বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ August ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে বদলে গেল মন্ত্রিসভার পরিবেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংরক্ষিত ছবি


টানা কয়েকদিনের ছাত্রআন্দোলনে সরকারের মন্ত্রীরা একটু ‘ঘাবড়ে’ গিয়েছিলেন। যার রেশ পড়েছিল গতকাল সোমবারের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে। এতে ঢোকার সময় অনেক মন্ত্রীর মুখে হাসি দেখা যায়নি। সভায় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন একদম নিশ্চুপ। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সভার শেষ দিকে এসে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ কমেছে কথাটি বলার চেষ্টা করেন। তা ধোপে টেকেনি। আর আরেক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। আরো কয়েকজন মন্ত্রী শাজাহান খানকে উদ্দেশ করে বলার চেষ্টা করেছিলেন, একজনের জন্য পুরো মন্ত্রিসভার বদনাম হতে পারে না। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া কৃষি বিপণন আইন নিয়ে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় মন্ত্রীদের ‘চেহারায় খুশি’ ভাব ফোটে। মুহূর্তের মধ্যে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তারা। কয়েকদিনের আন্দোলনের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় একজন মন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা তো পুরো দেশ অচল করে দিয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন কীভাবে করতে হয় তা কি ছাত্ররা দেখাতে পেরেছে? প্রকৃত আন্দোলন মানে রোদে পুড়বে, ঘামে ভিজবে, বৃষ্টিতে ভিজবে, এমন তো কিছুই হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র আন্দোলনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কিছু নেই। এরা কতদূর যেতে পারে সেটাও আমার জানা ছিল। প্রধানমন্ত্রী সহকর্মী মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, এত দুর্বল চিত্তের লোক আমার সঙ্গে থাকার দরকার নেই, না থাকাই ভালো।

সভার শুরুতে আলোচনার সূত্রপাত করেন গণপূর্তমন্ত্রী। বলেন, শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই ওজন পরিমাপের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের অন্য কোনো সড়কে এ ব্যবস্থা নেই। এ মহাসড়ক থেকে ওজন পরিমাপের ব্যবস্থাটি তুলে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখান তিনি। জবাবে কোনো মন্ত্রী কথা না বললেও সড়ক পরিবহন সচিব বলেন, দেশের বিভিন্ন সড়কে আরো ৪০ স্পটে ওজন পরিমাপক বসানোর কাজ চলছে।

এরপরই সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ১৯৮৩ সালে প্রথম আইনটি যখন হয় তখন সাজা ছিল সাত বছর। কিন্তু পরে এটি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে তা তিন বছরে নেমে আসে। গতকাল বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় একজন মন্ত্রী দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য চালকের সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড রাখার প্রস্তাব করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা (আইন মন্ত্রণালয়) যখন একটা সুপারিশ করে পাঠিয়েছে তখন পাঁচ বছরই থাকুক। অনেক কিছু ঘেঁটেই তারা আইনটি করেছে। খসড়া আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলা নেই। আর এই বিধানটি সংযোজনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটালে এবং তা তদন্তে প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকবে।

পরে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এডিবির সঙ্গে আমরা একটা চুক্তি করেছি। তারা দক্ষ এক লাখ গাড়িচালক তৈরিতে সহায়তা দেবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ফেসবুক সমস্যা করেছে- একজন মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে ফেসবুক একটা সমস্যাই। ফেসবুক নিয়ে মুশকিলে আছি। হঠাৎ কোনো কিছু না বুঝেই যাচাই-বাছাই না করে ফেসবুকে দিয়ে দিচ্ছে। এটা একটা মুশকিল।

বৈঠকে সড়কের আইন বিষয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা কিছুই বলেননি। তবে সভার শেষের দিকে নৌমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাটের উন্নয়নে বর্তমানে আগের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে। বিশেষ করে ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন করার জন্য তিনি সড়ক পরিবহন মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ওই সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ছাত্ররা। এরপর তা সারা শহরে ছড়ায়। আর রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে নেমে আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও একই চিত্র দেখা দেয়। একপর্যায়ে যা চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসে। সরকারের বার বার আহ্বান সত্ত্বেও ছাত্ররা যখন রাস্তা থেকে নামছিলই না, তখন মতলবি মহলের সুযোগ নেওয়ার সতর্কতা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে রাস্তায় নামতে জনৈক নওমি নামে যুবককে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পরামর্শের অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। আবার স্কুল ড্রেস বিক্রি বৃদ্ধি ও ব্যাপক হারে লেমিনেডেট আইডি কার্ড তৈরির প্রবণতার খবর আসে। এতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে গিয়ে অছাত্ররাও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১