বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ July ২০১৮

মাছ কেটেই সংসার চলে যাদের

মাছ যত ছোট কাটানোর দাম তত বেশি ছবি : সংগৃহীত


বাজারে গেছেন মাছ কিনতে, চোখের সামনে চকচকে ছোট মাছগুলো দেখে চনমনিয়ে উঠল মনটা। মনে সাধ জাগল- ইশ, যদি ঝাল মরিচে চচ্চড়ি খাওয়া যেত! কিন্তু সে ইচ্ছেকে বুকে চাপা দিতে হয়। ছোট মাছ বাসায় নিলে রক্ষে আছে! বউ তো বটেই, কাজের বুয়াটাও দেখলে মুখ বাঁকাবে। অগত্যা ফিরে আসতে হয় বাসায়। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনার এই সাধ পূরণের কথা মাথায় রেখেই ইদানীং দা-বঁটি নিয়ে আমেনা বেগম আর ময়নার মতো অনেক নারীই মাছ বাজারে এসে বসেছেন। সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক পেশার। আগে বাজার থেকে বড় মাছ কেটে আনা গেলেও ছোট মাছ কাটার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই মাছ কিনে অনেকটা বিপাকেই পড়তে হতো। কিন্তু এখন ছোট মাছগুলোও অনায়াসে কাটিয়ে আনা যায় বাজার থেকে।

মাছবাজারগুলোতে এখন সকাল সকালই বিভিন্ন বয়সী নারী, এমনকি ছোট ছোট মেয়েরাও বসে মাছ কাটতে। মাছ বিক্রেতার সঙ্গেই বসেন এই নারীরা। মাছ কিনে একেবারে কাটিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন সেখান থেকেই। মাছ কাটায় পটীয়সী এই নারীরা আপনাকে দাঁড় করিয়ে মুহূর্তেই কেটে দেবে সব মাছ। যদিও এ জন্য আপনাকে খোয়াতে হবে কিছু টাকা। এ ক্ষেত্রে মাছ যত ছোট কাটানোর দাম তত বেশি।

যদিও শখের মাছ খেতে পারার আনন্দের কাছে এ অর্থ ব্যয় একেবারেই নগণ্য। মেরাদিয়ার এক মাছ বাজার ঘুরে কথা হয় আজিরনের সঙ্গে, তিনি তার দশ বছরের মেয়ে আয়েশাকে নিয়ে প্রায় ছয় মাস হলো মেরাদিয়ার এ বাজারে মাছ কাটেন। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে মাছ কাটা। ভিড়টা সকালের দিকে বেশি থাকে বলে জানান তিনি।

কী মাছ কাটেন বেশি- জানতে চাইলে তিনি জানান, ছোট-বড় সব ধরনের মাছই কাটতে হয়। সকালের বাজারে ছোট মাছই কাটতে হয় বেশি। গরমে তাড়াতাড়ি নরম হয়ে যায়, তাই দ্রুত হাতে কাটতে হয় এগুলো। বড় মাছ কাটতে তেমন সময় লাগে না। বোয়াল, রুই, পাঙাশ, কাতল, আইড় এ ধরনের মাছ কাটতে কষ্ট কম, পাঁচ থেকে সাত মিনিটেই কেটে ফেলা যায় বলে জানান তিনি। সময় বেশি লাগে ছোট মাছ কাটতে। এক কেজি পুঁটি বা টেংরা মাছ কাটতে লেগে যায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। হাত পাকা হলে সময় আরো কিছুটা বাঁচে। মেয়ে কেমন মাছ কাটে- জিজ্ঞাসা করতেই কিশোরী আয়েশার মুখে হাসি ফোটে। মা জানালেন, প্রথমে কাটতে দেরি হলেও এখন মেয়েও মাছ কাটায় হাত পাকিয়েছে। তরতরিয়ে কেটে ফেলতে পারে সব রকমের ছোট মাছ। ‘হাতের পাঞ্জা ছোট, তাই বড় মাছ কাটতে দিই না। ধরতে পারে না ঠিকমতো।’  সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোজ কয় কেজি মাছ কাটেন আনুমানিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছোট ও বড় মাছ মিলিয়ে হিসাব করলে রোজ পনেরো থেকে বিশ কেজি মাছ কাটা যায়।

শুধু মেরাদিয়া বাজারেই এমন মাছ কাটিয়ে আছে আট থেকে দশ জন। এ ছাড়া বনশ্রী এলাকার রাস্তার ধারের ছোটখাটো বাজারগুলোতেও নারীরা বসেন দল বেঁধে। বড় মাছবাজারগুলোর চেয়ে এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট বাজারগুলোতেই বেশি বসতে দেখা যায়। এখানে বড় মাছ কাটতে কেজিপ্রতি বিশ টাকা, আর ছোট মাছ কাটাতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। প্রতিদিন মাছ কেটে তাই ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পাওয়া যায় অনায়াসেই। দক্ষতা বেশি হলে কারো কারো ক্ষেত্রে তা ছাড়িয়ে যায় হাজার টাকাও।

খিলগাঁও বাজারের মৌসুমি বলেন, গার্মেন্টস করার চেয়ে এটা অনেক ভালো। আধবেলা কাজ করেই যা টাকা পাওয়া যায় তা গার্মেন্টসে ওভারটাইম করেও পাওয়া যায় না।  শুধু মাছ কেটেই মাস শেষে তার আয় ১২ হাজার টাকা প্রায়। এমন আকর্ষণীয় আয় আর অল্প শ্রম দিতে হয় বলে আজকাল বাজারে মাছ কাটিয়ে এমন নারীর সংখ্যা বাড়ছে। মা বা বোনের হাত ধরে এ কাজে যুক্ত হচ্ছে ছোট ছোট মেয়েরাও। অনেক নারী বাসা-বাড়িতে কাজের ফাঁকে এ কাজ করেন বাড়তি আয়ের জন্য। কেউ কি ভেবেছিল, পরের বাড়ির মাছ কেটেও এমন আয় করা যায়! মাছ কাটিয়ে এই নারীদের বদৌলতে নিশ্চিন্তেই ভূরিভোজ করা যাচ্ছে ঝাল-মসলায় হাতে মাখা ছোট মাছের চচ্চড়ি দিয়েই। এমন চিত্র এখন বাংলাদেশের প্রতিটি বাজারের দেখা মেলে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১