আপডেট : ০৩ June ২০১৮
শয্যা, চিকিৎসক ও জনবলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগীর চাপ সবসময়ই থাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। দেশের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগী পাঠানোর অন্যতম কেন্দ্র এই চিকিৎসালয়। ঢাকায় কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও জটিল রোগে আক্রান্ত গরিব রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। তাই বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ- সবখানেই থাকে উপচেপড়া জটলা। নতুন রোগীর চাপে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ অসুস্থ মানুষকে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। এর সঙ্গে আছে চিকিৎসকদের অবহেলা, দালালের দৌরাত্ম্য, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং অব্যবস্থাপনাও। এমন এক নারকীয় পরিস্থিতিতে অনেক রোগীকে চিকিৎসার বদলে সীমাহীন দুর্ভোগ সয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। মারাও যান কেউ কেউ। সরেজমিনে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে রোগীর চাপ যেমন বেশি, তেমন অনিয়মও বেশি। টাকা ছাড়া কোনো সেবা মেলে না সেখানে। রোগীর চাপের অজুহাত দিয়ে অনেক চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জরুরি সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রতিদিন পদে পদে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় অসুস্থ মানুষ এবং তার স্বজনদের। জরুরি বিভাগে ‘জরুরি ঘুষ’ এখন নিয়ম সেখানে। কর্মচারিদের হাতে সময়মত টাকা গুজে দিতে না পারলে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। চিকিৎসকদের হিসাবে, সরকারি এ হাসপাতালে প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশ করে রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার ৮০০ রোগী ভর্তি থাকে; যেখানে শয্যা আছে ২ হাজার ৬০০টি। শয্যার তুলনায় জনবল কম আছে ৫০০ জন। তবে এত রোগীর চাপ ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে সন্তুষ্ট দায়িত্বশীলরা। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল থেকে সুস্থ হয়ে ৯২ ভাগ রোগী বাড়ি ফিরছে। মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। সম্প্রতি হাসপাতালটি ঘুরে চিকিৎসা কার্যক্রমে নানা অনিয়ম চোখে পড়ে। দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টার থেকে ট্রলি, রোগীকে ট্রলিতে ওঠানো ও ভর্তি- সব প্রক্রিয়াতেই টাকা গুনতে হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনের দেওয়ালে টানানো আছে কোন কোন ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে স্বজনদের অভিযোগ, অধিকাংশ ওষুধ পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। বিশেষ করে দামি কোনো ওষুধই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে হাসপাতালের পরিবেশ চিকিৎসার অনুকুল নয়। মাছি আর বিড়ালের উপদ্রব ব্যাপক। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তোলে। দালালরা সব সময় ওৎ পেতে থাকে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা খসাতে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা বিপুল সংখ্যক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছি। কিছু জটিল ওষুধ ছাড়া বেশিরভাগই বিনামূল্যে। এমনকি হতদরিদ্র রোগীদের পুরো চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।’ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজারো রোগী আসে সেবা নিতে। তাদের ১০ টাকার টিকেট কিনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এজন্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকেট কাউন্টারে ভিড় লেগেই থাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টারের লোকজন দালালদের হাতে আগেই টিকেট দিয়ে দেন। লম্বা লাইনে না দাঁড়িয়ে দালালদের বাড়তি টাকা দিলে সঙ্গে সঙ্গে মিলে যায় সে টিকেট। কাউন্টারের সামনে কথা হয় নড়াইল থেকে চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে আসা কবির মিয়ার সঙ্গে। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, কাউন্টার থেকে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি জানতে পেরেছে, হাসপাতালের তিন কর্মকর্তা টিকেট বিক্রির চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ‘জরুরি ঘুষ’ এখন দিতেই হয়। এ বিভাগে সবসময় ভিড় থাকে। সেখান থেকে রসিদ নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অধিকাংশ ভর্তি রসিদেই ‘সিট খালি নাই’ সিল দিয়ে দেওয়া হয়। পরে দালাল ও কর্মচারীদের টাকা দিলে সিট পাওয়া যায়। জানা গেছে, তিন শতাধিক দালাল হাসপাতালটিতে সক্রিয় আছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও সমপ্রতি হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন। সরেজমিন দেখা গেছে, মেঝে থেকে শয্যা- সব জায়গায় রোগী আর রোগী। কোনো ওয়ার্ডের শয্যাই খালি নেই। ফলে ওয়ার্ডের সামনে চলাচলের পথে বিছানা পেতে রোগী রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুমূর্ষু রোগীও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিচালক বলেন, সারা দেশের রোগীদের ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। তাই শয্যা না থাকলেও বারান্দায় ও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী ভর্তি হয়; চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরে ৫০০-৬০০ জন। রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ঢামেককে অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। আমরা একে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১