আপডেট : ২৯ May ২০১৮
ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতায় দেশের আমদানি-রফতানি আয়ের মধ্য থেকে যাওয়া ঘাটতি কিছুতেই কাটছে না। খবর নিয়ে জানা গেছে, পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই দেশ দুটির অনুকূলে। আর অচিরেই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি সূত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) চীন থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করলেও রফতানি ছিল মাত্র ৯৫ কোটি ডলারের। আর ভারত থেকে ৬৭ কোটি ডলার আয় হলেও আমদানি হয়েছে ৬১৬ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ শতাংশই আসছে চীন থেকে। আর ভারত থেকে আসছে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ মোট আমদানির ৪০ শতাংশই হচ্ছে দেশ দুটি থেকে। আমদানির ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে রফতানির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের মাত্র ৫ শতাংশ আসছে ভারত ও চীন থেকে। দেশ দুটির সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারলে দেশ রফতানি আয়ে উদ্বৃত্ত হতে পারত। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি ডলার। আর আমদানির খরচ ছিল ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ দুই দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এ দুটি বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে যেসব শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পণ্যের বহুমুুখীকরণের উদ্যোগেও গুরুত্ব দিতে হবে। চীন থেকে সবচেয়ে বেশি কেনা হয় বস্ত্র ও বস্ত্র জাতীয় পণ্য, যা দেশটি থেকে মোট আমদানির ৩৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি। এর পরিমাণ ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া কেমিক্যাল, লোহা, যানবাহন, খনিজ পদার্থ, প্লাস্টিক ও রাবার জাতীয় পণ্য আমদানি হয় দেশটি থেকে। আর বাংলাদেশ চীনে যেসব পণ্য রফতানি করে তার মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষি ও প্রকৌশল পণ্য। ভারত থেকেও বাংলাদেশ বস্ত্র ও বস্ত্র জাতীয় পণ্য সবচেয়ে বেশি কেনে, যা দেশটি থেকে মোট আমদানির ৩০ শতাংশ। এরপর প্রায় ১৫ শতাংশ আমদানি হচ্ছে কৃষিজাত পণ্য। ভারত থেকে আরো আসে যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, কেমিক্যাল, যানবাহন, পরিবহন খাতে ব্যবহূত বিভিন্ন পণ্য, বেইজ মেটাল, খনিজ দ্রব্য, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য, প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি। আর দেশটিতে রফতানি হচ্ছে পাট ও পাট জাতীয় পণ্য, তৈরি পোশাক, প্রকৌশল পণ্য, তুলা, হোম টেক্সটাইল প্রভৃতি। তবে ভারত থেকে বৈধ পথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ আসে অবৈধভাবে। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বাস্তবে অনেক বেশি। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা পেলেও নানা ধরনের অশুল্ক বাধার মুখে পড়ছে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি যায় পাট ও পাটজাত পণ্য। কিন্তু এর ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বসানোয় ভারতে পাট রফতানিতে সমস্যা হচ্ছে। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক মনসুর এইচ আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের রফতানি পণ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই। পোশাক খাতই এক্ষেত্রে নেতৃত্বে। পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে না পারলে রফতানি বাড়বে না। তিনি আরো বলেন, এমন কিছু পণ্য আছে যা আমাদের আনতেই হবে। ভারত থেকে পণ্য আনতে সময় কম লাগে আর চীন থেকে তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যায়। এ কারণে এ দুটি দেশ থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, চীন ও ভারতের পর বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর থেকে ৬ শতাংশ, জাপান থেকে ৪, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিল থেকে ৩, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, হাঙ্গেরি, অস্ট্রেলিয়া থেকে ২ থেকে আড়াই শতাংশ পণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ আসে আমেরিকা থেকে। এ ছাড়া জার্মানি থেকে ১৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্য থেকে ১০, স্পেন থেকে ৬, ফ্রান্স ৫, ইতালি ৪ ও কানাডা থেকে ৩ শতাংশ আয় করে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশের রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় সব সময়ই বেশি। ’৯০-এর দশকে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশের মতো। তবে গত অর্থবছরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটানো হয়েছে রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে। অবশ্য চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ৮ মাসে (জুলাই ’১৭ থেকে ফেব্রুয়ারি ’১৮) আমদানি হয়েছে ৫৮৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের বেশি পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ ব্যয়বৃদ্ধি ২০.৬১ শতাংশ। অথচ একই সময় রফতানি আয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের এ পার্থক্যের কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। মূলধন যন্ত্রপাতি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দর বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে রফতানি আয়ে প্রধান ভূমিকায় রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের। প্রায় ৮০ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসছে অন্যান্য পণ্য থেকে। বাংলাদেশের রফতানির অন্যান্য খাত হলো- কাঁচা পাট ও পাট জাতীয় পণ্য, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক ইত্যাদি। বর্তমানে ১৭০টি দেশে প্রায় ৭৫০ ধরনের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১