আপডেট : ২১ June ২০১৮
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার সময় ডায়াবেটিক রোগীরা এক ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল। রোজার পর ঈদের দিন থেকে শুরু হতে থাকে খাদ্য গ্রহণে পরিবর্তন। ঈদের সময় সব জায়গায়ই উচ্চ ক্যালরির খাবার, মিষ্টিজাতীয় মুখরোচক খাবার গ্রহণের প্রচলন রয়েছে। ডায়াবেটিক রোগীদের এ ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে কিছুটা দূরে রাখা হলেও সম্পূর্ণ বিরত রাখা যায় না। তাই ঈদ-পরবর্তী খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস পথ্য শর্করা চর্বি ও প্রোটিন অনুপাত ৬০ : ২০ : ২০ থাকা উচিত। প্রতিদিন ক্যালরি গ্রহণের যথাক্রমে শর্করা, চর্বি ও প্রোটিন ৬০ : ২০ : ২০ একটি অনুপাতের সঙ্গে ১৫০০-১৮০০ ক্যালরি এর মধ্য থেকে হবে। একটি খাদ্য পরিকল্পনার মধ্যে অন্তত দুটি মৌসুমি ফলমূল ও তিনটি শাকসবজি যোগ করা উচিত। একবারে বেশি খাবার শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য অল্প পরিমাণে বারবার খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটা রক্তে শর্করার উচ্চমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত একজন ব্যক্তির বেশি ফাইবার, কম শর্করা এবং প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে এমন একটি খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা উচিত। বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস (ইংরেজি : Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্নাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্নাশয় এক ধরনের হরমোন ইনসুলিন যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতার যে কোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। ডায়াবেটিস বর্তমানে জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এতে খুব বেশি ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এটি মারাত্মক কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে নিয়ন্ত্রণে অলসতা করলে এটি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। যেমন এর ফলে কিডনি রোগ হতে পারে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, স্নায়ুবিক দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে, শরীরে ঘা হলে সেটা দ্রুত সারবে না, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে, এমনকি শরীরে রক্ত কমে যাবে। ডায়াবেটিক খাদ্য টিপস আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেটের বিশাল ভূমিকা রয়েছে, এটি শরীরের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি এটির ভূমিকা চর্বি বা প্রোটিনের তুলনায় বেশি। সুতরাং কী ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার খাচ্ছেন এ ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। প্রক্রিয়াজাতকরণ শর্করা যেমন, সাদা পাউরুটি, চিনিযুক্ত সেরিয়াল, প্রক্রিয়াজাত পাস্তা বা চাল ছাড়াও সোডা, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাবার যাতে চিনিযুক্ত থাকে ইত্যাদির ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। মনোযোগী হতে হবে স্লো রিলিজ কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবারের প্রতি। এগুলো ধীরে ধীরে শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যা ধীরে ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে। › যেকোনো ধরনের মাছই প্রোটিনের ভালো উৎস। মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। শরীরের জন্য ভালো ফ্যাট যেমন ওমেগা-৩ এবং monounsaturated PweÆ (MUFA) ভালো চর্বি খাওয়া উচিত। এজন্য প্রাকৃতিক উৎস তেল, তিসি তেল, চর্বিযুক্ত মাছ ও বাদাম। এই কোলেস্টেরল কম চর্বি এবং ক্ষতিবিহীন হয়। › গাঢ় সবুজ রঙের শাককে বলা হয় পাওয়ার হাউজ ফুড। এতে প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি এতে ক্যালরির পরিমাণও খুব কম থাকে। ডালজাতীয় খাবার ডায়েটে গুরুত্বপূর্ণ যা শর্করা জাতীয় খাবারের চাইতে রক্তের গ্লুকোজ কম বৃদ্ধি করে। ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা কমিয়ে রাখে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারও বটে। › পেঁপে, আপেল, কমলা, নাশপাতি, পেয়ারা ফল হিসেবে উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ এগুলো খাওয়া উচিত। আম, কলা, আঙ্গুর উচ্চ চিনি থাকে; ফলে এই ফল অন্যদের তুলনায় কম খাওয়া উচিত। সাইট্রাস ফল বলতে লেবু, কমলালেবু, মাল্টা ইত্যাদিকে বোঝায়। এসব ফল ভিটামিন সি-এর দারুণ উৎস। এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবার থাকে। › টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অত্যাবশ্যক খাদ্য উপাদান যেমন : ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, আয়রন ইত্যাদি থাকে। টমেটো বেশ সহজলভ্য এবং টমেটো সালাদ বানিয়ে, রান্না করে বা সস হিসেবেও খাওয়া যায়। › ডায়াবেটিক রোগীদের কেক ও মিষ্টির জন্য কৃত্রিম sweeteners (পরিমিত) ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হবে। অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। রোজা রাখার কারণে অনেকে শারীরিক পরিশ্রম এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা থেকে বিরত ছিলেন। তাই ঈদ-পরবর্তী খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত হাঁটা এবং হালকা শারীরিক পরিশ্রম শুরু করে দেহকে রাখতে হবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত। ৫১০ ভাগ শরীরের ওজন কমালে অনেকাংশে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও শর্করা স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। নিয়মমাফিক ব্যায়াম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস যেমন শরীর ঝরঝরে রাখতে সাহায্য করে তেমন আপনার ক্লান্তি, মানসিক সুস্থতা ও নিয়মমাফিক জীবনের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ প্রতিরোধ সম্ভব। মূল কথা হলো, আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনাকে নিজে থেকেই এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১