বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩১ July ২০১৮

সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল করিমের

‘মন্ত্রীর হাসির কথায় বুক ভাইঙ্গা আসছে’

বাসচাপায় নিহত রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল কারিম সজীব সংরক্ষিত ছবি


রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারানো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম (১৬) ও আবদুল করিমের (১৭) পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় বাকরুদ্ধ বাসচালক জাহাঙ্গীর ড্রাইভিং পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তাদের নেতা ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর আচরণে দুঃখ পাওয়ার কথাও জানান। ওদিকে পিতৃহীন করিমের মৃত্যুর পরপরই থেমে গেছে তার পরিবারের স্বপ্নও।

মহাখালী দক্ষিণপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মিমের বাবা জাহাঙ্গীর। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। সেখান থেকে ঝরে পড়ল এক সদস্য। নিহত ছোট মেয়ের কথা মনে করে অশ্রুভেজা কণ্ঠে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মেয়ে আমার কলেজে গেলে ওর মায়ের কাছে খবর নেই, সে পৌঁছাইছে কি না। বাড়ি আইলে

জিগাই, আসছে কি না। ওটা প্রতিদিনের রুটিন আমার। আমি ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে একতা পরিবহনের বাস চালাই ২৭ বছর ধইরা। কাইলকে (রোববার) ২টার সময় আমি বাস নিয়া যাব চাঁপাই। যাওয়ার আগে ওর মারে কইলাম মেয়ে আইলে আমারে জানাইও। এই কথা কইয়া আমি বাইর হইছি কেবল। হঠাৎ ফোন আইল ১টার দিকে। একজন কইল আপনার মেয়ে নাই, জলদি আসেন। গিয়া দেখি আমার মেয়ে আর নাই।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘মা আমার ভালো ছাত্রী ছিল। এসএসসিতে এ প্লাস পাইছে টিঅ্যান্ডটি মহিলা ডিগ্রি কলেজ থাইকা। এদিকে ভালো কলেজ নাই। অনেক দূর হয়, তাও ওর ইচ্ছা অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি কইরা দিলাম। একবার গাড়ি নিয়ে আসা যাওয়া করলে ১ হাজার ২৫০ টাকা পাই। অনেক কষ্টের জীবন আমার। মেয়েকে বুঝতে দেই নাই কষ্টে আছি। ওরে নিয়ে কত স্বপ্ন আমার ...।’ এরপর অভিমান করে বলেন, ‘এত দিন ধরে বাস চালাই, কই ফেডারেশনের কেউ তো আইল না? মেয়ে মরা বাপ আমি কি কষ্টে আছি কেউ তো খবর নিল না। আমাগো অভিভাবক মন্ত্রী শাজাহান খান, তিনি নাকি আমার মেয়েসহ দুজন মরার কথা বলতে বলতে হাসতে ছিলেন। এই কথা শুইনা আমার দুঃখে বুক ভাইঙ্গা আসছে ...। আমি আর বাস চালামু না। যেই বাস আমার মেয়েরে নিয়া গেল। সেই বাস আর ধরুম না আমি।’

ঢাকায় যারা বাস চালায় তাদের ঠিকমতো গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নেন এরা হেলপার। দুই দিন বাস চালাইয়া ড্রাইভার হইয়া গেছে। এরা মানুষ মারব না তো কী?’ মেয়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এটা তো দুর্ঘটনা না। এটা তো হত্যা, নাকি? আমি কেন সবাই বলব এটা হত্যা।’

মিমের মা রোকসানা বেগম বলেন, ‘কিছুই চাই না আমি। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। প্রতিদিন মেয়েকে গাড়িতে উঠাই দিয়া আমি আইসা পড়ি। মেয়ে আমার কাছে কিছুই চাইত না। আমার বড় মেয়ে রিয়ার লগে ওর কী ভালো ভাব। দুজনে আমার সংসারের সুখ। এক ছেলে ছোট। কষ্টের সংসারে ওরাই আমার মন ভইরা রাখত। এখন আমার মা নাই। আমাদের ছেড়ে চলে গেল ...।’

গত রোববারের ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয় একই কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিমও। তার বাবা নেই। সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে। খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছিল।

করিমের খালাতো ভাই মেহজাব উদ্দিন বলেন, ‘ছোট এই ছেলেটি লেখাপড়াতে ভালো ছিল। সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই কলেজে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন আর তার পূরণ হলো না।’ তিনি বলেন, ‘ও যখন ক্লাস ফাইভে, তখন ওর বাবা মারা যান। পরে আমরা আমাদের ঢাকার আশকোনা বাজারের পাশের বাড়িতে নিয়ে আসি ওকে। এখানে থেকেই সে লেখাপড়া করছিল। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৫ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়।’ করিম ভালো গান গাইত বলে জানায় তার সহপাঠীরা। তার ইউটিউবে একটি চ্যানেলও রয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১