আপডেট : ১৬ September ২০১৮
রেজাউল করিম বকুল, শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি কুসংস্কার আর দারিদ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী জবেদা বেগম। তার অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস প্রচেষ্টায় নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন অনেক দূর। শত সামাজিক বাধা আর কুসংস্কার পায়ে দলে সামনে এগিয়ে যাওয়া এক উদ্যমী নারী তিনি। অনেক অবহেলিত নারীর কাছে তিনি বাধা জয় করা এক সফল ব্যক্তির প্রতীক। যিনি স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন অসংখ্য নারী ও শিশুকে। সফলতার আলো জ্বালিয়েছেন আশপাশের শতাধিক নারীর জীবনে। জবেদা বেগম শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের দহেড়পাড় গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মতিউর রহমানের স্ত্রী। সম্প্রতি কথা হয় জবেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন তার ফেলে আসা কষ্টের দিনগুলোর কথা আর শোনালেন বর্তমান সফলতার গল্প। অষ্টম শ্রেণি পাসের পর বিয়ে হয় জবেদা বেগমের। স্বামীর বেকারত্ব আর সংসারে ছিল অভাব-অনটন। প্রত্যন্ত এ গ্রামে তার পক্ষে আয় করার কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি সামাজিক কুসংস্কার উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়েন। যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে শেখেন সেলাইয়ের কাজ। পরে একটি এনজিও থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতেই শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। এর পাশাপাশি তিনি মহিলা অধিদফতর থেকে শেখেন বাঁশ-বেতসহ কুটির শিল্প। সেলাইসহ বাঁশের বেড়া, কুলা, চালুন, ডুলি, মাছ ধরার খালুই, বোরুং, পাইরে ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। বাড়তে থাকে তার আয়ের উৎস। গত ৭-৮ বছরে পরিবর্তন হয় তার আর্থিক অবস্থার। এখন তার গোলাভরা ধান। পুকুরভরা মাছ। সংসারে এক ছেলে সরকারি চাকরিতে। আরেক ছেলে ও মেয়ে কলেজে পড়ালেখা করছে। তার নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি কাজ করছেন প্রতিবেশী অবহেলিত শতাধিক নারীকে নিয়ে। নিজ উদ্যোগে গঠন করেন নারী উন্নয়ন সংগঠন। সেখানে আগত নারীদের বিনামূলে এসব প্রশিক্ষণ করান। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা বিলাতে থাকেন সবার মধ্যে। এভাবেই বাড়ে কর্মময় নারীর সংখ্যা। কথা হয় ওই গ্রামের ছালেহা বেগম, আয়শা বেগম, খোদেজা বেগম, আমেনা খাতুনসহ অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে তিনি শিশু ও বয়স্ক নারীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। নারীদের অবসর সময়ে বই ও পত্রিকা পড়তে গড়ে তোলেন লাইব্রেরি। তিনি এখন দহেড়পাড় মায়ের দোয়া মহিলা উন্নয়ন সমিতি ও দহেরপাড় জবেদা-মতিউর গণগ্রন্থাগারের সভানেত্রী। তিনি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ নানা অমানবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সমাজের অবহেলিত নারীদের সচেতন ও স্বাবলম্বী করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সহযোগিতায় প্রতিবেশী অনেকেই এখন এসব কাজ করে স্বাবলম্বী। এমনই স্বাবলম্বী হওয়া বিধবা নারী মোমেনা বেগম জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাতেন। জবেদা বেগমের পরামর্শে তিনি বাঁশ-বেত ও সেলাইয়ের কাজ শেখেন। বাঁশ-বেতের কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। এখন তার আর কোনো অভাব নেই। সফলতা অর্জনকারী জবেদা বেগমসহ অনেক নারী বলেন, আমরা দহেড়পাড় গ্রামকে একটি মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে ডিজিটাল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন জীবন সংগ্রামী এসব নারী। গ্রামবাসীর মতে, জবেদা বেগম অসংখ্য নারী ও শিশুকে দেখাচ্ছেন সম্ভাবনার আলো। তিনি এখন সমাজের মডেল।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১