বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ October ২০১৮

হুহু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা

ইন্দোনেশিয়ায় মানবিক বিপর্যয়

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেথেকে উদ্ধার করা এক মৃত শিশু ছবি : ইন্টারনেট


ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মৃত্যুর মুখে উদ্ধারকারীর আশায় প্রহর গুনছেন তারা। বেঁচে থাকতে সময়ের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে এই লড়াই চলছে উদ্ধারকারীদেরও। কত দ্রুত দুর্যোগকবলিত স্থানে পৌঁছা ও দুর্গতদের উদ্ধার করা যায়। তবে দুর্বল অবকাঠামোর কারণে অনেক স্থানেই তারা এখনো পৌঁছাতে পারেননি। এ অবস্থায় প্রতিনিয়তই আসছে মৃত্যুর সংবাদ। শুক্রবারের ওই সুনামির পর গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮৩২-এ দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের অন্যতম দুই শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুনামির আঘাতে মানচিত্র থেকে দোংগালা শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামি-পরবর্তী ৩৮ ঘণ্টায় শহরটিতে উদ্ধারকারী বাহিনী পৌঁছাতে পারেনি। অবকাঠামোগত দিক দিয়ে দুর্বল ও প্রায় তিন লাখ জনগোষ্ঠীর এ শহরটির হতাহতের সংখ্যা পালুর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জনসংখ্যার পালুতেই মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় সুলাওয়েসিতে ১৪ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কালা। গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে দেশটিতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। সতর্কতা জারির এক ঘণ্টা পরেই অতর্কিতে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বেগে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে সুনামি। এ সময় সাগর থেকে ছুটে আসা ২০ ফুট উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ে পালু ও দোংগালা শহরে।

দোংগালায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন দেশটির দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার (বিএনপিবি) মুখপাত্র সুতোপো পুরো নুগ্রোহো। লণ্ডভণ্ড হওয়া শহরটির কোনো খবরই জানতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, দোংগালার পারিজি, কাসিমবার, তোবফ, তরিবুলু, দোংকালাং, সাবাং এবং তিনোম্বো এলাকার ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হয়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য যেসব ভারী যন্ত্রাংশ দরকার তা পালু শহরের রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিএনপিবি প্রধান উইলিয়াম র্যামপ্যানজিলেই। দুর্যোগ বিভাগের কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাউগি বলেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপ সরাতে আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে ভারী যন্ত্রপাতি দরকার। শরীরের শক্তি দিয়ে এ কাজ করা আর সম্ভব হচ্ছে না।’

দাতব্য সংস্থা রেড ক্রস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পালু শহরের কতখানি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দোংগালার পরিস্থিতি। সেখানকার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।’ এদিকে সুলাওয়েসি দ্বীপের প্রাদেশিক রাজধানী পালুর সমুদ্র সৈকতে সুনামি আছড়ে পড়ার আগ মুহূর্তেও কয়েকশ মানুষ উৎসবের জন্য ভিড় করেছিল। উৎসবে অংশগ্রহণ করতে আসা ওই মানুষদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। উপকূলীয় এলাকায় আংশিকভাবে ঢাকা পড়া মৃতদেহ পড়ে আছে। নাইনিং নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সাগরতীরে অনেক মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং সাগরেও মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতির কথা যতটা ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে এর মাত্রা অনেক বেশি বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। রেড ক্রস জানিয়েছে, পালুতে ধ্বংসস্তূপের ভেতর আরো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছে। জীবিত ও আহতদের উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত এলাকায় কাজ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের ইন্দোনেশিয়া প্রধান জ্যান গেলফান্ড সিএনএনকে বলেন, শুধু বড় বড় শহরের বাসিন্দাদের বিষয় নয় এটি। দুর্গম এলাকায়ও অনেক মানুষ বাস করে, যাদের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন। রেড ক্রসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের ওপর এই ভূমিকম্প ও সুনামির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে। ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী আফটারশকের আতঙ্কে পালুর স্থানীয়দের অনেকে তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন না। অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে রাত কাটাচ্ছেন তারা। আফটারশকের কারণে রোগীদেরকেও হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পালুর বাসিন্দা রিসা কুসুমা এএফপিকে বলেন, ‘প্রতি মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ আসছে। খাবার পানি প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না। দোকানপাট, বাজার সব লুট হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে জাতিসংঘ ছাড়াও মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সহায়তা পাঠানোর কথা জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত তার সংস্থা। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ‘যদি তার (ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট উইদোদো) আমাদের সহায়তার প্রয়োজন হয়, তিনি তা পাবেন।’ ইতোমধ্যে কয়েকটি ত্রাণবাহী বিমান পালুর প্রধান বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১