আপডেট : ১০ July ২০১৮
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়বেন মেয়রসহ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আজ সকাল ১০টা থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিন সিটিতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে হিসেবে ইসি নিবন্ধিত বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রতীক চূড়ান্তই ছিল। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই তিন সিটিতে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। তারা দলীয় প্রতীকে ভোটও চান। এ নিয়ে কোনো কোনো সিটিতে এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর ঘটনাও ঘটেছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তারা প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি পাবেন। পাশাপাশি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচারে কোমর বেঁধে মাঠে নামবেন তারা। নিজ নিজ প্রতীক সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানোর পাশাপাশি প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইতে যাবেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও সিপিবি-বাসদের মতো দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা ইতোমধ্যে নিজ নিজ প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট ছাপিয়ে রেখেছেন বলেও জানিয়েছে দলীয় সূত্র। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট ছাপতে দেবেন আজ। শুরু হবে নির্বাচনী উৎসব। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। গতকাল সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত তিন সিটিতে দুই মেয়র প্রার্থীসহ ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আমাদের রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির ওয়াশিউর রহমান দোলন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ জন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ফলে বর্তমানে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১৬৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের ১০টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫২ জন। নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, মনোনয়ন প্রত্যাহারকারীরা হলেন- সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খসরু আহম্মেদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মীর হানিফ মোহাম্মদ ও শাহীন শেখ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সোহেল রানা, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জাবেদুর রহমান ও জাহিদ আনোয়ার শেখ, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের রমজান আলী এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবু হানিফ টনি। বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে গতকাল ১ মেয়র, ১৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরসহ মোট ২০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে বর্তমানে মোট ১৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খেলাফত মজলিসের মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক একেএম মাহবুব আলম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সমর্থন জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে মাহবুব এ ঘোষণা দেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান গতকাল রাতে জানান, বর্তমানে ৬ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ইকবাল হোসেন তাপস, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির আবুল কালাম আজাদ (একে আজাদ), বাসদের ডা. মণীষা চক্রবর্তী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব। এ ছাড়া ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলরের বিপরীতে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি আসনের জন্য ৩৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন গঠিত। বিসিসির চতুর্থবারের এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংরক্ষিত এক মহিলা কাউন্সিলরসহ ৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান গতকাল রাতে জানান, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন লাভলু, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারেফ হোসেন বাদশা, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটু এবং সংরক্ষিত-৪ (১০, ১১, ১২)-এর আয়শা তৌহিদা লুনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর বিএনপি সমর্থিত এবং বর্তমান কাউন্সিলর। বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। মোশারেফ হোসেন বাদশা ও গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বেসরকারিভাবে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ২০৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৯ জন মেয়র, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৫ জন কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৬১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। মেয়র পদে একজনের মনোনয়ন বাতিল হয়। মেয়র পদে বর্তমানে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপি মনোনীত মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগরের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন, এহসানুল হক তাহের ও মোক্তাদির হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীসহ মোট ৯ জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৬৩ জন। গতকাল সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে দুজন করে মোট ৪ কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার আগামী ৩০ জুলাই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১