আপডেট : ১৮ July ২০১৮
সারা বিশ্বের মানুষ প্রতিঘণ্টায় গড়ে এক বিলিয়ন টন তেল ব্যবহার করছে। দিন দিন এই পরিমাণ আরো বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো পৃথিবীর সব জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে। তাই জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সচেষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। তারা উদ্ভাবন করেছেন সৌরশক্তিচালিত গাড়ি, নৌযান ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য সৌরবিদ্যুৎ।
কিন্তু এসব আরো অনেক আগের কথা। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আকাশে বিমানও উড়িয়েছে সফলভাবে। সৌরশক্তি দিয়ে বিমান চালাতে ২০০৩ সালে ৯০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প শুরু হয়। বায়ার মেটিরিয়াল-সায়েন্স কোম্পানি শুরু করে ১০ বছরের সেই প্রকল্পটি। প্রকল্পের অধীনে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো সৌরশক্তিচালিত একটি বিমান আকাশে ডানা মেলে। তখন ভূমি থেকে এক মিটার উঁচু দিয়ে প্রায় ৩৫০ মিটার এলাকা পাড়ি দেয় সেটি। এরপর ২০১১ সালে সোলার ইমপালস নামের সৌরশক্তিচালিত একটি বিমান সুইজারল্যান্ড থেকে ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের ওপর দিয়ে ব্রাসেলসে যায়। সে সময় বিমানটি ভূমি থেকে ৩৬০০ মিটার ওপর দিয়ে চলে। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এরপর ২০১৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিমান ঘাঁটি থেকে আবারো ওড়ানো হয় সোলার ইমপালস। সেটি প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর আরিজোনা রাজ্যের রাজধানী ফিনিক্সের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর ২০১৫ সালের মার্চে সুইজারল্যান্ডে তৈরি হয় সোলার ইমপালসের দ্বিতীয় সংস্করণ। সেটি আমিরাতের আবুধাবি থেকে উড্ডয়ন করে বিভিন্ন দেশে যাত্রাবিরতি দিয়ে জ্বালানি ছাড়াই প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়।
কার্বন ফাইবারে তৈরি বিমানটির ওজন মাত্র ২৩০০ কিলোগ্রাম, যা একটি চার চাকার গাড়ির সমান। বিমানের পিঠের ওপর রয়েছে ৭২ মিটার টানা লম্বা ডানা। তার ওপর বসানো ১৭ হাজার ২৪৮টি সোলার সেল বা সৌরকোষ। যারা শুষে নিতে পারে সূর্যের শক্তি। আর সেই শক্তিকে রসদ করেই পাড়ি দেবে বিমান। দিনের বেলায় যে সৌরশক্তি জমা হবে, তাতে রাতেও উড়বে সে। বিমানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার।
সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কীভাবে বিমান পরিচালনা করা যায় তা পরখ করে দেখতেই বিমানটির এই বিশ্ব পরিভ্রমণ শেষে এর পাইলট বার্ট্রান্ড পিকার্ড আহ্বান জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ এখন আপনার হাতে। ভবিষ্যৎ এখন বর্তমানে। আসুন আমরা এই প্রচেষ্টাকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। হয়তো বার্ট্রান্ড পিকার্ডের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই এবার বাণিজ্যিকভাবে সোলার বিমান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিমান নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাস। আর তাতে অর্থ ও প্রাযুক্তিক অনেক সহায়তা দেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সোলার বিমানটি তৈরির কাজ শুরু করবে এয়ারবাস। তবে বিমানটির নাম ঠিক কী হবে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আগে তারা জেফাইয়ার নামে যে সৌরশক্তি চালিত রিমোট কন্ট্রোলড বিমান তৈরি করেছে তারই বৃহৎ সংস্করণ হতে যাচ্ছে নতুন এই বিমান। আর সেটি যাত্রী বহনের কাজেও ব্যবহার করা হবে। ২০১৮ সালের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে বলে বলা হয়েছে এয়ারবাসের পক্ষ থেকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকাশে উড়তে থাকা বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিমানের জট এড়াতে বায়ুমণ্ডলের ওপর দিয়ে চলবে এটি, যা খারাপ আবহাওয়া থেকেও বাঁচাবে একে।
জানা গেছে, সব মিলিয়ে মাত্র ৭৫ কেজি ওজনের বিমানটি ৭০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারবে। বিমানটি টানা ১২০ দিন বা চার মাস আকাশে ভেসে থাকতে পারবে।
জানা গেছে, সোলার বিমান তৈরি করতে অ্যাকুলিয়া নামের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এয়ারবাসের সঙ্গে সেই প্রকল্পের আওতায়ই যৌথভাবে কাজ করবে ফেসবুক। ফেসবুকের চিন্তা নতুন এই বিমানে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রাখা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১