বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৪ July ২০১৮

কেবল ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি নয় জাতীয় অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে গাছ

দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন সংরক্ষিত ছবি


Portrait-Nitai-300x300

নিতাই চন্দ্র রায়

যে হারে বন উজাড় হচ্ছে, সে হারে কিন্তু নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে না। বাংলাদেশে গড়ে ২৪ ঘণ্টায় কাটা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং এর বিপরীতে লাগানো হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার গাছের চারা। একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। জাপানে শতকরা ৬৩ ভাগ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৫, মালয়েশিয়ায় ৬৩, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ফিলিপাইনে ৩৬, থাইল্যান্ডে ৪৮, নেপালে ২৩, শ্রীলঙ্কাতে ৪৭ ও মিয়ানমারে ৬৭ ভাগ এবং বাংলাদেশে ১০ থেকে ১২ ভাগ বা মোট ২৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর বনভূমি রয়েছে।  

বৃক্ষ রোপণকে ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না। কারণ আজ একটি সেগুন, মেহগনি, কাঁঠাল, কড়ই গাছ রোপণ করলে ২০ বছর পর এর কাঠের দাম হবে কমপক্ষে ২-৩ লাখ টাকা। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কেটে তৈরি করছে কাঠ। সেই কাঠ বিক্রি করে প্রচুর অর্থও উপার্জন করছে। কিন্তু এই গাছ শুধু মানুষের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, জাতীয় অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে। চারা লাগানো থেকে শুরু করে পরিচর্যা, কাঠ কাটা ও আসবাব তৈরি- এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন হচ্ছে।  

পরিবার পর্যায়ে গাছের অবদানের প্রকৃত চিত্র এতদিন গণনায় দেখানো হতো না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জিডিপিতে গাছের অবদান সংক্রান্ত সমীক্ষা অনুযায়ী পরিবার পর্যায়ে অর্থাৎ বাড়ির আশপাশে যে গাছপালা লাগানো হয়, তা থেকে অর্থনীতিতে গড়ে ১২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। দেশের ২০ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮টি পরিবার শুধু গাছ লাগিয়ে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। প্রতিটি পরিবার কমপক্ষে ৫ শতক জায়গায় বিভিন্ন জাতের গাছ লাগায়। মূলত গাছ থেকে কাঠ, লাকড়ি ও রাবার তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে এসব পরিবার। এই উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত যে মূল্য সংযোজন হয়, তাই জিডিপিতে অবদান রাখে। বিবিএসের সমীক্ষায় আরো বলা হয়, পরিবার পর্যায়ে রোপণকৃত গাছপালার মধ্যে শুধু বসতবাড়ির আশপাশেই ৫৪ শতাংশ গাছ লাগানো হয়। বিভিন্ন জাতের গাছ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট কাঠ উৎপাদন হয়। এ কাঠের আর্থিক মূল্য প্রায় ৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রতিবছর ১০ লাখ ৫৮ হাজার বিভিন্ন জাতের বাঁশ উৎপন্ন হয়। এ বিপুল সংখ্যক বাঁশের আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বছরে লাকড়ি হয় ৫১ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ টন, যার আনুমানিক মূল্য ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তা ছাড়া রাবার উৎপন্ন হয় ১ হাজার ৫৫২ টন। এই রাবারের মূল্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।  

ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানা যায়, একটি গাছ তার ৫০ বছরের জীবনে পৃথিবীর প্রাণীকুলকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বায়ুদূষণ রোধ করে ১০ লাখ টাকার। বাতাসে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে বায়ুমণ্ডলকে ঠাণ্ডা রাখে পাঁচ লাখ টাকার, বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে পাঁচ লাখ টাকার, মাটির ক্ষয় রোধ করে উর্বরতা বাড়ায় পাঁচ লাখ টাকার, পাখি-প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয় দেয় পাঁচ লাখ টাকার এবং ফল ও কাঠ দেয় পাঁচ লাখ টাকার। একটি ২৫০ মিটার চওড়া বন বাতাসে জমে থাকা সালফার ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৩৫ শতাংশ শুষে নিতে সক্ষম।  

একটি গাড়ি ২৫ হাজার কিলোমিটার পথ চলে যে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে তার পুরুটাই অল্প সময়ে শুষে নিতে পারে একটি বড় গাছ। অবাক করা বিষয় হলো, ক্যানসার নিরাময়ের জাদুকরী গুণ আছে পৃথিবীর প্রায় ১ হাজার ৪০০ বৃক্ষ প্রজাতির। বনের নির্মল বাতাসের সংস্পর্শে অনেক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে পৃথিবীতে ৬২ বিলিয়ন ডলারের ভেষজ বৃক্ষের বাজার রয়েছে। এই বিশাল বাজারের অধিকাংশই ভারত ও চীনের দখলে। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ভেষজসামগ্রী আমদানি করে। অথচ এর প্রায় ৭০ শতাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। 

লেখক : কৃষিবিদ ও কলাম লেখক 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১