আপডেট : ০১ August ২০১৮
মো. আবু তালহা তারিফ সেলফি আক্রান্তে ভাসছে পুরো পৃথিবী। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয়ভাবে তোলা হচ্ছে সেলফি। সেলফি হলো নিজকে অপরের নিকট প্রদর্শন করা। বর্তমানে সেলফির প্রতিযোগিতা চলছে। কে কত সেলফি তুলতে পারে, কার সেলফি কত সুন্দর। সেলফিতে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের মানুষও। কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরবে, সমস্যায় পড়লাম, প্রতিটি মুহূর্তের প্রতিটি স্থানের সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগসহ ইন্টারনেটে পোস্ট দিচ্ছে। বর্তমানে সেলফি এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। এখানেই শেষ নয়, ধর্মীয় কাজেও থেমে নেই সেলফি তোলা। আত্মীয় মারা গেছে, ফলে তার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি। তার কবর খননের কাজ চলছে বা তাকে এইমাত্র কবরস্থানে রাখা হলো, সেই কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আবারও সেলফি তুলে ইন্টারনেটে পোস্ট করা হচ্ছে অহরহ। আহ! এটা কি আনন্দ? লজ্জা না দুঃখ- কোনটি বলবেন প্রিয় পাঠক? আসলেই কি আজ আমরা বলব আমাদের বিবেক মানুষত্ব লোপ পেয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো হজ। হাজি সেই হজে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে সেলফি তোলায়। হাজি মনের আশা পূরণ এবং তার কৃতকর্মের অন্যায় মোচন করার জন্য হজ পালন করতে যায়। সেখানে হাজি কাঁদবে, চোখ দিয়ে ঝরাবে অঝোর ধারায় পানি, কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে মহান আল্লাহর নিকট, দোয়া করবে নিজের জন্য, অন্যের জন্য এবং নিজের মাতৃভূমির জন্য। সেই হাজি যদি ব্যস্ত থাকে মোবাইল নিয়ে আর তোলে সেলফি, তাহলে কি মনের মধ্যে প্রভুর ভয় কাজ করবে? হাজি ক্ষমা নিতে পারবে মহান আল্লাহর নিকট থেকে? এমনটি জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের সন্মানিত সিনিয়ার পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমানের কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত সেলফি তোলা ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। হাজি যখন ইহরাম বেঁধে হজ পালন করতে যায়, তখন তার জন্য অন্যায় কাজ ঝগড়া করা নিষেধ হয়ে যায়। যারা অন্যায় ও গুনাহের কাজ করবে না তারাই হজ করে নিষ্পাপ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসবে। সেখানে যাওয়া হয় মনে শান্তি পাওয়ার জন্য, আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাওয়ার জন্য। সেখানে যদি আল্লাহর নিকট ক্ষমা না চেয়ে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তেমন একটি কাজ করা হয়, তাহলে আল্লাহ সন্তুষ্ট না হয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন, এমনকি প্রভুর ভয় অন্তরে না আসার আশঙ্কা থেকে যায়। হাজি হজ করতে গিয়ে সেখানে তিনি একজন আল্লাহর মেহমান। হাজি সেখানে পাপ ক্ষমা করতে গেছেন। তিনি সেখানে পর্যটক নন যে ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্তে সেলফি তুলতে হবে। বাসা থেকে বের হলাম, ইহরাম বাঁধলাম, বিমানের জন্য অপেক্ষা করছি, মক্কা বা মদিনায় পৌঁছালাম, আমারা এখানে থাকব, কাবার সামনে দাঁড়িয়ে, জমজমের পানি পান করা অবস্থায়, আরাফার ময়দানে, শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের সময়, সাফা মারওয়া সাঈ, মদিনায় রসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকের সামনেসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাজি তুলছে সেলফি। ইসলামে সেলফি তোলা নিষেধ। এ ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসের আলোকে রসুল (সা.) বলেন, ‘হাশরের দিন অধিক আজাবে আক্রান্ত হবে সেই ব্যক্তি, যে কোনো প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। তাই হজে গিয়ে সেলফি তোলা হাজিদের জন্য অনুচিত। হজে গিয়ে সেলফি তুললে হজের কী সমস্যা হয়- এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. মুশতাক আহমদের কাছে। তিনি বলেন, হজে সেলফি তুললে হজের বরকত নষ্ট হয়ে যায়, হজ আদায় হবে, কিন্তু হজের মহানত্ব ও গুরুত্ব হাজির কাছে আসবে না। হাজি যেখানে আল্লাহর মেহমান সেখানে অন্যদিকে মনোযোগী না হয়ে সেলফি তুলে নিজের পরিচয় অন্যের নিকট প্রকাশ না করে সেখানের মূল্যবান সময়টি কাজে লাগাতে হবে। তিনি সেলফি তুলতে গিয়ে অন্যদের ইবাদতে সমস্যা সৃষ্টি করছেন। তিনি যেখানে সেলফি তুলতে যাচ্ছেন সেটা কোনো ঘুরে দেখার স্থান নয়, সেটা গুনাহ ক্ষমা করার স্থান, পবিত্র স্থান, আল্লাহকে পাওয়ার স্থান। অবশ্যই দামি জায়গায় সেলফি তুলে দামি সময় নষ্ট করা আমাদের অনুচিত। প্রিয় পাঠক, হজে গিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্য সেলফি তোলা আর ফেসবুকে দেওয়া ঠিক নয়। আর হাজির হজ অবস্থায় তোলা সেলফি লাইক দিয়ে তাকে উৎসাহিত করাও আমাদের উচিত নয়। কেননা অন্যায় কাজে সাহায্য করা কিংবা অন্যায় কাজে লাইক মানে পছন্দ করাও অন্যায়। সুরা মায়িদায় ২নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সাহায্য কর, তবে গুনাহ ও শত্রুতার কাজে কেউ কাউকে সাহায্য কর না।’ ইবাদত বন্দেগির প্রদর্শন করা হলো রিয়া। হজ আমাদের জন্য একটি শারীরিক আর আর্থিক ইবাদত, সেই ইবাদতে সেলফি তুলে অন্যকে দেখানো এক ধরনের রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রিয়া সব আমল জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তাই রসুল (সা.) মিকাতে পৌঁছা থেকে শুরু করে হজের কার্যক্রম অবস্থায় নিজেকে জাহির, আত্নগরিমা এবং লোক দেখানো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি হজের প্রতিটি রোকনে আল্লাহর তাসবিহ ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। রসুল (সা.) হজে গিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ আমি এমন একটি হজ পালন করতে চাই, যা কোনো দম্ভ প্রকাশ বা লোক দেখানো হবে না।’ আসুন আমরা যারা হজে যাচ্ছি তারা নিয়ত করি হজে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় সেলফি তুলব না। আর যারা আগামীতে যাব তারাও সেলফিমুক্ত হজ পালন করব-এই আশা করি। লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১