আপডেট : ১৩ September ২০১৮
রাফিউজ্জামান রাফি আগের দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার মানুষের দেওয়া প্রিয় গোলাপ ফুল বইয়ের অথবা ডায়রির পাতার ভাঁজে সযতনে রেখে দিত। তারপর দিন যেত, মাস যেত, বছর যেত। এক সময় সেই সুমধুর ভালোবাসার স্মৃতি বহন করা গোলাপটি শুকিয়ে যেত, তার পাপড়িগুলো ঝরে যেত। কিন্তু বেদের মেয়ে জোসনার বেলায় ঠিক তার উল্টো হলো! আজ থেকে বাইশ বছর আগে যে ভালোবাসা নামক গোলাপটি জোসনা সময়ের খাতার ভাঁজে অযতনে চাপা দিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরবাসে, দীর্ঘ বাইশ বছর পর তিনি সেই পাতা উল্টিয়ে দেখতে পেলেন ভালোবাসা নামক গোলাপটি এখনো তেমন সতেজই রয়েছে। তার গন্ধটাও রয়েছে ঠিক আগের মতোই টাটকা। এটা দেখে একবারও কি জোসনার মনে হয়নি কেন এতদিন এই গোলাপটি কালের পাতায় চাপা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি? এই গোলাপটিকে আগলে রাখার কি একটু দায়বদ্ধতাও তার ছিল না? বেদের মেয়ে’খ্যাত এক সময়ের ধুন্ধুমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অঞ্জু ঘোষের কথা বলছিলাম। আজ থেকে বাইশ বছর আগের ছয়টি বছর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকার নাম অঞ্জু ঘোষ। সেসময় বিরতিহীনভাবে পর্দা কাঁপিয়েছেন তিনি। ছয় বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে তিনি দিয়েছিলেন সর্বকালের ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’সহ অনেকগুলো চলচ্চিত্র। পাশাপাশি তিনি পেয়েছিলেন সাফল্যের শিখরে যাওয়ার সিঁড়ি, পেয়েছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকার তকমা, পেয়েছিলেন কোটি ভক্ত। কিন্তু হঠাৎই এক দিন এই নায়িকা এত অর্জন, এত ভালোবাসা পায়ে ঠেলে হুট করে পাড়ি জমান প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানেই থিতু হন। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে তিনি এসেছিলেন ঢাকায়। তাকে ঘিরে এফডিসিতে যে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তাতে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন। তার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল এ মাটির টানের কথা, তার শিকড়ের কথা। তিনি আরো বলেছেন, তার দেশ ছাড়ার নেপথ্যে কোনো অভিমান ছিল না। কিন্তু আমার অভিমানী মন অভিমান করে তার এই মাটি ও শিকড়ের টানের কথাগুলো কতটা সত্য, কতটা মেকি তা নিয়ে ভাবতে বসে। জানি তার প্রতি এমন দুঃসাহস করা উচিত না। আচ্ছা, দুঃসাহস করলাম না, তবে অভিমান তো করতে পারি। কেননা, তিনি তো আপন মানুষ। আর আপন মানুষের প্রতি অভিমান করাই যায়। সেই অভিমান থেকেই বলছি, যে টান ও ভালোবাসার কথা তিনি বলেছেন- সেই টান, সেই ভালোবাসা ভুলে কীভাবে তিনি দিব্যি রয়ে গেলেন ওপার বাংলায়! যে টান তাকে এখন কাঁদালো সে টান কি তখন তাকে একটুও ভাবায়নি? এদেশের চলচ্চিত্রের প্রতি তারও কিছু দায়বদ্ধতা ছিল? এই টান, এই ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে সেই দায়বদ্ধতা ভুলে সুস্থ মস্তিষ্কে এতকাল দিব্যি ওদেশে রয়ে গেলেন কীভাবে? তার তো পরবাস ছেড়ে তার জন্মভূমিতে ফিরে আসা উচিত ছিল, কেননা, যে দেশ তাকে পর্দা কাঁপানো বেদের মেয়ে জোসনা বানিয়েছে, সেই দেশের চলচ্চিত্রকে তারও তো আরো অনেক দেওয়ার ছিল। কিন্তু তা না করে তিনি তখন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন টালিগঞ্জকে তথা হালের টলিউডকে। তার মনে কী একবারও উদয় হয়নি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র তার অভাববোধ (একজন তারকার অভাব যে একটি দেশের চলচ্চিত্রকে কতটা সহায়হীন করে দেয় সালমান শাহ ও মান্নার মৃত্যুতে আমরা ভালোভাবেই দেখেছি) করছে। তার কি একবারও মনে হয়নি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র তার কাঁধেও ভর করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল, এখন সেই কাঁধটি সে কোথায় পাবে? যারা তার নিকট থেকে আরো ব্যবসাসফল সিনেমা আশা করে মুখিয়ে থাকত, একবারও মনের পর্দায় ভেসে ওঠেনি তার সেই অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের কথা? আজ যে শিকড়ের টান টন টন করে উঠল বেদের মেয়ের হূদয়ে সেই টান দীর্ঘ বাইশ বছর কীভাবে মাটি চাপা দিয়ে শিকড়টাকে শিকড় বাকড় তুলে ফেলে বিদেশকে আপন ভেবে বিদেশি চলচ্চিত্রপাড়াকে আপন বাড়ি হিসেবে নিলেন?
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১