আপডেট : ০৯ May ২০১৮
পর্যটন বা ভ্রমণের গুরুত্ব বোঝাতে জাপানিরা বলত ‘বাঁশের নল দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায় না।’ সেটা অবশ্য বলা হতো বিশ্ব সম্পর্কে পুরো ধারণা পেতে যে ভ্রমণের বিকল্প নেই সেটা বোঝাতে। তবে আজকের বিশ্বে পর্যটনের জ্ঞানার্জনের দিকটির চেয়ে অর্থনৈতিক দিকই বেশি গুরুত্ব পায়। পর্যটন হয়ে উঠেছে শিল্প। পর্যটন শিল্প আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয়, দ্রুত উন্নয়নশীল, অর্থকরী এবং সংবেদনশীল। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল ও ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব মতে, ২০১৬ সালে বিশ্বের জিডিপিতে এই শিল্পের মোট অবদান ছিল ৭ হাজার ৬১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বিশ্বের সামগ্রিক জিডিপির ১০ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবছর ৪ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২৭ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১১ হাজার ৫১৩ বিলিয়ন ডলারে। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এই খাতে। করছে নতুন নতুন বিনিয়োগ। কেবল ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন ৯০ কোটি ১০ লাখ মানুষ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ কোটি বেশি। আর তাদের জন্য বন-পাহাড় উজাড় করে হচ্ছে পর্যটন এলাকা, থাকার জন্য বড় বড় হোটেল, রিসোর্ট। তাদের আয়েশের জন্য সেইসব হোটেলে চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। যাতায়াতে ব্যবহূত গাড়ি, বিমান বা জাহাজের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। আর এসবের বাড়াবাড়ি রকমের বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। এর বড় একটা অংশ নিঃসরণের জন্য এককভাবে দায়ী এই বিকাশমান পর্যটন শিল্প। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে সারা বছর যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয় তার দুই থেকে আড়াই শতাংশ হয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতগুলো থেকে। কিন্তু সোমবার নেচার ডটকমে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, প্রথমবারের মতো পর্যটন খাত থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা গেছে। আর তাতে দেখা গেছে সারা বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের আট শতাংশই ঘটে পর্যটন খাতগুলো থেকে। নতুন এই গবেষণাটি সমন্বিতভাবে করেছেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল চেঙ কুঙ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষকরা পর্যটকদের যাতায়াত, আবাসন, খাদ্য ও পানীয়, স্মারক, কাপড়, প্রসাধনী ও অন্যান্য নৈমিত্তিক জিনিসপত্রের আয়োজন ও উৎপাদনকে সূচক হিসেবে নেন। গবেষক দলের প্রধান ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অরুনিমা মালিক বলেন, এই গবেষণাটি আসলে সবার চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবেই খতিয়ে দেখতে চাইছিলাম, পর্যটন খাতের ভোগ্য পণ্যগুলো উৎপাদনে আমাদের কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে। পর্যটকদের বিলাসিতার কবলে পড়ে আমাদের ধরণী কতটুকু বিপদগ্রস্ত হচ্ছে সেই বিষয়গুলো। তিনি আরো বলেন, কোন দেশ থেকে কোন দেশে কত মানুষ বেড়াতে যাচ্ছে তারও একটি তুলনামূলক চিত্র যাচাই করেছি। এর মাধ্যমে পর্যটনের এই ভয়ঙ্কর দিকটি আমাদের সামনে উঠে এসেছে বলে জানান অরুনিমা মালিক। ড. মালিক বলেন, সাধারণত বিত্তশালীরা বেড়াতে গিয়ে পরিবহন, আবাসন ও খাদ্যগ্রহণ করতে গিয়ে অন্যদের তুলনায় বেশি কার্বন নিঃসরণ করেন। বিবিসি অনলাইন এক খবরে বলেছে, নতুন এই গবেষণায় পর্যকরা যে দেশ থেকে যাচ্ছেন এবং যে দেশে যাচ্ছেন সেই উভয় দেশে কী প্রভাব পড়ে সেটা দেখেছেন গবেষকরা। যেমন কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের নাগরিকরা সাধারণত তাদের জীবনযাপনের ধরনের কারণে অনেক বেশি কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন। আবার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি ও ভারতের বেশিরভাগ পর্যটকই তাদের নিজেদের দেশে ভ্রমণ করেন। আর এই দেশগুলোই মূলত কার্বন নিঃসরণের শীর্ষ দেশ। তবে মালদ্বীপ, সাইপ্রাস ও সিসিলির মতো পর্যটননির্ভর দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট যে কার্বন নিঃসরণের ঘটনা ঘটে তা ওইসব দেশের মোট কার্বন নিঃসরণের হার গড়ে ৮০ শতাংশেরও বেশি। নতুন এই গবেষণাটিতে মানুষের আয়ের সঙ্গে ভ্রমণের একটি সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো মানুষের বার্ষিক আয় ৪০ হাজার ডলারের বেশি হলে তারা ১০ শতাংশ আয় বৃদ্ধির বিপরীতে ১৩ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ বাড়ায়। এ অবস্থায় মার্চ মাসে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটন মেলা আইটিবি ২০১৮-তে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর পর্যটন খাতের নীতিনির্ধারকরা যে আহ্বান জানান তা বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানে তারা পর্যটনের জন্য যেসব আবাসন তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোকে জ্বালানি দক্ষ করে গড়ে তোলা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার আহ্বান জানান।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১