বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৯ August ২০১৮

পরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তি

বাস সঙ্কটে একদিকে বাদুড়ঝোলা হয়ে চলাচল। অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও অসচেতন মানুষ। চেষ্টা করেও থামানো যাচ্ছে না বিপজ্জনক রাস্তা পারাপার। গতকাল দুপুরে শাহবাগের দৃশ্য ছবি : বাংলাদেশের খবর


শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে তোলপাড় সারা দেশে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল পরিবহন ব্যবস্থা। নিরাপত্তার অজুহাতে গত ৬ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটও হয়ে গেছে। কিন্তু নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিরতি চললেও পুরোপুরি সচল হয়নি পরিবহন ব্যবস্থা। এর মধ্যে ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ। ফলে কঠোর অবস্থানে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। রাজধানীসহ সারা দেশের সড়ক, মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে চলছে অভিযান। আর এতেই ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, কাগজপত্রে জটিলতা থাকা যানবাহন বের হচ্ছে না রাস্তায়। আবার অনেকে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ এনেও বন্ধ রেখেছেন যানবাহন। ফলে গণপরিবহন স্বল্পতায় রাজধানীবাসী পড়েছে চরম বিপাকে। আর ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাক, লরি ও পিকআপ না পাওয়ায় অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি ও সরবরাহ করতে পারছেন না।

মিরপুর-১ চাউল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ও মেসার্স কাদের রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রহিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত এক সপ্তাহ আন্দোলন চলায় ঢাকায় কোনো ট্রাক ঢুকতে পারেনি। মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সঙ্কট এখনো কাটেনি। রাইস মিল ও বন্দর থেকে চাল ঢাকায় আনার ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাক মালিকরা বলছেন, রাস্তায় নাকি পুলিশ হয়রানি করছে।

কুষ্টিয়ার মেসার্স হালিম রাইস এজেন্সি ও হালিমস রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল হালিমও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমার নিজস্ব ট্রাকের মাধ্যমেই সারা দেশে চাল রফতানি করি। কিন্তু ট্রাফিক সপ্তাহ চলায় পুলিশ কারণে-অকারণে হয়রানি করছে। এতে ড্রাইভার ট্রাক চালাতে রাজি হচ্ছেন না। অর্ডার থাকলেও মোকাম থেকে কোনো গাড়ি বের করতে পারছি না।

কাওরানবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারের মাতৃ ফল ও সবজি ভান্ডারের মালিক সুলতান মোহাম্মদ মানিক বাংলাদেশের খবরকে জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় কাঁচা সবজি আমদানি অনেক কমে গেছে।

রাজধানীর মতো একই চিত্র দেশের বন্দরগুলোয়ও। চলমান ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের কঠোর অবস্থান ও কাগজপত্র জটিলতায় রাস্তায় গাড়ি বের করছেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের শতাধিক ট্রাকচালক। এতে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে জমে ওঠা পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ট্রাক চালাতে না পারায় শ্রমিকরাও রয়েছেন হতাশায়। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশের দাবি, শুধু গাড়ির কাগজপত্র না থাকলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। কাউকেই অযথা হয়রানি করা হচ্ছে না।

আশুগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মো. ইদন খান মিন্টু জানান, মামলার ভয়ে চালকরা ট্রাক নিয়ে বের হচ্ছেন না। অনেকের গাড়ির ফিটনেসও নেই।

একই চিত্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামেরও। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটক ও জরিমানা আতঙ্কে সড়কে কমে গেছে গণপরিবহন। এতে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। সিএনজি অটোরিকশা, বাস, অটোটেম্পুসহ বেশিরভাগ যানবাহন বের করেননি পরিবহন মালিকরা। অন্যদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনের সড়কে লম্বা লাইন দেখা গেছে যানবাহনের। ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র নবায়নের জন্য ভিড় করছেন পরিবহন মালিকরা।

সোমবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নগরীর বিভিন্ন সড়কে মালিকরা পুরোদমে গাড়ি নামাননি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম অটোটেম্পু শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বোরহান উদ্দিন জানান, মালিকরা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে কাগজপত্রে যাদের কিছুটা সমস্যা রয়েছে তারা গাড়ি নামাচ্ছেন না ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে।

বাংলাদেশের খবরের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের কারণে টানা কয়েকদিনের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও স্বাভাবিক হয়নি পরিবহন ব্যবস্থা। আন্দোলন শেষে আবার ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার আসা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পণ্য রফতানিতে পড়েছেন বিপাকে। অলস সময় পার করছেন লোড-আনলোড শ্রমিকরা।

টানবাজারের সুতা ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে রঙ ও সুতার ব্যবসায় চরম মন্দা চলছে। যার মধ্যে বৃষ্টি ও ছাত্র আন্দোলন অন্যতম কারণ। পরিবহন সঙ্কটের কারণে বেচাকেনা নেমে এসেছে তলানিতে। আমার নিজের দুটি কন্টেইনার রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপ-টু-ডেটও রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় তারপরও পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। না দিলে যানবাহন চালানো যায় না। টানবাজারে একটি ট্রান্সপোর্টের ৮০টি গাড়ি রয়েছে যার মধ্যে ৭০টিরই কাগজপত্র নেই। পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয় বিধায় মালিকপক্ষ কাগজপত্র ঠিক করে না। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। শিক্ষার্থীদের চাপে পুলিশও কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। যে কারণে দিনের বেলায় পণ্যবাহী ট্রাক কভার্ড ভ্যানগুলো চলাচল করতে পারছে না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা অয়েল অ্যান্ড সুগার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শংকর কুমার সাহা জানান, তাদের মিলগুলো থেকে নৌকা ও সড়কপথে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসতে পারছেন না। যে কারণে বর্তমানে নিতাইগঞ্জে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। কমে গেছে ৭০ ভাগ বেচাকেনা।

তবে দেশের সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলোয় কন্টেইনার ও পণ্য ওঠা-নামা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পরিবহন বিভাগের পরিচালক গোলাম ছরওয়ার জানান, শিক্ষার্থী আন্দোলন বন্দরের কাজে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। কন্টেইনার জটও সৃষ্টি হয়নি।

একই তথ্য জানান বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিবহন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড এবং পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।

ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে কোনো রকম হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) তুসুম দেওয়ান। তিনি জানান, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযান সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে নগরজুড়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১