বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৮ July ২০১৮

চাঁদপুরে পাউবোর ১৯০ কোটি টাকার প্রকল্পে কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ছবি: বাংলাদেশের খবর


চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজের মান নিয়ে হরিনা এলাকার মানুষ চরমভাবে ক্ষুব্ধ। পাউবো’র চীফ মনিটরিং কাজী তোফায়েল হোসেন কর্তৃক পরিদর্শনের পর বালিভর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্য সব কাজও কাজী তোফায়েল হোসেনের পরিদর্শনের মাধ্যমে করার দাবি তাদের।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর হরিনা ও হাইমচরের কাটাখালী এলাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে গত বছরের ১ আগস্ট ১৯০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্পের নাম ‘মেঘনার ভাঙন থেকে চাঁদপুর জেলার হরিনা ফেরিঘাট ও চরভৈরবী এলাকার কাটাখালী বাজার রক্ষা প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় হরিনা ফেরিঘাট এলাকার ৯৩০ মিটার এবং কাটাখালী এলাকার ৮৬০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ও আরসিসি ব্লক ফেলা হবে। এই কাজে প্রায় দেড় লাখ ব্যাগ জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ও প্রায় ৩৫ হাজার ব্লক  ফেলা হবে।

সূত্র মতে, প্রকল্প অনুমোদনের ২-৩ মাসের মধ্যেই দরপত্র কার্যক্রম শুরুর কথা। গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিকাদার নির্বাচন করার কথা ছিল। অথচ চাঁদপুর থেকে দরপত্র তৈরী করে ঢাকা পাঠানোর পর বিভিন্ন তদ্বিরের কারণে অনেক দেরীতে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ১৯ জুন তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দুইটিতে একক (হাসান বাদ্রার্স ও তাজুল ইসলাম) এবং একটিতে আরো তিনজন ঠিকাদারের (খন্দকার শাহীন, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিঃ লিঃ, এস এস ইঞ্জিঃ) সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয় পাউবো। 

সম্প্রতি চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা ফেরিঘাট এলাকায়  জিইও টেক্সটাইল ব্যাগে বালি ভর্তি করার কাজ শুরু হয়েছে। গত সোমবার (১৬জুন) পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার জিইও টেক্সটাইল ব্যাগে বালি ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার ও পাউবোর কার্য সহকারীরা জানিয়েছে। সোমবার সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ১০-১২জন শ্রমিক নদীতে ভিড়ানো ট্রলার থেকে ছোট টুকরিতে (ওড়া) করে বালি এনে নদীতীরে এনে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগে ফেলছে। একেকটি ব্যাগে ৬ টুকরি বালি ফেলা হচ্ছে।

Chandpur-18-07-18 -3শ্রমিকরা জানিয়েছেন, প্রতিটি টুকরিতে আনুমানিক ৩০ কেজি করে বালি থাকে। একই কথা জানালেন সেখানে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক অ্যাসিস্টেন্ট আলমগীর। অর্থাৎ পাউবো কর্মচারী ও কর্মরত শ্রমিকদের তথ্য অনুযায়ী, একেকটি ব্যাগে ১৮০ কেজি বালি ভরা হচ্ছে। অথচ ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট আলমগীর’ই আবার বলছেন, বালি কম হবে না। একটু কম-বেশি হতে পারে। তার দেয়া টুকরির তথ্যের যোগফল বের করতে বললে তার সাফ জবাব, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার আসল হিসাব দিতে পারবেন। আমি বলতে পারবো না। এছাড়া ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন তিনি।

আবুল হোসেন, কালাম মিয়া, জয়নাল আবেদীনসহ স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, একেকটি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগে ২৫০ কেজি করে বালি ভর্তি করার নিয়ম থাকলেও ব্যাগে বালি দেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ কেজি করে। তাও আস্তর বালির পরিবর্তে ধুলবালি, ধুলবালি মিশ্রিত আস্তর বালি এবং নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক নিম্নমানের বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পানির সঙ্গে এসব বালি ব্যাগ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসীর দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৎ অফিসার হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া চীফ মনিটরিং কাজী তোফায়েল হোসেনকে দিয়ে এসব বালির গুণাগুণ ও পরিমাণ নিশ্চিত হওয়ার পর যেন বস্তাগুলো নদীতে ফেলা হয়। এছাড়া ব্লক তৈরী, ব্লক ও ব্যাগ গণনাসহ পরবর্তী কার্যক্রমে যেন কাজী তোফায়েল হোসেনকে দিয়ে সরাসরি মনিটরিং করানো হয়।

হানারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবু ছৈয়াল বলেন, সরকারের এত বিশাল বরাদ্দের টাকা লুটপাট করতে দেয়া যাবে না। আমরা চাই, সঠিকভাবে কাজ হোক। যাতে জনগণ সরকারের এ বিশাল টাকার কাজের সুফল ও সুবিধা ভোগ করতে পারে। আমাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৎ অফিসার তোফায়েল স্যারকে এসে যাচাই-বাছাই করার পর জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ নদীতীরে ফেলা হোক। কারণ, এসব বস্তায় পরিমাণের অনেক কম এবং নি¤œমানের বালি দেয়া হচ্ছে। আমরা চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকেও বিষয়টি জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, অনুমান করে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগে বালি ভরা হচ্ছে। কিছু কম-বেশি হতে পারে। তবে অনেক কম হওয়ার সুযোগ নেই। বালি কম দিলে মনিটরিং টিমের পরীক্ষায় তা ধরা পড়লে সব বস্তাই বাতিল ঘোষণা করা হবে। বালি কম দেওয়া এবং ওয়ার্ক অ্যাসিস্টেন্টের দেওয়া তথ্যে ওজনে গড়মিলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন স্কেল নিয়ে গিয়ে কিছু বস্তা মেপে দেখতে।

পাউবো এখন পর্যন্ত কোনো বস্তা পরিমাপ করেছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন এখনো কোনো বস্তা ওজন করা হয়নি। তাছাড়া পয়েন্ট নাইন এফএম আস্তর বালির পরিবর্তে নিম্নমানের বালি ব্যবহারের বিষয়টিও অস্বীকার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

 তিনি জানান, খুব সহসা চীফ মনিটরিং কাজী তোফায়েল হোসেন হরিনা ফেরিঘাট এলাকায় তার টিমসহ পরিদর্শনে আসবেন। তিনি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিলেই কেবল বালিভর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হবে। তার আগে নয়। 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১