আপডেট : ১২ September ২০১৮
ভারী বর্ষণে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তাসহ কয়েকটি নদীর পানি বেড়ে উত্তরের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েন লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার কয়েক হাজার মানুষ। বন্যাঝুঁকিতে থাকা কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার লাখো মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সম্প্রতি চীনে টানা বর্ষণে ব্রহ্মপুত্রের পানি রেকর্ড পরিমাণ বাড়ার পর ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের তরফ থেকে সতর্ক করা হয় বাংলাদেশকে। এই সতর্কতার কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তরে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করায় জনমনে আতঙ্ক কমছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর। লালমনিরহাট : তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীতীরবর্তী বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়। গতকাল পানি কমতে শুরু করলেও বিকাল পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলেন ২০ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। বন্যায় ভেঙে পড়েছে চর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন। এ ছাড়া কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে ফসলি জমির ক্ষতিসহ হুমকির মুখে পড়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামের অস্থায়ী বাঁধ। হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের পানি উন্নয়ন বের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে তিস্তায় পানিপ্রবাহ কমেছে। তবে আবারো পানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। রফিকুল আলম জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৯টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। তবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। রংপুর : তিস্তায় আকস্মিক পানি বাড়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, নোহালী, কোলকোন্দ ও বড়াইবাড়িসহ ৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছেন ৭টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্লাবিত এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল বানভাসি মানুষকে জরুরিভাবে ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, সোমবার ভারতের গজলডোবার ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ গতকাল বলেন, ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গতকাল দুপুরে জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ভাঙ্গন এলাকার মানুষজন নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মানববন্ধন করেছে। নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতভিটা, নানকার, নন্দদুলালের ভিটা, মডেল কলেজ, পাটেশ্বরী বাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার ৯টি উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে অনেক সবজিক্ষেত ডুবে গেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন জানায়, কুড়িগ্রামে বন্যা মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি রয়েছে। নীলফামারী : আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন নীলফামারীর নদীতীরবর্তী মানুষ। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরগ্রামে বন্যা আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা রাত জেগে গ্রাম রক্ষা বাঁধের কাজ করেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা আমিনুল রশীদ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে পানি কমতে থাকে এবং বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে ব্যারাজের সব ক’টি (৪৪টি) গেট খুলে রাখা হয়। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটির সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বালির বস্তা ফেলে বাঁধটি সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১