আপডেট : ২৫ September ২০১৮
নিজের রোগের প্রতিকার খুঁজতে খুঁজতে ধনন্তরি চিকিৎসক হয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসে অনেক থাকলেও বিজ্ঞানী হয়ে যাওয়ার নজির ছিল না বললেই চলে। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পরও নিজের পারিবারিক একটি জটিল রোগের চিকিৎসার উপায় আবিষ্কার করেছেন সোনিয়া বল্লভ নামের এক নারী। ফ্যামিলিয়া ইনসোমনিয়া নামের নারীদের মস্তিষ্কের এক দুরারোগ্য রোগের প্রতিকার আবিষ্কারের এই কৃতিত্বে তার স্বীকৃতি মিলেছে পরিপূর্ণ এক বিজ্ঞানীরও। আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন সোনিয়া বল্লভ। চাকরিটা চলছিল ঠিকঠাকই। এর মধ্যে বয়স যখন ২৬ তখন ফ্যামিলিয়া ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত মাকে হারান সোনিয়া। আর এর ঠিক এক বছর পরই ২০১১ সালের এক পড়ন্ত বিকালে মাথায় বাজ পড়ার মতো একটা রিপোর্ট আসে তার হাতে, মেডিকেল রিপোর্ট। জেনেটিক্যাল মিউটেশনের শিকার হয়ে যে রোগে তার মা মারা গিয়েছেন সেই রোগের বাসা আছে নিজের শরীরেও! জিনের অস্বাভাবিক ভাঁজের কারণে ফ্যামিলিয়া ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনিও। অথচ তখনো এই রোগের কোনো প্রতিকার জানা নেই। কিন্তু ভেঙে পড়লেন না সোনিয়া। সিদ্ধান্ত নিলেন যে রোগের কারণে তার মা মারা গিয়েছেন, যে রোগ বয়ে বেড়াচ্ছে তার পরিবারের আরো সদস্যরা তার প্রতিকারের উপায় তিনি খুঁজে বের করবেন। আইনজীবী স্বামী এরিক মিনিকেলের সহায়তায় শুরু করলেন কাজ। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে কাজ শুরু করলেন তারা। প্রায় পাঁচ বছর গবেষণার পর তারা ঘোষণা দিলেন, ফ্যামিলিয়া ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তির একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন তারা। সে সময় বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয় তাদের সেই গবেষণার নিবন্ধটি। এমআইটিও স্বীকৃতি দেয় তাদের আবিষ্কারের। তবে দ্য নিউইয়র্ক সে সময় ‘দ্য প্রিয়ন লাভ স্টোরি’ শিরোনামের একটি ফিচার ছাপলে সারা বিশ্বেই সারা পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তাদের এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানান। পরে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এমআইটির টেকনোলজির ওয়েবসাইটে সোনিয়াকে নিয়ে ‘জেনেটিক বোম নিষ্ক্রিয়করণে আক্রান্ত এক নারীর লড়াই’- শিরোনামে একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সোনিয়া বল্লভ ও এরিক মিনিকেল। সোনিয়া গার্ডিয়ানকে শুনিয়েছেন তার পেশা বদলের গল্প ও সফল বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাহিনী। সোনিয়া জানান, ২০১০ সালে তার মায়ের যখন এই রোগটি ধরা পড়ে তখনই জীবনের প্রথম এই রোগের নাম শোনেন তিনি। অদ্ভুত এই রোগের বিষয়ে তখন থেকেই আগ্রহী হয় তার কৌতূহলী মন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বছরই ৫১ বছর বয়সেই মা চিরবিদায় নেয় সকলকে ছেড়ে। মায়ের অসুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়ার ঘটনাটি সোনিয়ার কাছে সময় বেঁধে দেওয়া ভিডিও গেমের মতো মনে হয়। আর এর পরের বছরই হাতে আসে নিজের রিপোর্ট। তখন আসলে সোনিয়া বুঝতে পারছিলেন না তার কী করা উচিত? মায়ের মতো মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা নাকি এই অদ্ভুত-অভিশপ্ত রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত? শেষ পর্যন্ত স্বামী এরিকের সাহসে শুরু করলেন লড়াই। ওষুধ খেয়ে বা ব্যায়াম করে রোগকে নিয়ন্ত্রণের লড়াই নয়, ওষুধ আবিষ্কার করে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াই। আর এই লড়াইয়ের প্রত্যয়ই তাকে আইন পেশা থেকে গবেষণাগারের একজন সফল বিজ্ঞানীতে পরিণত হওয়ার ইন্ধন জুগিয়েছে। মস্তিষ্কের কয়েকটি রোগের মধ্যে প্রিয়ন ডিজিস বা ফ্যামিলিয়া ইনসোমনিয়া খুবই বিরল একটি রোগ। মস্তিষ্কের যেসব রোগ হয় তার মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ ডিএনএ’র এই অস্বাভাবিক ভাঁজের কারণে ঘটে। তার কোনো লক্ষণ ছাড়াই এটি প্রকট হয়ে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সোনিয়ার ভাষ্য, এই অসঙ্গতি নিয়ে অনেকে ৮৯ বছরও বাঁচতে পারে আবার অনেকে ১২ বছরেই মরতে পারে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১