আপডেট : ২৬ September ২০১৮
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। এর ফলে সমুদ্র ও পাহাড়ের হিমবাহে গলছে বরফ। এরই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ডুবছে উপকূলীয় এলাকা। বাড়ছে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা। বৃষ্টিপাতে তারতম্য ঘটে বাড়ছে বন্যা ও খরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের ৯৬ শতাংশের বেশি মানুষ। এর মধ্যে চরম ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। ১০ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ রয়েছে মাঝারি ঝুঁকিতে। আর মৃদু ঝুঁকির মধ্যে আছে দেশের ২ কোটি ৪ লাখ মানুষ। সব মিলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৭ লাখ। ২০১৫ সালে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩ লাখ ধরে এ হিসাব করা হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় সব দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। এ অবস্থায় ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। একই কারণে দেশের ভোগের হার ১১ শতাংশ কমে আসবে। আর জীবনযাত্রার মান কমবে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব আশঙ্কার কথা। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতে জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন শীর্ষক প্রতিবেদনটি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে বিশ্বব্যাংক। রাজধানীর একটি হোটেলে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হারটিং স্কেফার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দুই বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে অভিবাসনের চাপ পড়বে অন্যান্য এলাকায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় এর পরেই রয়েছে বরিশাল ও ঢাকা। এ ছাড়া রাজশাহী ও ময়মনসিংহ মাঝারি ঝুঁকিতে এবং সিলেট, রংপুর বিভাগ মৃদু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগ অবকাঠামো বিবেচনায় সারা দেশের মধ্যে তুলনামূলক বেশি উন্নত এলাকা। এ অঞ্চলে তুলনামূলক কম মানুষ কৃষিকাজে সংশ্লিষ্ট। এ বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সাতটিই ঝুঁকিতে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কক্সবাজার জেলা। ২০৫০ সাল নাগাদ এ জেলার জীবনযাত্রার মান ২০ দশমিক ২০ শতাংশ কমবে। নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নেওয়ায় এমনিতেই এ জেলার জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় দ্বিতীয় জেলা বান্দরবানে জীবনযাত্রার মান কমবে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ, রাঙামাটিতে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ ও নোয়াখালী জেলায় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ কমবে জীবনযাত্রার মান। অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি আছে পাহাড়ি এলাকায়। এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। কমে আসবে বনের পরিমাণ। এর ফলে ভূমিধসের কারণে সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে জীবনযাত্রার মান ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে আসার আশঙ্কা থাকলেও ভারতে জীবনযাত্রার মান কমবে দশমিক ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তানে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় জীবনযাত্রার মান প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। একই কারণে ভারত জিডিপির ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ আর শ্রীলঙ্কা ১০ শতাংশ হারাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা বিভিন্ন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ এলাকা। মাঝারি ধরনের ঝুঁকিতে আছে ৬৬ দশমিক ২০ ভাগ অঞ্চল। এর বাইরে আরো সাড়ে ১২ শতাংশ এলাকায় মৃদু ঝুঁকি রয়েছে। দেশের মাত্র ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এলাকা ঝুঁকির বাইরে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সম্ভাব্য ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় কৃষি খাতের বাইরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃষি খাতের বাইরে ১৫ শতাংশ বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে জলবায়ু পরিবর্তনে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে আসবে। কৃষি খাতের বাইরে ৩০ শতাংশ কর্ম সৃষ্টি করলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবনযাত্রার মান না কমে উল্টো তা বাড়বে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তুলনামূলক নিম্নভূমি বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। একই কারণে ভারতীয় মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় ও তৎসংলগ্ন স্থলভূমিতে বন্যার প্রাদুর্ভাব বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। ফলে ঢাকা, করাচি, মুম্বাই ও কলকাতার মতো নগরগুলোতে অন্তত ৫ কোটি বাড়তি লোকের চাপ পড়বে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে বাড়তি তাপমাত্রার কারণে ৩ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে। ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দক্ষিণ এশিয়ায় আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জীবনযাত্রার মানে বছরে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়াবে ২ দশমিক ৯০ শতাংশে। একই সময়ে কার্বন নিঃসরণে তীব্রতার কারণে জীবনযাত্রায় ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১