আপডেট : ২৯ May ২০১৮
ঋণ খেলাপি অথবা হালনাগাদ কর, ভ্যাট, শুল্ক পরিশোধ না করলে কোনো ব্যক্তি নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠনের কোনো পদের জন্য নির্বাচন করতে পারবেন না। আবার নির্বাচিত হওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি ঋণ খেলাপি অথবা কর খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্তির ১৮০ দিনের মধ্যে ঋণ বা কর পরিশোধ না করেন তাহলে তার পদ শূন্য বলে গণ্য করা হবে। বাণিজ্য সংগঠনের পদে অধিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০১৮’ নামে নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে খেলাপিদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলে খেলাপিরা বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু নতুন আইনে সব নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠনের জন্যই খেলাপিদের নির্বাচনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। আইনটি পাস হলে খেলাপিরা আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। বর্তমানে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ট্রেড অরগানাইজেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৬১-এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। মূলত ওই অর্ডিন্যান্সটিকে মূল ভিত্তি ধরে বেশকিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করে বাংলা ভাষায় আইনটি প্রণীত হচ্ছে। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ট্রেড অরগানাইজেশন অর্ডিন্যান্সটি রহিত হবে। তবে রহিত হলেও অর্ডিন্যান্সের অধীনে যেসব বাণিজ্য সংগঠন নিবন্ধন পেয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের নতুন করে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে না। জানতে চাইলে পরিচালক (বাণিজ্য সংগঠন) মো. ওবায়দুল আজম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের সুপারিশের ভিত্তিতে সংযোজন, বিয়োজনের পর খসড়া চূড়ান্ত করে শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মহাপরিচালক নিযুক্তি ও তার ক্ষমতা : বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন মহাপরিচালক নিযুক্ত হবেন বলে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে। মহাপরিচালকের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাপরিচালকের ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে- বাণিজ্য সংগঠন সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। বাণিজ্য সংগঠনের যেকোনো সভায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন বা তিনি প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করতেও পারবেন তিনি। বাণিজ্য সংগঠনের কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের এক বা একাধিক সদস্য কিংবা পরিচালককে অপসারণ কিংবা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন। আইনটি পাস হলে মহাপরিচালকের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আলাদা দফতর গঠিত হবে। বর্তমানে উপসচিব পদমর্যাদার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা পরিচালক হিসেবে বাণিজ্য সংগঠনের কার্যক্রম দেখভাল করে থাকেন। প্রশাসক নিয়োগ ও উপদেষ্টা কমিটি গঠন : বাণিজ্য সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনায় পরিচালনা পর্ষদ ব্যর্থ হলে কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই যথাসময়ে নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ গঠিত না হলে কিংবা আদালত কোনো পরিচালনা পর্ষদকে দায়িত্ব পালন করা হতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করলে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রয়েছে। নতুন আইনের খসড়ায় প্রশাসকের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, স্বীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যদের মধ্য থেকে একাধিক সদস্যের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে পারবেন। প্রশাসক ও উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের সম্মানী, ভাতা, পারিশ্রমিক এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে কিংবা সংগঠনের দায়ের করা সব মামলার খরচ সংগঠনের তহবিল থেকে মেটানো হবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে। জরিমানার বিধান : নতুন আইনে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা বাণিজ্য সংগঠনকে অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা, ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। অপরদিকে আইনে সদস্য পদ গ্রহণে এবং পদে অধিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেগুলো লঙ্ঘন কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ অমান্যে প্রতিদিনের জন্য এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হবে বলে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চেম্বার গঠনের বিধান : বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফেডারেশনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জয়েন্ট ট্রেড ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করার বিষয়টি রয়েছে আইনের খসড়ায়। এ ছাড়া সব জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য চেম্বার, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক বা বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এসব দেশ বা অঞ্চলের সঙ্গে যৌথ চেম্বার গঠনের বিধান রয়েছে খসড়ায়। ট্রেড অরগানাইজেশন অর্ডিন্যান্সে নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বার গঠন ও যৌথ চেম্বার গঠনের কোনো বিধান নেই। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন সাপেক্ষে নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বার ও যৌথ চেম্বারের কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু নতুন আইনটি পাস হলে এ ধরনের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে না।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১