আপডেট : ২১ September ২০১৮
নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে বিএনপি। ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম রূপকার গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন শর্ত দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেনতায় গড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে আসতে হলে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। এরই মধ্যে ড. কামালের নেতৃত্ব মানা ও ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরপরই ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে, তবে কি বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ল? বিএনপির একাধিক নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, রাজনীতির উঁচু নিচু পথে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। তাদের প্রথম লক্ষ্য সরকারকে হটানো। মসৃণ পথ পেলে ‘রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার’ স্বপ্নের বাকিটা দেখতে চায়। এই সময় বিএনপির মূলমন্ত্র-‘শত্রুর শত্রু, আমার বন্ধু’। অতীতের তিক্ততা হজম করে প্রয়োজনে বড় ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত তারা। স্বল্প নেতাকর্মীর রাজনৈতিক মিত্রকে নিজ দলের জনশক্তি সরবরাহ করতেও রাজি বিএনপি। পাশাপাশি শক্তিশালী মিত্রকে হারাতে নারাজ তারা। ভোটের রাজনীতিতে জোটের সুবিধা নিতে সহনীয় শর্ত মেনেই ড. কামালের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির একজন নেতা অবশ্য বলেছেন, বহুদিনের পরীক্ষিত বন্ধু ‘জামায়াত’ কৌশলে তাদের পক্ষেই থাকবে। ‘আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন’-এই তিন ইস্যুতে ২০ বছর আগে জোট গঠন করে বিএনপি-জামায়াতসহ চার দল। জামায়াতকে নিয়ে তারা সরকার গঠন করেছে, ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনও করেছে। কখনো সফল, কখনো ব্যর্থ হয়েছে। ঘটেছে মনোমালিন্যও। তবে কেউ কাউকে ছাড়েনি। সময়ের আবর্তে এই জোটের শরিক সংখ্যা এখন ২০। তবে আগের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে জামায়াত। এখন তাদের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নেই। আদালতে ঝুলন্ত দলের নিবন্ধনও। তবে ভোটের মাঠে তাদের অংশীদারিত্ব সাত ভাগ। আছে নিজ আদর্শের দক্ষ জনশক্তি, অর্থনৈতিক ভিতও মজবুত। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের দলের শীর্ষ কয়েক নেতার ফাঁসি হলেও সঞ্চিত শক্তি, চেইন অব কমান্ড বহাল আছে। তারা শুধু নিষ্ক্রিয় রাজপথে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলছে রাজনৈতিক দলের জোটবদ্ধ হওয়ার মৌসুম। ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ এখন আলোচনায়। তারা সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার। ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন ক্লিন ইমেজের বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ত্রিদলীয় যুক্তফ্রন্ট; যার শরিক আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নান নাগরিক ঐক্য। ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, তফসিলের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে সব দলের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন; সভা সমাবেশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা; রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার- রাজবন্দির মুক্তি; নির্বাচনের আগে পরে ৪০ দিন বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন এবং ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা বাদ দেওয়া। আছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নয়টি লক্ষ্যও। একই সঙ্গে তাদের ঘোষণা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় জোটে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল থাকতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হবে এই জোট। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বেশিরভাগ দাবির মিল আছে। তাই ড. কামালের ঐক্যের সঙ্গে মিলতে চায় বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে এ ব্যাপারে গ্রিন সিগনাল’ দিয়েছে। এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে দলটি। জামায়াতের উপস্থিতিতে আলোচনায় ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব আসার পরই যোগাযোগ করে ড. কামালের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে তারা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই, তবে তার জন্য সবারই ছাড়ের মানসিকতা দরকার। আলাপকালে বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়ায় শরিক হচ্ছে বিএনপি। স্বল্প নেতাকর্মী নিয়ে গড়া ড. কামাল-বি চৌধুরীর জোটের সভা-সমাবেশে লোকবলও সরবরাহ করবে দলটি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরীক্ষিত মিত্র জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়ছে না বিএনপি। নিবন্ধনহীন জামায়াত মঞ্চে না থাকলেও তাদের উপস্থিতি থাকবে আন্দোলন এবং ভোটের মাঠে। ইতোমধ্যে ড. কামালও বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী কোথাও নেই। তাদের কোনো নিবন্ধন নেই, দলীয় প্রতীকও নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ড. কামালদের সঙ্গে ঐক্য হচ্ছে বিএনপির। তারা তো আগেই বলেছে-জামায়াতকে নেবে না। বিএনপির বেলায় এমন তো শর্ত নেই যে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে যে, ‘আমরা জামায়াতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করলাম’। জামায়াতের নেতাকর্মীরা তো এই দেশের ভোটার, তাদের তো নির্বাচনে লড়াইয়ের অধিকার আছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় না থাকলেও তো তারা ভোট করতে পারবে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা একটি অগণতান্ত্রিক শক্তি ও সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়তে যাচ্ছি। আগে থেকেই ২০ দলীয় জোট করেছি, যুক্তফ্রন্টসহ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ হয়েছে। আলোচনা চলছে শেষ সীমানায় গিয়ে চূড়ান্ত কথা বলা যাবে। মূলত আওয়ামী লীগের বাইরের সকল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা চলছে। তা না হলে যুগপৎ আন্দোলন করব আমরা। এ দিকে দলীয় আদর্শচ্যুত হওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে বিএনপির সাবেক মহাসচিব বি. চৌধুরীকে। ক্ষমতায় থাকতে তাকেই রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেছিল বিএনপি। জাতীয় ঐক্য গড়তে গিয়ে তাকেই এখন নেতা মানতে হচ্ছে। তবে তার বেলায় আছে নানা শঙ্কাও। অভিযোগ আছে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন (সরকার) তাদের সঙ্গে আঁতাতের। তারপরও মহৌষধ ‘নিম’ তিতার রস খেতে হচ্ছে। জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের জোট ঐক্যবদ্ধ। যথাসময়ে বৈঠক, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এখানে ছাড়াছাড়ির কোনো কারণ নেই। আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন-এই তিন ইস্যুতে জোটের কোনো বিচ্যুতি ঘটেনি। আশা রাখি ঘটবেও না। ড. কামালদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো ঐক্য হচ্ছে না; ঐক্য করছে বিএনপি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১