের পর খাদ্যসভ্যতায় আসে বিরাট পরিবর্তন। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে খাদ্য নিয়ে দেখা দেয় বিরোধ। এ বিরোধের কারণে সেনবাগ এলাকায়ও মাঝে মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য এবং প্রশ্নাতীতভাবে বলা যায়, খাদ্যকে কেন্দ্র করে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় সভ্যতা, আচার-অনুষ্ঠান আবর্তিত হয়। খাবারের রকম, পরিবেশন পদ্ধতি, খাওয়ার ধরন, খাদ্যের গুণাগুণ বিবেচনা করে পরিবার ও সমাজের মধ্যে সভ্যতার স্তর নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য খাদ্যসভ্যতা সম্পূর্ণ নির্ভর করে পারিবারিক শিক্ষা-দীক্ষা, আয়, রুচিবোধ, পেশা ইত্যাদির ওপর। নোয়াখালী জেলায় এসব পরিসীমার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। যেমন একসময় সকালের প্রথম খাওয়া, শহুরে ভাষায় যাকে বলা হয় নাশতা, তা হতো বাসি ভাত, গরমকালে পান্তা ভাত, শীতকালে কড়া ভাত, খই, মুড়ি, চিড়া দিয়ে। বিশেষ উপলক্ষে বা কোনো পালা-পার্বণের দিনে পিঠাপুলি নাশতা হিসেবে খাওয়া হতো। আর্থিক উন্নতির কারণে এখন অনেক সম্পন্ন পরিবারে বাসি ভাত বা পান্তা ভাতের স্থলে এসেছে চা-বিস্কুট, পাউরুটি, পরোটা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এ এলাকার খাদ্যাভ্যাস বৃহত্তর বাংলা ভাষাভাষীদের খাদ্যাভ্যাসের একটা অংশ। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে রয়েছে বেশ পার্থক্য। নোয়াখালী এলাকায় সাধারণ তরিতরকারি রান্না, মাছ-মাংস রান্না, মিষ্টি বানানো, নাশতা তৈরি ও পরিবেশনের পদ্ধতি নির্ভর করে পারিবারিক সভ্যতার ওপর। এ পদ্ধতিতে এক পরিবার থেকে অন্য পরিবারে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আবার এ অঞ্চলের খাদ্যসভ্যতা বাংলাদেশের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের খাদ্যসভ্যতার মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য। তবে সংক্ষেপে বলা যায়, খাদ্যসভ্যতার বড় নিয়ামক হলো পেশা। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, ছাত্র, বেকারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে নির্ধারিত হয় খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্যসভ্যতা। ঈদ, পূজা-পার্বণ, অতিথি আপ্যায়ন, বিয়ে, জামাই খাওয়া, বেয়াই খাওয়া, শিশুর নাম রাখা, শিশুর খতনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, চল্লিশা, শ্রাদ্ধসহ বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে খাদ্যসভ্যতার প্রকাশ ঘটে। এ অঞ্চলের খাদ্য উপাদান হিসেবে মশলার ব্যবহার এবং অন্যান্য রুচি বা স্বাদবর্ধক দ্রব্যের ব্যবহার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বহুলাংশে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের তুলনায় নোয়াখালীর জনগণ শুঁটকি, মরিচ ও মশলা কম ব্যবহার করে। এ দুই অঞ্চলের মধ্যে মাছ-তরকারি রান্নার কায়দাকানুনে রয়েছে বিরাট তফাত। উল্লেখ্য, পিঠাপুলি তৈরির দিক থেকে এ এলাকায়ও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চিতই পিঠা, খোলা পিঠা, ভাপা পিঠা, গোটা পিঠা, পোয়া পিঠা, মালপোয়া, গুলগুলা, ঝাল নাড়ু, মোলা, মোয়া, মিষ্টি নাড়ু, সাজের পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাফটা, থালা পিঠা, তালের পিঠা, বরই পিঠা, নারিকেল পুরি, নারিকেলের চিড়াসহ আরো অনেক ধরনের পিঠা এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। অন্যদিকে চিনি, গুড়, খেজুরের রস, নারিকেল, পাকা শসা, পাকা কুমড়া, তালের শাঁস ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয় নানা ধরনের মিষ্টি খাবার। বিশেষ উপলক্ষে শিরনি, পায়েশ, সুজি, ক্ষীর ইত্যাদি তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, প্রতি বছর রমজানের সময় ইফতার হিসেবে তৈরি করা হয় নানা রকমের মিষ্টি ও তেলে ভাজা খাবার। এসবের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো বুট ভাজি, ডালের বড়া, বেগুনি, কাবাব, চপ, খেজুর, শরবত ইত্যাদি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১