আপডেট : ০১ October ২০১৮
গঙ্গামতি। নামটি দারুণভাবে আকৃষ্ট করে সাহিত্যপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের। আর এই সুন্দর নামটিকে আরো সুন্দর করেছে এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য। প্রকৃতি নিপুণ হাতে, নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে গঙ্গামতি। বিশাল আয়তনের সবুজ বেষ্টনীর মাঝখান দিয়ে সমুদ্রে মিলিত লেকটিকে বলা যায় গঙ্গামতির অলঙ্কার। লেকের জোয়ার-ভাটার স্রোতে চলা মাছ ধরা ট্রলারগুলো ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে যেন প্রমোদতরী। ট্রলারে না উঠেও তীরে বসে ঢেউয়ের সঙ্গে মনেপ্রাণে দোল খায় ভ্রমণপিয়াসীরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত একটি চর। আর এ চরটির নাম গঙ্গামতি চর। কুয়াকাটায় আগত ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানও এটি। চরজুড়ে প্রাণজুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে রয়েছে স্বচ্ছ নীল জলরাশির একাধিক লেক আর প্রকৃতির কারুকাজখচিত বিশাল বেলাভূমি। প্রকৃতির নিপুণ হাতে গড়া গঙ্গামতির চরের লেক ধরে আগত পর্যটকদের স্পিডবোট, ট্রলার অথবা নৌকা নিয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। খুব সকালে গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বুক চিরে সূর্যোদয় দেখার স্বপ্নিল অনুভূতি এনে দেয় এক স্বর্গীয় আবেশ। সূর্য লাল আলো ছড়িয়ে দেয় গঙ্গামতির বেলাভূমিতে। সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি উচ্ছল করে তোলে অন্তর। ক্ষুদ্র কাঁকড়ার নিপুণ হাতে আঁকা নিখুঁত আলপনা দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠে। গাছে গাছে বানরের লাফালাফি, শেয়ালের ডাকাডাকি আর লুকোচুরি, শূকরের দুরূহ দন্ত দিয়ে মৃত্তিকাগর্ভের কেঁচো ধরে ভোজনের দৃশ্য দেখা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। বনমোরগের দুরন্তপনা নন্দিত করেছে গঙ্গামতি। কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাইনসহ কয়েকশ প্রজাতির বৃক্ষরাজি চিরসবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছে এ চরে। গাছে গাছে পাখির কলরবে মুখর থাকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। গহীন বনের ভেতর ছোট ছোট খাল। খালগুলো লেকের সঙ্গে মিলিত হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। জোয়ারের পানি বাগানের বৃক্ষরাজির মূল ভিজিয়ে দেয়। ভাটার স্রোতের টানে বনের শুকনো পাতা ও গাছ থেকে ঝরে পড়া ফুলগুলো পাড়ি জমায় অজানা ঠিকানায়। ফলে ভাটার সময় লেকটি হয় আরো দৃষ্টিনন্দন। সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটায় এসে গঙ্গামতি না গেলে পর্যটকদের ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যায়। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যেতে হয় গঙ্গামতির চরে। সমুদ্রে ভাটার সময় মাইক্রোবাস নিয়েও যায় অনেকে। স্থানীয় জেলে আ. জলিল মৃধা জানান, প্রতিদিন এখানে মোটরসাইকেলে দর্শনার্থীরা ভ্রমণে আসেন। তাদের সঙ্গে পর্যটকরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার ভাষায় সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে এখানেও প্রচুর পর্যটক আসবেন এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। গঙ্গামতির একটু সামনে রয়েছে বিশাল একটি ডুবোচর। ভাটা হলেই নানা প্রজাতির দেশি ও অতিথি পাখি খেলা করে। এখানে হাজারো জেলে সমুদ্রে মাছ শিকার করে। এ দৃশ্য অসাধারণ। চোখে না দেখলে বর্ণনা দেওয়া কঠিন। চকচকে বালুর বেলাভূমির মাঝে মাঝে লবণাক্ত পানির লেক দেখতে খুবই ভালো লাগে। ওই অখ্যাত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারলে জোছনার আলোর মতো সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করছেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকা এবং অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গঙ্গামতির চরকে পর্যটন শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তুলছে না বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এটা তাদের ব্যর্থতা। জরুরি এ খাতে আগ্রহ দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিকশিত করা উচিত। এতে সরকার প্রতি বছর উপকূলীয় এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে এবং ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১