বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩১ July ২০১৮

কেন্দ্রে অবস্থান করে বুলবুলের প্রতিবাদ

লিটন ও বুলবুলের ভোটের হিসাব ছবি : বাংলাদেশের খবর


নাজমুল আহসান রাজু ও বিজয় ঘোষ, রাজশাহী থেকে

সাদা চোখে শান্তিপূর্ণ হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অনিয়ম, কয়েকটি কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৩৮ কেন্দ্রের অধিকাংশ কেন্দ্রেই প্রতিপক্ষ ধানের শীষের এজেন্ট দেখা যায়নি। বিপরীতে প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এক-দেড়শ নেতাকর্মী ব্যাজ পরে শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিল।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সকাল ৮টায় উপশহরের স্যাটেলাইট হাই স্কুল কেন্দ্রে ভোটের পর জয়ের প্রত্যাশা জানিয়ে বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। তবে কেন্দ্রে গেলেও অনিয়ম, কারচুপি ও এজেন্টদের বের করার প্রতিবাদে ভোট দেননি রাসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

ভোটগ্রহণ শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের মেয়র পদে অবৈধ, নিয়মবহির্ভূত ভোট ডাকাতি,

কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিল এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবি করেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী বুলবুল। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১১ দফা বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়ম তুলে ধরেন।

তবে তিন সিটির নির্বাচনের মধ্যে রাজশাহীতেই সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লিটন। তিনি সন্ধ্যা ৬টায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২৮টি কেন্দ্র ঘুরে আমি কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

ভোটগ্রহণের সময় বেলা ১১টায় বিচ্ছিন্নভাবে রাজশাহী সিটি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে যুবদলের নেতা রোকনুজ্জামান রকি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন। ভোট নিয়ে কথা কাটাকাটির সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদেরকে ছুরিকাঘাত করে। অপরদিকে নগরীর মৌলভী বুধপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে দুপুর ১২টার দিকে সজল হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন। তিনি রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়ী করা হলেও মাঠে তাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

ভোট না দিয়ে অবস্থান বুলবুলের : উপশহর স্যাটেলাইট বিদ্যালয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুল ভোট দেবেন বলে আগেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে অনিয়ম ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর পেয়ে তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে যান। মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট ফুরিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বুলবুল যান বিনোদপুরের ইসলামীয়া কলেজ কেন্দ্রে। এ ব্যাপারে তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল সাফির কাছে জানতে চান, ভোট শুরু হওয়ার মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় কীভাবে ব্যালট ফুরিয়ে গেল? এর প্রতিবাদে তিনি কেন্দ্রের মাঠেই অবস্থান নেন। বুলবুল ঘোষণা দেন ব্যালটের হিসাব না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। বেলা ৪টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নেন বুলবুল। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী তোফাজ্জল হোসেন তপু উপস্থিত ছিলেন। তার অবস্থান চলাকালে কয়েকজন ভোটার ভোট দিতে এলে তাদের জানানো হয় মেয়র পদে ভোট দেওয়া যাবে না। কাউন্সিলর পদে দুটি ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। আবদুল্লাহ মাহমুদ নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী এবং বিনোদপুরের বাসিন্দা আবদুল জাব্বার গণমাধ্যমকে জানান, ভোটকেন্দ্রে গেলে মেয়র ব্যতীত অন্য দুটি পদে ভোট দিতে বলা হয় তাদের।

ধানের শীষের প্রার্থী বুলবুল বলেন, মেয়র নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সম্পৃক্ত। সকাল থেকে ৩১টি কেন্দ্রে গেছি। নীলনকশার বাস্তবায়ন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন, সচিব, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের যারা ঢাকা থেকে এসেছে তারা রাতে ব্যালট কেটে রেখেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, ‘আমার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যে বিপন্ন গণতন্ত্র। আমি আমার ভোট পর্যন্ত দেইনি। যেখানে ভোটের মূল্য নেই, যেখানে রাষ্ট্রের কর্মচারীরা ভোট চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেখানে আমার ভোটের কোনো দাম নেই।’

রাসিকের সাবেক মেয়র মিনু বলেন, ষড়যন্ত্র করে কারচুপির মাধ্যমে বুলবুলের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে অযোগ্য ও অথর্ব এই নির্বাচন কমিশন। অনিয়ম, দুর্নীতি, কারচুপি দেখে ঘৃণায় সে (বুলবুল) এখানে অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নির্মম কারচুপি দেখতে পেল রাজশাহীবাসী।

বিএনপির এজেন্টদের বাধা : দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসেপ স্কুলে বিএনপির পোলিং এজেন্ট ইমন শেখকে আওয়ামী লীগের এজেন্টরা বের করে দেয়। এ ছাড়াও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৫ জন পোলিং এজেন্টের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিলসিমলা এলাকায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ও কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভী বুধপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট মিলুকে বের করে দেওয়া হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষ্ণকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীবাচার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সিটি কলেজের ভোটকক্ষে ধানের শীষের এজেন্ট দেখা যায়নি। কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ ভোটকক্ষে একজন এজেন্টকে দেখা গেছে।

এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে শিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্রনাথ সরকার জানান, ‘ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। এর আগে যেসব এজেন্ট এসেছে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ নম্বর কক্ষে ছিলেন ধানের শীষের এজেন্ট চৌধুরী শারমিন। তার অভিযোগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেছে তারা। এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে থাকা বিএনপির আরেক এজেন্ট বের হয়ে গেছেন।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় তরুণ সংঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের (পুরুষ ও নারী) ১০টি কক্ষের মধ্যে ৯টি কক্ষ থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষের একজন এজেন্টকে পাওয়া যায়। বেলা ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রে আসেন বুলবুল। পরে সোয়া ১১টার দিকে এজেন্টরা ফিরে আসেন। বুলবুল তাদের বসিয়ে দেন।

ইভিএম কেন্দ্রে লিটন এগিয়ে : রাসিকের ১০০ ও ১০১ নম্বর বি বি হিন্দু একাডেমির দুটি ইভিএম কেন্দ্রে বেশি ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী লিটন। দুটি কেন্দ্রে তিনি ৯৩৫ ভোটে এগিয়ে আছেন ধানের শীষের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের চেয়ে। ভোটগ্রহণের আধা ঘণ্টার মধ্যে এই ফলাফল ঘোষণা করেন বি বি হিন্দু একাডেমি-পুরাতন ভবন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আসলাম উদ্দীন এবং পশ্চিম ভবন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

এমন সুন্দর ভোট দেখেননি বাদশা : নগরীর জুলফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিটি নির্বাচনের ভোট দেওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘রাজশাহীতে এত সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ আগে কখনো দেখিনি।’ বেলা ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১