আপডেট : ২৭ June ২০১৮
ঋতু ভেদে ত্বকের যত্নে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ব্যবহৃত প্রসাধনীটি হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। ঠোঁট ফাটা, হাত-পায়ের রুক্ষতা দূর করে ত্বক নরম কোমল করে তুলতে এর তুলনা নেই। ত্বকের যত্ন ছাড়াও কিছু ব্যবহার রয়েছে এই হাইড্রোকার্বনজাত পদার্থটির। মানব শরীরের বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ের সঙ্গে সৌন্দর্য চর্চায়ও দীর্ঘ দিন ধরে আস্থার সঙ্গেই ব্যবহূত হয়ে আসছে পেট্রোলিয়াম জেলি। বিজ্ঞাপনে চটকদার ভাষায় সেইসব কথার সঙ্গে আরো অনেক গুণের কথা প্রচার করে কোম্পানি। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির মতো প্রতিষ্ঠান প্রচারণার সেইসব বক্তব্য সমর্থন করে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার আওতায় পরিচালিত বেশকিছু হাসপাতালও পেট্রোলিয়াম জেলির পক্ষে সাফাই গায়। কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলির আসলেই কি সেইসব গুণ আছে? সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে কেটে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া ত্বকের রক্তপাত বন্ধ, ব্যথা উপশম বা ওষুধের বিকল্প হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার ভালোর বদলে খারাপই করতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দল গবেষক কাটা বা পুড়ে যাওয়া ত্বক কীভাবে নিজেকে সারিয়ে তোলে সেটা খুঁজতে গিয়েই পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহারে ভুলের এই তথ্যটি উদ্ঘাটন করে। ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম জেলির মতো হাইড্রোকার্বনজাত পদার্থ কাটা জায়গায় ব্যবহার করলে ত্বক তার নিজের যে প্রক্রিয়ায় ‘প্রাকৃতিক প্লাস্টার’ করে তা ব্যাহত হয়। ফলে কাটা বা পোড়া ক্ষত ভালো হতে আরো বেশি সময় নেয়। গবেষণাটি করেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট অ্যারিয়েন্স ও তার দলের সদস্যরা। রবার্ট অ্যারিয়েন্স জানান, তারা মানব শরীর ও আরো কয়েকটি প্রাণীর শরীরের কলা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, হঠাৎ আঘাত পাওয়া স্থানের প্রাথমিক চিকিৎসায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার খুব বেশি ভালো কোনো ফল আনতে পারেনি। তারা দেখেন, কাটা বা পোড়া স্থানের ক্ষত সারাতে ত্বক সেখানে নিজে নিজেই প্রোটিনের একটা পাতলা আস্তরণ তৈরি করে। রবার্ট অ্যারিয়েন্স বলেন, এই আবরণই টানা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ক্ষতস্থলকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। আর এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার সব কাজটাই করে শ্বেত রক্তকণিকা। তাই কেটে বা পুড়ে যাওয়ায় পর সেই স্থানে পেট্রোলিয়াম জেলির মতো হাইড্রোকার্বনজাত পদার্থ ব্যবহার করলে প্রোটিনের আস্তরণ বা ‘প্রাকৃতিক প্লাস্টার’ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বলে উল্লেখ করেন রবার্ট অ্যারিয়েন্স। নিবন্ধে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম জেলি হলো হাইড্রোকার্বন। আর হাইড্রোকার্বন হলো হাইড্রোজেন ও কার্বনের যৌগ বা অণু হাইড্রোকার্বন অণুগুলোর একটি বিশেষ ধর্ম হলো এগুলো পানির সঙ্গে মেশে না। পানির অণুর সঙ্গে কোনো প্রকার আকর্ষণ বল কাজ করে না। ত্বকের কোষে যে পানি থাকে, তা বাষ্পীভূত হতে পারে না। ফলে ত্বক শুষ্ক হয় না। আর এ কারণেই শীতকালে ত্বকের যত্নে এর জুড়ি মেলা ভার। পেট্রোলিয়াম জেলির পানিবিদ্বেষী এই স্বভাবই শ্বেত রক্তকণিকার জলীয় অংশকে কাটা বা পোড়া ত্বক প্রোটিনের আস্তরণ বা ‘প্রাকৃতিক প্লাস্টার’ তৈরিতে বাধা দেয়। ক্ষত স্থানে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার নিয়ে ওয়ন্ড ইউকে জার্নালের ক্লিনিক্যাল এডিটর জ্যাক ফ্লেচার বলেন, খেলাধুলার সময় হঠাৎ করে একটু কেটে বা ছড়ে গেলে সেখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তের প্রবাহ বন্ধ করতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জরুরিভাবে ড্রেসিং করার বিকল্প হতে পারে এটা। কিন্তু খেলাধুলা বা দৌড়-ঝাঁপের কোনো কাজের মধ্যে না থাকলে কাটা বা পুড়ে যাওয়া স্থানের রক্তপাত বন্ধের আশায় বা সংক্রমণ রোধের আশায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার না করাই ভালো বলে মনে করেন জ্যাক ফ্লেচার। তার ভাষায়, কেটে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া ত্বকের রক্তপাত বন্ধ, ব্যথা উপশম বা ওষুধের বিকল্প হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহারে কথাটি আসলে কোম্পানির বিজ্ঞাপনী বয়ান।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১