বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ July ২০১৮

চিকিৎসার দ্রুত মরে ক্যানসার রোগী!

ক্যানসার চিকিৎসার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে রেডিয়েশন থেরাপি ছবি : ইন্টারনেট


ক্যানসার হচ্ছে ‘অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন’-এর ফল। কোনো কারণে কোষের ডিএনএর বিভাজন নিয়ন্ত্রণ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে তখন সেই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বারবার বিভাজিত হতে থাকে। এই ক্রমাগত বিভাজনের ফলে প্রাথমিকভাবে যা হয় সেটি হলো ‘টিউমার’। তাই টিউমারকে ক্যানসারের প্রথম ধাপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রাচীন এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অনেকটাই অন্ধকারে পড়ে ছিলেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। তবে ক্যানসার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যজট খুলতে চিকিৎসাবিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যেতে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে। এখনো ক্যানসারের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। এখন পর্যন্ত ক্যানসারের সবচেয়ে পুরাতন চিকিৎসা হিসেবে চলে আসছে সার্জারি। অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহ থেকে ক্যানসার কোষ ও সংলগ্ন কিছু অংশ কেটে বাদ দেওয়ার পদ্ধতি। এরপর ক্যানসার চিকিৎসার পরবর্তী চিকিৎসা কেমোথেরাপি, সংক্ষেপে কেমো নামে খাবার ওষুধ ও ইনজেকশন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যানসার কোষ ধ্বংসকারী রাসায়নিক সরাসরি ক্যানসার আক্রান্ত অংশে প্রয়োগ করা হয় কেমোথেরাপিতে।

এই রোগের আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হরমোনাল থেরাপি প্রস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসায় হরমোনাল থেরাপি ব্যবহূত হয়। কারণ এই দুই ধরনের ক্যানসারেই সংশ্লিষ্ট হরমোন ক্যানসার কোষের বিভাজন ও ক্যানসার বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী থাকে।

ক্যানসার চিকিৎসার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে রেডিয়েশন থেরাপি। সংক্ষেপে এই পদ্ধতিকে বলা হয় রেডিওথেরাপি। এক্ষেত্রে উচ্চশক্তিসম্পন্ন বিকিরণ ক্যানসার আক্রান্ত অংশে প্রয়োগ করা হয়। বিকিরণের শক্তি ক্যানসার কোষগুলোকে মেরে ফেলে, কখনো ক্যানসার কোষের ডিএনএ নষ্ট করে এর বৃদ্ধি রোধ করে।

উপরিউক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলো বর্তমানে ক্যানসার চিকিৎসায় প্রচলিত পদ্ধতি। আধুনিক অণুজীব বিজ্ঞান, অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, ন্যানোটেকনোলজি ও জেনেটিক্সের অগ্রগতির ফলে নতুন ধরনের জৈবনিক চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আশার আলো দেখছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।

তবে এর মধ্যেই নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসার এই প্রচলিত পদ্ধতিই রোগীর কাল হয়ে দাঁড়ায়। রোগী চিকিৎসাহীন অবস্থায় যত দিন বাঁচত তার আগেই মারা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের ইয়েল ক্যানসার সেন্টারে এক গবেষণায় দেখে গেছে, ক্যানসারের চিকিৎসা হিসেবে যারা ওষুধ, কেমো বা রেডিওথেরাপি নেন সে চিকিৎসাগুলো শুরুর পরপরই শরীর আর গ্রহণ করে না। কেমো বা রেডিওথেরাপি উল্টো রোগীকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ইয়েল ক্যানসার সেন্টারের গবেষক ও অধ্যাপক জেমস ওইয়ি বলেন, আগের সব গবেষণায় রোগীরা কেন ওষুধের বদলে কোমো, হরমোনাল থেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিতে আগ্রহী সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। আগের এক গবেষণায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স এবং ফিজিওলজির এক প্রাক্তন অধ্যাপক দাবি করেন, ক্যানসার নয়, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর কারণ আসলে কেমোথেরাপি।  তখন দেখা যায়, কেমোথেরাপি নেওয়া ক্যানসার রোগীদের একটা বড় অংশই তিন বছরের মধ্যে মারা যান। বাকিরা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মারা যান।

শুধু তাই নয়, ওই গবেষণার পর আরেকটি গবেষণায় রোগীদের মতামত নিতে গিয়ে দেখা যায়, তারা বিশ্বাস করেন ওষুধের বদলে অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আসলে ক্ষতিকর। তাই ওষুধের বিষয়েই নিজেদের আস্থার কথা জানান তারা। ইয়েল মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা এই বিষয়টি ধরেই তাদের গবেষণা শুরু করেন।

অধ্যাপক জেমস জানান, নতুন গবেষণায় রোগীদের সেই বিশ্বাসের পক্ষে বিস্তর কারণ খুঁজে পেয়েছেন তারা। গবেষকরা ক্যানসার আক্রান্ত ও চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ১২৯০ রোগীকে নমুনা হিসেবে নেন। তাদের কারো স্তন, ফুসফুস, গলায় ক্যানসার আছে। তাদের মধ্যে কেমো বা রেডিওথেরাপি নিয়েছেন এমন ২৫৮ রোগীর অবস্থার সঙ্গে বাকি ১০৩২ জনের অবস্থার তুলনা করেন।

এই গবেষণাটি করা হয় প্রায় ১০ বছর ধরে। সেই ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি। এই সময়ের মধ্যে তারা দেখেন কমো বা রেডিও থেরাপি নিয়েছেন এমন ২৫৮ রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। একই সঙ্গে তারা কেমোসহ অন্যান্য ধরনের চিকিৎসা নিতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিপরীতে ১০৩২ জনের ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে কোনো আতঙ্ক নেই এবং তাদের মৃত্যু ঝুঁকিও তুলনামূলক কম।

এই পর্যক্ষেণের পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন, ক্যানসারের চিকিৎসায় যারা ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের তুলনায় অপারেশন বা বিভিন্ন প্রকার থেরাপি যারা নেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১