আপডেট : ২৫ June ২০১৮
বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটা এমন- এক ফুটবলপাগল ভক্ত প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে প্রিয় দলের খেলা আছে জেনে অনেক কষ্টে একটি টিকেট জোগাড় করে ঢুকে পড়লেন গ্যালারিতে। কিন্তু তিনি জানতেন না, যে গ্যালারিতে বসেছেন সেটি ছিল বিপক্ষ দলের সমর্থকে পরিপূর্ণ। খেলা শুরু হওয়ার পর মুগ্ধ হয়ে দেখছেন প্রিয় দলের এগিয়ে চলা। এর মধ্যেই তার পছন্দের দল গোল করে বসল। প্রিয় দলের গোলে সমর্থকটিও উল্লাসে চিৎকার করে উঠলেন। ব্যস! শুরু হয়ে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড। সে সময়ে ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাগলামির ধরনটা ছিল এমনই। আর হবেই না কেন? সে সময় বাংলাদেশের ফুটবলে সালাউদ্দিন, চুন্নু, বাদল রায়, সাব্বির, কায়সার, কানন, ওয়াসিম, রুমি, আসলাম, মহসিনের মতো অসাধারণ সব ফুটবল প্রতিভার জন্ম হয়েছিল। বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় একসময় কলকাতাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ক্লাব ফুটবলে নিয়মিত খেলতেন। এই শতকের শুরুতে ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের সময়ও ফুটবল ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকে ঘরোয়া ফুটবল লিগে আবাহনী-মোহামেডানের জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। সেই সময় ক্লাব-ফুটবলের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভক্তদের মধ্যে তুমুল উন্মাদনা লক্ষ করা যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সে উন্মাদনার ছন্দপতন হয়। আগে ক্লাব ফুটবলের নিজস্ব পতাকা ভক্তদের ছাদে শোভা পেত। আর এখন কেবল বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, একসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি গ্রামগঞ্জের খেলায়ও হাজার হাজার দর্শক সমাগম হতো। এক যুগ আগেও আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা এবং সাজসাজ রব পড়ে যেত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে। বাংলাদেশে ফুটবল আর ক্রিকেটের পরিসংখ্যান যদি পাশাপাশি তুলনা করা যায়, তবে দেখা যাবে ফুটবল যখন বিশাল বটবৃক্ষ, ক্রিকেট তখন নিতান্তই চারাগাছ। সেই ফুটবলই এখন দিনে দিনে বনসাই হয়ে পড়ছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই বললেই চলে। ক্লাব ফুটবলগুলো কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয় তার খবরও যেন কেউ রাখে না। কেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের এমন হতশ্রী অবস্থা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বিভিন্ন পক্ষ আসলে পরস্পরমুখী বক্তব্য দিয়ে দায় সারতে চায়। কোচ দোষ দেন খেলোয়াড়দের মনোভাবকে, খেলোয়াড়রা দোষ দেন কোচকে। আবার কেউ কেউ মনে করেন ফুটবল সংগঠনগুলোকে অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে পকেট ভারি করার মনোভাবই ধীরে ধীরে বিপর্যয় ডেকে এনেছে এদেশের ফুটবল অঙ্গনে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের ক্রীড়া নৈপুণ্যের চিত্র দেখলে এই বিপর্যয়কে অনুধাবন করা সম্ভব। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আট ম্যাচে ৩২ গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। জর্ডানে গিয়ে আট গোল খেয়েছে। আফগানিস্তানের নিকট সাফ ফুটবলে চার গোল, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাজিকিস্তানের মাঠে পাঁচ গোল, এমনকি বছর দুয়েক আগে মালদ্বীপের কাছেও লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সাধারণভাবে ফুটবল খেলায় ৯০ মিনিটের জন্য যে শারীরিক সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়, তার অনেক বড় ঘাটতি রয়েছে আমাদের বর্তমান সময়ের খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে প্রশিক্ষণ আর চেষ্টায় অনেক প্রতিকূলতার ভেতরেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। আমরা কোটি টাকা খরচ করি কোচের পেছনে। কিন্তু উঠতি বয়সী খেলোয়াড়দের পেছনেও অর্থ বিনিয়োগ করা আবশ্যক, যেন তারা শারীরিকভাবে যোগ্য হয়ে ওঠে। নিয়মিত তৃণমূল ও ক্লাব পর্যায়ের লিগ এবং কঠোর অনুশীলন ব্যতীত ভালো ফল কখনই সম্ভব হবে না। জাতিগতভাবেও ফুটবলের প্রতি এদেশের মানুষ যে আগ্রহ হারায়নি সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ উন্মাদনা তার প্রমাণ। মানুষের ভেতরের এই উন্মাদনাকে সঠিক রূপদান করেই ফুটবল বিশ্বে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। অতীতের সোনালি সময় এক্ষেত্রে হবে আমাদের অনুপ্রেরণা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১