বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ June ২০১৮

সাশ্রয়ী ও পরিবেশের বন্ধু উন্নত চুলা

আমাদের গ্রামীণ জীবনে চুলার ব্যবহার অপরসীম সংরক্ষিত ছবি


বর্তমানে ২ কোটি ৮০ লাখ সাধারণ চুলায় লাকড়ি পুড়িয়ে রান্না হয়। এতে বছরে প্রায় ১৫০ কোটি মণ লাকড়ি ব্যবহার হয়। লাকড়ি দিয়ে রান্না করা এসব চুলা বন্ধু-চুলায় রূপান্তরিত হলে বছরে প্রায় সাত কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কম হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ কার্বন বিক্রি করে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো আয় হতে পারে

আমাদের গ্রামীণ জীবনে চুলার ব্যবহার অপরসীম। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম চুলার প্রচলন আছে। এসব চুলায় সাধারণত তিনটি ঝিকা থাকে এবং চুলার গভীরতা ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এর ফলে ধোঁয়া রান্নাঘরের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। প্রচলিত চুলায় জ্বালানি খরচ বেশি, রান্না হতে বেশি সময় লাগে। রান্নাঘরে ধোঁয়া, কালি ও ঝুল হয় এবং হাঁড়িপাতিল বেশি ময়লা হয়। চুলা ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং রান্নাঘরের পরিবেশ দূষিত হয়। তাই জ্বালানির অপচয়রোধ, রান্নাঘর ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত রাখতে এবং ব্যবহারকারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ১৯৮০-এর দশকে চুলা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। সেই থেকে বিভিন্ন মডেলের উন্নত চুলা উদ্ভাবন করে প্রতিষ্ঠানটি। যার একটি হচ্ছে বন্ধু-চুলা। এই চুলা গ্রামের সাধারণ মানুষের ব্যবহূত কয়েকটি উন্নত চুলার আদলে তৈরি করা হয়।

ডেনমার্কের পরিবেশবাদী সংস্থা কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার গৃহস্থালির বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কার্যকর উপায় চিহ্নিত করে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছে, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশে এই দূষণ প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘরের ভেতরে মানসম্পন্ন বায়ুর ব্যবস্থা করার সহজতম উপায়টি হলো জৈব জ্বালানির উন্নত রান্নার চুলা। উন্নত চুলা সাধারণত বদ্ধ হয় এবং নির্দিষ্ট অংশে চিমনি থাকে, যা তাপের অপচয় হ্রাস করে, বায়ুদূষণ রোধ করে এবং গতানুগতিক চুলা বা খোলা আগুনের চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে রান্নার পাত্রে তাপ ছড়িয়ে দেয়। উন্নত চুলা সাধারণত জৈব জ্বালানিকে আরো কার্যকরভাবে এবং কম দূষণের সঙ্গে দগ্ধ করে। বাংলাদেশে দুটি চুল্লি এবং একটি চিমনিসহ তিন বছর স্থায়ী হবে এমন একটি চুলায় বছরে খরচ প্রায় এক হাজার টাকা। ভেবে দেখার বিষয় হলো, বাংলাদেশে তিন কোটি পরিবারের সবাই যদি পুরনো চুলার পরিবর্তে উন্নত রান্নার চুলা নেয়, তাহলে বছরে ৩৩ হাজারের বেশি জীবন বাঁচবে। আর উন্নত চুলা যেহেতু বেশি কার্যকর, তাই পরিবারে রান্নার সময়ও বাঁচবে দিনে ১৫ মিনিট করে এবং জ্বালানি সংগ্রহ করার সময় অর্ধেকে নেমে আসবে। সব মিলিয়ে উন্নত রান্নার চুলার জন্য প্রতি এক হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি পরিবার স্বাস্থ্য এবং সময় সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার সুবিধা পাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে ২ কোটি ৮০ লাখ সাধারণ চুলায় লাকড়ি পুড়িয়ে রান্না হয়। এতে বছরে প্রায় ১৫০ কোটি মণ লাকড়ি ব্যবহার হয়। লাকড়ি দিয়ে রান্না করা এসব চুলা বন্ধু-চুলায় রূপান্তরিত হলে বছরে প্রায় সাত কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কম হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ কার্বন বিক্রি করে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো আয় হতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী শুধু রান্নাঘরের ধোঁয়াজনিত রোগের কারণে বাংলাদেশে বছরে ৪৬ হাজার মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ৩২ হাজার শিশু ও ১৪ হাজার নারী। অথচ একটি বন্ধু-চুলা ব্যবহারে বছরে ১ দশমিক ৭ টন কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এতে কম করে হলেও একটি মাঝারি মানের গাছ কুড়ালের কোপ থেকে রক্ষা পায়। আরো রক্ষা পায় প্রাকৃতিক জৈব সার হিসেবে খ্যাত হাজার কোটি টন গোবর। কার্বন প্রশমনে কার্যকর এ পদ্ধতিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

আশার খবর হচ্ছে ইতোমধ্যে বন্ধু-চুলা বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিয়েতনাম, নেপাল, মালাবি, উগান্ডা, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, পেরু, কম্বোডিয়া, কলম্বিয়া, নিকারুগুয়া, কোস্টারিকা, মঙ্গোলিয়াসহ বিশ্বের ২৪টি দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড, জার্মানির উন্নয়ন সংস্থা-জেআইজেড, পরিবেশ অধিদফতর, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১