বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০২ August ২০১৮

বুড়ো বয়সের স্বাস্থ্য সমস্যা

সাধারণত ৪০-৪৫ বছর বয়স থেকে শরীরের ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা কমতে থাকে সংরক্ষিত ছবি


ডা. ফজলে রাব্বী খান

সিইও, হেলদি লিভিং ট্রাস্ট

জীবনের পালাবদলে জীবন ঘনিয়ে আসে। আমরা বলি একে বার্ধক্য বা বুড়ো বয়স। তবে সঠিক কত হলে আমরা বার্ধক্য বলব, সেরকম নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে সাধারণত ৬০ বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের আমরা প্রবীণ বা বার্ধক্যের বয়স হিসেবে গণ্য করি, মান্য করি। সাধারণত ৪০-৪৫ বছর বয়স থেকে শরীরের ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্থায়ী পরিবর্তন চলে আসে। এগুলোই বার্ধক্যের স্বাস্থ্য সমস্যা। আসুন, জেনে নিই এ বয়সের কয়েকটি রোগ ও তার প্রতিকার বিষয়ে।

হাড়ের ক্ষয় রোগ

বুড়ো বয়সের একটা বহুল প্রচলিত রোগ হাড় ক্ষয় রোগ বা অস্টিওপোরোসিস। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের তাড়াতাড়ি এই হাড়ের ক্ষয় রোগ শুরু হয়। এতে হাড়ের ঘনত্ব অনেক কমে যায়। মানুষের জন্মের পর ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। তারপর ন্যাচারালি ঘনত্ব কমতে থাকে। অর্থাৎ ক্ষয় হতে থাকে। তবে ঘনত্ব কমে যাওয়ার নির্দিষ্ট মাপ রয়েছে। এই মাপের নিচে নেমে গেলেই বিপদ। বিপদ একটিই, হাড় সহজেই ভেঙে যায়। এমনকি অল্প চাপে (হাঁটতে হাঁটতে পড়ে গেলে) তাতেই ভেঙে যায়। বিশেষ করে হিপ বল (কোমর-পায়ের ওপরের হাড়) গোড়ায় এবং মেরুদণ্ডের হাড়গুলো ভেঙে যায় সহজেই। তাতে রোগীরা বিছানায় মাসের পর মাস পড়ে থাকে। এ ধরনের ফ্রাকচার হওয়ার কারণে মৃত্যুও হয়ে থাকে। তা ছাড়া হাড় ক্ষয় রোগ বা  অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ খুব বেশি দেখা দেয় না।

মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর হাড়ের ক্ষয় খুব দ্রুত হয়। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ক্ষয় শুরু হয়। আর পুরুষদের হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় ৬৫ বছরের পর। একটা বয়সে গিয়ে সবারই হাড় ক্ষয় শুরু হয়। ৮০ বছর বয়সী লোকের দেখা যায়, তাদের ম্যাক্সিমাম হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে।

কাজেই সবচেয়ে ভালো হয় ৪০-৫০ বছর বয়স থেকেই  নিয়মিত হাড়ের ঘনত্বের পরীক্ষা করা। তাহলে তার প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যাবে হাড়ের ঘনত্ব কত রয়েছে। ঘনত্ব খুব কম, নাকি স্বাভাবিক রয়েছে। যাদের কম থাকবে, তাদের ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাড়ের ঘনত্ব -২.৫ বা তার বেশি যদি হয় তাহলে হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক কথায় হাই রিস্ক। আর হাড়ের ঘনত্ব যদি ১.৫ থাকে, তাহলে রিস্ক মিডিয়াম। কারো ০ থাকলে, তাদের হাড়ের অবস্থা ভালো রয়েছে। তবে যাদের এ রোগ শুরু হয়ে গেছে, তারা ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি নিয়মিত খাবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থা নেবেন। ওষুধের পাশাপাশি কিছু উপদেশ মেনে চলতে হবে। বয়স্ক কিংবা বৃদ্ধ লোকদের বলি, লাঠি নিয়ে হাঁটতে, উঁচু-নিচু জায়গা এড়িয়ে চলতে, পিচ্ছিল-ভাঙা এড়িয়ে চলুন। বাথরুম, করিডোরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন। বাথরুম সবসময় শুকনো রাখতে হবে। কারণ পিচ্ছিল হলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া সিঁড়িতে ওঠানামার সময় ধরে ধরে নামতে-উঠতে হবে। নিয়মিত দুধ খেতে হবে। আমাদের দেশের মহিলারা তো বাচ্চা বড় হয়ে গেলে আর দুধ খায় না। বাচ্চাদেরই দুধ খাওয়ায়। তাদের দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ছোট মাছ, ফল খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বয়স্ক লোক, অবসরে সারাদিন ঘরে বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। যারা হাঁটতে চলতে পারেন না, তারা ঘরেই হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন একটি লোক বিছানায় সারাদিন শুয়ে থাকেন। তিনি যদি শুয়ে না থেকে কিছুক্ষণ বসে থাকেন তাহলে ভালো। বয়স্কদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। চোখে যদি ঝাপসা দেখেন, তাহলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই চশমা ব্যবহার করতে হবে।

পারকিনসন্স

বুড়ো বয়সের আরেকটি স্বাস্থ্য সমস্যা পারকিনসন্স রোগ। তবে এটা এখনো অত কমন হয় ওঠেনি। এই রোগে রোগীর হাঁটাচলার গতি কমে যায় আর কোনো কাজ করতে গেলেই হাত-পা কাঁপতে থাকে। রোগীর বসা থেকে ওঠা, হাঁটা, ঘোরাসহ দৈনন্দিন যাবতীয় কাজই আস্তে আস্তে খুব স্লো হয়ে যায়। রোগটি বাড়তে থাকলে রোগী সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটাচলা শুরু করেন এবং সেক্ষেত্রে সামনের দিকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ভারসাম্য রক্ষার জন্য রোগী একটু দৌড়ানোর মতো করে হাঁটেন। এরপর কথাবার্তায় জড়তা, প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণহীনতা, যৌন দুর্বলতাসহ নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। পারকিনসন্স সাধারণত পঞ্চশ বছর বয়সের পরের রোগ। পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

লিভোডোপা নামের একটি ওষুধ সারা বিশ্বে এই রোগের সবচেয়ে কার্যকর ও প্রায় একমাত্র ওষুধ হিসেবে এখন পর্যন্ত বিবেচিত। প্রথমদিকে এই ওষুধটি সেবনে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু দুই থেকে চার বছরের মধ্যে এই ওষুধটির কার্যকারিতা কমতে থাকে এবং সেই সঙ্গে মারাত্মক সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। পরে রোগটির অ্যাডভান্সড স্টেজে ওষুধ না খেলে রোগী হাঁটাচলার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়েও ফেলতে পারেন। যেহেতু রোগটি নিরাময়যোগ্য নয়, শুধু রোগটির গতিবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো থাকার সময়টা বাড়িয়ে দেওয়াই উত্তম ব্যবস্থা।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ রোগটি সাধারণত কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করে না কিন্তু তা থেকে তৈরি জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই আশ্চর্য হবেন না যদি আপনার ডাক্তার বলেন, আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিন্তু আপনি নিজে বুঝতে না পারেন। এই অসুখ এতটাই স্বাভাবিক যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই ৬ মাস অন্তর রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা সারা জীবন চলে যদিও ওষুধের মাত্রা কম বেশি করা যেতে পারে। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে রক্তচাপ একবার কমালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। হয়তো অসুস্থ বোধ করবেন না কিন্তু হাইপারটেনশন খুব গুরুতর শারীরিক সমস্যা এবং তার চিকিৎসা দরকার। রক্তচাপ ওষুধের মাধ্যমে কমানো যায় এবং ওষুধ না খেলে আবার বেড়ে যেতে পারে।

মানসিক সমস্যা

নানা রকম মানসিক পরিবর্তন, যেমন- দুর্বল স্মৃতিশক্তি, অনমনীয় ও কঠোর নিয়মানুবর্তিতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, কোনো ধরনের কোনো পরিবর্তনে অনীহা বার্ধক্যের কয়েকটি সাধারণ বিষয়। যেহেতু এটা অনেকের জন্যই একধরনের অবসর। এ সময়ে আয় কমে যায়, প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার মানও খানিকটা কমে যায়, যার ফলে শুরু হয় এরকম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলো। পরিবারের মধ্যে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখাই একমাত্র চিকিৎসা।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১