আপডেট : ২৪ May ২০১৮
দীর্ঘ সাত বছর পর এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্র্যান্ড সঙ্কটের অবসান হতে যাচ্ছে। চীনা ব্র্যান্ড জংশেন নিয়ে মোটরসাইকেল ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে এবার তারা চুক্তি করতে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি টিভিএসের সঙ্গে। ২০১১ সালে ভারতের হিরো হোন্ডার সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল হওয়ার পর চীনা কোম্পানিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমেজ অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা চালায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। তবে জংশেন জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়ে এটলাস। ভারতের টিভিএস ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দেশে সংযোজন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আজ এটলাস বাংলাদেশের সঙ্গে টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বর্তমানে দেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে টিভিএস। দেশে মোটরসাইকেল বাজারের প্রায় ২৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এ কোম্পানির। টিভিএসের মোটরসাইকেল সংযোজন ও বাজারজাত করতে পারলে এটলাস আবারো লাভজনক কোম্পানিতে ফিরে আসবে। বর্তমানে কোম্পানিটি চীনা কোম্পানি জংশেন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন ও বাজারজাত করে উৎপাদন পর্যায়েই লোকসান গুনছে। চীনা কোম্পানি জংশেন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ। দেশে জংশেন ব্র্যান্ড জনপ্রিয় না হওয়ায় মোটরসাইকেলের বাজারে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে এটলাস। মোটরসাইকেল বিক্রি থেকে পর্যাপ্ত আয় না আসায় এখন পুঁজি ভেঙে চলতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। বিক্রি কমে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ব্র্যান্ডভিত্তিক হিসেবে দেশের মোটরসাইকেল বাজারের শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় কোম্পানি বাজাজ। কয়েক বছর ধরে প্রায় ৪০ শতাংশ বাজার দখলে রাখলেও চলতি বছর তা ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের বাজারে বিক্রিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা ব্র্যান্ড টিভিএসের মার্কেট শেয়ার প্রায় ২৪ শতাংশ। অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে সুজুকি ৮, ইয়ামাহার ৯ ও হোন্ডার ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে। ‘হিরো হোন্ডা’র একসময় উল্লেখযোগ্য শেয়ার থাকলেও আলাদা হয়ে যাওয়ায় ‘হিরো’ ও ‘হোন্ডা’ দুটি ব্র্যান্ডই মার্কেট শেয়ার হারিয়েছে। বর্তমানে দেশে মোটরসাইকেল বাজারের মাত্র ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে হিরোর। অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রানার, ডায়াং, ওয়ালটন ও মাহিন্দ্র উল্লেখযোগ্য। হিরো-হোন্ডার বিক্রি বন্ধ করার আগে প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করছিল এটলাস। বাজার শেয়ার ছিল ২২-২৫ শতাংশ। ভারতে হিরো ও হোন্ডা আলাদা হয়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে এটলাসের সঙ্গে হিরো-হোন্ডা সংযোজন ও বাজারজাতকরণের চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়ে যায় এটলাস। পরবর্তী চার বছর চেষ্টার পরও প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে না পারায় বড় ধরনের সঙ্কটের মধ্যে পড়ে এটলাস। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্র্যান্ড না পেয়ে ২০১৫ সালে চীনা কোম্পানি জংশেনের সঙ্গে চুক্তি করে এটলাস। যদিও দেশে মোটরসাইকেলের বাজারে জংশেন ব্র্যান্ডের উল্লেখ করার মতো কোনো হিস্যা নেই। জংশেন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের চাহিদা কম থাকায় সংযোজন পর্যায়েই লোকসানের মুখে পড়ে এটলাস। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০-১১ হিসাব বছরে এটলাসের আয় ছিল ৫৮০ কোটি টাকা। সে সময় কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৬ টাকা ৭৭ পয়সা। তবে জংশেন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন ও বাজারজাত করে সঙ্কটে পড়ে যায় এটলাস। এতে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে মোটরসাইকেল বিক্রি থেকে আয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি টাকা। আয়ের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় সে বছর ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার নিট লোকসানে পড়ে এটলাস। পরের বছর বিক্রি আরো কমে যাওয়ায় নিট লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। আর চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানিটি সাড়ে ৪ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে। বছর শেষে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। অবস্থা এতটাই খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, জংশেন মোটরসাইকেল বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে একসময়ের বড় অঙ্কের মুনাফায় থাকা কোম্পানি এখন পরিণত হয়েছে লোকসানি কোম্পানিতে। গত তিন বছর ধরেই কোম্পানির পরিচালন কার্যক্রম চলছে পুঞ্জীভূত মুনাফার তহবিল ভেঙে। ২০১৩ সালে কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফা (রিটেইন্ড আর্নিংস) ছিল ৭০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তবে এখন টিভিএস ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় এটলাসের সুদিন ফিরতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১