বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৭ September ২০১৮

জোড়াতালি দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা

হুমকির মুখে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ

ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে পদ্ম-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল ছবি : বাংলাদেশের খবর


ধেয়ে আসছে উজানের পানি । বিশাল পানিরাশির চাপে হুমকির মুখে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। ভয়ঙ্কর রুদ্ররূপ ধারণ করছে প্রমত্তা পদ্ম-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল। শহর রক্ষা বাঁধের মোলহেডে নদীর গভীরতা ৭৫-৮০ মিটার অর্থাৎ ২৪০ফুট। স্রোতের গতিবেগ ঘন্টায় ৮-৯ নটিক্যাল মাইল। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর প্রায় ৮০ভাগ পানি চাঁদপুর মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। এ কারনে চাঁদপুরের তিন নদীর প্রবাহমান পানিরাশিকে নদী বলতে নারাজ পানি বিশেষজ্ঞগন। তাদের স্বচ্ছ জবাব এটি নদী নয়, সাগর। ত্রিনদীর প্রবল পানি প্রবাহের সাথে ঘূর্ণিস্রোতে নদীর উত্তাল রুদ্ররূপ এখন ভয়ঙ্কর।

পাউবোর চাঁদপুরে কর্মরত প্রকৌশলীদের মতে প্রতিদিনই উজানের পানির চাপ বাড়ছে। শহর রক্ষা বাঁধে বিপদ সীমার কাছ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ চাপ অব্যাহত থাকলে শেষ পযর্ন্ত কী হয় বলা যায় না। কোন কারনে শহর রক্ষা বাঁধের নতুনবাজার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২/৩ দিনের মধ্যে পুরো চাঁদপুর শহর ধংসলীলায় পরিনত হবে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকবার শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার অংশে আঘাত করেছে মেঘনা। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ব্লক নদীতে দেবে গেছে। মুহুর্তের মধ্যে সেখানে ভাঙ্গন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙ্গন রোধে তাৎক্ষনিক কিছু বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হয়।

নদী ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল। ভাঙ্গন রোধে শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার অংশের হরিসভা এলাকায় ২ হাজার ৮শ’ ৮০ বস্তা বালিভর্তি জিও ব্যাগ এবং ৬ হাজার ৬শ’ ১৫পিস সিসি ব্লক ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। এমনই তথ্য জানালেন শহর রক্ষা বাঁধের (পুরানবাজার) উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. আশ্রাফুজ্জামান।

পাউবো সূত্র জানায়, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৩৬০মিটার। ১৯৭১ সাল থেকে ২০১০সাল পযর্ন্ত শহর রক্ষা বাঁধে ব্যয় হয়েছে ১শ’ ৬৫ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৩৯ বছরে ঐ টাকা সরকার বরাদ্দ দেয়া বিভিন্ন কিস্তিতে। ফলে কাজটি অতোটা টেকসইজনক হয়নি।

এদিকে গত বর্ষা মৌসুমেও শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার অংশে আঘাত করেছিল মেঘনা। এ কারনে শুকনা মৌসুমে চাঁদপুর পাউবো সংস্কার কাজে সিসি ব্লক বসানোর জন্যে মাত্র এক কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন মিলেনি। প্রস্তাব ছিল শহর রক্ষা বাঁধের ঝুকিপূর্ণ ২০০মিটার এলাকা ব্লক দিয়ে সীল করে দেয়া হবে। স্টকে থাকা ৪০ হাজার সিসি ব্লক এ কাজে ব্যবহার করা হবে। স্টকে থাকার কারনে নতুন করে ৪০ হাজার ব্লক তৈরী খাতে ২০ কোটি টাকার ব্যয় করতে হবে।

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী জানান, চাঁদপুরবাসীর জন্যে বড় ধরনের দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। এর থেকে উত্তোরণের জন্যে গত দুই মাস আগে ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ডিজাইন অনুমোদন করেছে পাউবো। একনেক বৈঠকে প্রকল্প অনুমোদিত হলে শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয় হবে।

শহর রক্ষা বাঁধের (পুরানবাজার) উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. আশ্রাফুজ্জামান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনেও নদী বিরূপ আচরণ করছে। তাছাড়া নদীর পাড় থেকে ৫শ’ মিটার দূরে ডুবোচর জেগে ওঠেছে। এ কারনে পানি স্বাভাবিক গতিতে ভাটিতে না যেয়ে কুল ঘেষে ওল্টো উজানের দিকে আসছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণয়ন স্রোত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, বর্ষা মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিস্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে নদীর গভীরতা প্রায় ১২০ফুট। স্কাউরিং বেশি হওয়ায় ৬০ মিটার ব্লকবাঁধে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো জানান, উজানের পানির চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কী হয় বলা যায় না। এক কথায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষায় নতুন প্রকল্প, আগে শেষ হওয়া কাজের ম্যান্টেনেইজ এবং আপদকালীন ব্যবস্থাসহ সব ধরনের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে ৫’শ কোটি টাকা কিন্তু কোন অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সাখুয়ায় নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক ফেলানোর কাজ চলছে সেখান থেকে ব্লক এনে চাঁদপুর শহরকে জোড়াতালি দিয়ে রক্ষা করার কাজ করছি। উধর্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও বরাদ্দ পেলেই চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় বড় ধরনের প্রজেক্ট নেয়া হবে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনিও বিষয়টি অবহিত রয়েছেন।

প্রকৌশলী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যদি সঠিক সময়ে বরাদ্ধ না মেলে তাহলে চাঁদপুর থেকে আমার পালিয়ে যেতে হবে। কারণ পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন শুরু হবে। বরাদ্ধ না মেললে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব নয়।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১