আপডেট : ০৮ September ২০১৮
তথ্যপ্রযুক্তি জীবনকে করে তুলেছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা মানুষ কোনোভাবে অস্বীকার করতে পারবে না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিসীম। প্রতিটি জিনিসের ইতিবাচক ও নেতিবাচক কিছু দিক থাকে। প্রতিটি জিনিসের মতো তথ্যপ্রযুক্তির দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক।
কিছু অসৎ ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে চলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এসে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে। সাইবার অপরাধীরা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে তাদের ছবি, ব্যক্তিগত ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে এবং এসব তথ্য দিয়ে তারা আইনবিরোধী কাজ করে চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতন বাড়ছে। বিভিন্নভাবে নারী সমাজ সাইবার ক্রাইমের ফলে নির্যাতিত হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, একজনের ছবি ফেসবুক থেকে নিয়ে অন্যের ছবিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় পর্নোগ্রাফি। এই ভয়ঙ্কর থাবার বিস্তার থেকে তরুণ সমাজের মুক্তি এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে খ্যাত ওয়েবসাইটগুলো দেশের তরুণ সমাজকে অন্ধকারের দিকেই ধাবিত করছে। অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজের বড় একটি অংশ আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা সাইবার ক্রাইমে। সাইবার ক্রাইম থেকে পরবর্তী সময়ে ঘটছে নানা ধরনের বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, নতুনত্বের প্রতি তরুণ সমাজের আসক্তি, সামাজিকভাবে সচেতনতার অভাব, পরিবারের উদাসীনতা, ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে জীবনযাপন, সুফল-কুফল বিচার বিবেচনা না করেই প্রযুক্তির ব্যবহার, সঙ্গ দোষ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবই মূলত সাইবার ক্রাইম সংঘটনের মূল কারণ। ইদানীং মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির মারাত্মক বিস্তার ঘটেছে। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হচ্ছে মোবাইল ফোন। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। কম দামি হওয়ায় মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সংবলিত হ্যান্ডসেট তরুণদের হাতে হাতে ঘুরে ফিরছে। ইন্টারনাল বা এক্সটারনাল মেমোরির মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো সংরক্ষণ ও ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মোবাইল ফোনে। এক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা।সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের আইন সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণেও বাড়ছে এ ধরনের অপরাধ। তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭(১) ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অশ্লীল, যার দ্বারা কারো মানহানি ঘটে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়; আর এ ধরনের তথ্যগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হলে অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে। অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২-এ আছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি তৈরি বা সরবরাহ করলে তিনি এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
একদিকে বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জীবনে অনাবিল সুখ বয়ে এনেছে, অপরদিকে বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ধ্বংস ও ক্ষতির সম্ভাবনাও সৃষ্টি করছে। প্রায়ই দেখা যায়, ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউব, টুইটার প্রভৃতিতে মিথ্যা, অশ্লীল ও অবমাননাকর ছবি এবং সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এসব সংবাদ ও ছবি প্রকাশের পেছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। আর উদ্দেশ্যটি হলো কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা দলকে জনসম্মুখে অবমাননা ও হেয় করা। এসব মাধ্যম ব্যবহারকারীরা অনেকে না বুঝে এ ধরনের ছবি ও সংবাদে লাইক প্রদান বা শেয়ার করেন এবং অপরাধকারীরা পরোক্ষ সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি, তাই তাদের সচেতন করা সবচেয়ে জরুরি। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে চান, এতে লাভের চাইতে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। কারণ উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীরা তখন বিভিন্ন প্রযুক্তির অনেক অপরিচিত বিষয় তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে শেখে, ফলে তাদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে প্রযুক্তির ভালো এবং ক্ষতিকর দুটি দিক নিয়েই আলোচনা করতে পারে, এতে তরুণরা খুব সহজেই সচেতন হতে পারবে।
লেখক : সাংবাদিক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১