বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ May ২০১৮

ডেডলাইন ওভার!

সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলাদেশের খবর


আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের যে সমঝোতা হয়েছিল তার ‘ডেডলাইন’ সোমবার শেষ হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার হবে নাকি তা বাতিল হয়ে যাবে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। এর ফলে আন্দোলনকারীরা এক রকম অন্ধকারে। তারা বুঝতে পারছেন না, সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে কী হচ্ছে? যদিও এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দুবার বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না।

উল্লেখ্য, উত্তাল কোটা আন্দোলনের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক হয়। সেখানে সমঝোতা হয় ৭ মে’র মধ্যে সরকার কোটা সংস্কার সংক্রান্ত দাবির বিষয়টি ফয়সালা করবে। সেই মোতাবেক শিক্ষার্থীরা ৭ মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির সময় বেঁধে দিয়ে সেই দিন থেকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এর পরদিনই সরকারের দুই মন্ত্রী কোটা আন্দোলন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামে। এ আন্দোলনে যখন পুরো দেশ অচল হয়ে পড়ে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চেয়েছিলেন। তবু প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিল বলেছেন, সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার দাবি জানান তারা।

এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বিষয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে কোনো অগ্রগতিও নেই, আগের অবস্থাতেই আছে সবকিছু। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলেছি, কোটার বিষয়ে আগে যে কমিটি হয়েছিল, সেটি আগামীতে কীভাবে কাজ করবে তার বিস্তারিত জানাতে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের ঘোষিত ডেডলাইন গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কি না সেটি দেখার জন্য আমরা গতকাল সারাদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার চরম অভাব দেখতে পেয়েছি। এ কারণে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। পরবর্তী কর্মসূচি কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (সোমবার) রাতে আমরা বসে কর্মসূচি ঠিক করে কাল (মঙ্গলবার) আপনাদের জানাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কবে, কখন, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে জেলা কোটা বিলুপ্ত করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। এটি বাতিল হলে দেশের অনগ্রসর নাগরিকদের সমতাভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণ্ন হবে। ফলে প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতি একেবারে তুলে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার একটি সুষ্ঠু সমাধান দরকার। আর এ বিষয়ে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, সে কারণে কোনো মন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলছেন না। এখন প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই বাস্তবায়ন হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কোটাব্যবস্থা বাতিল করেছেন। আবার তিনি প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে পৃথক ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। তাই তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তবে একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, কোটা চালু করার সময় কোনো আইন বা বিধান দিয়ে তা করা হয়নি। সময় সময় প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ৩৩, ৩৫ ও ৩৬তম বিসিএসসহ বিভিন্ন সময় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কোটা শিথিলও করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সেটা আমাদের কাছে এলে ব্যবস্থা নিতে পারব এবং কমিটি নিয়ে বসব। কমিটি গঠন নিয়ে কোনো টাইমফ্রেম নির্ধারণ করেছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, না, তা করা হয়নি। আশা করছি দ্রুতই হবে। প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন বিদেশে ছিলেন, এজন্য কাজ বেশি এগোয়নি। তিনি এসেছেন, দেখা যাক কী হয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন কি না বা গতকাল মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, সংস্কার কিংবা বাতিল কোনো বিষয়েই প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেননি।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা রয়েছে ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেওয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’ কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো আদেশ জারি করা না হওয়ায় ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন। অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, নানকের কাছ থেকে এই আশ্বাস পেয়ে ওই বৈঠকেই ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

গত ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর ২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়েও কথা বলেন তিনি। জানান, ‘নাতির বয়সী’ ছাত্ররা যেহেতু দাবি করছে, তাই তিনি তা মেনে নিয়েছেন। এ নিয়ে আর নতুন করে ভাবনার কিছু নেই। তবু প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে গতকাল কোটার বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয় কি না, এ নিয়ে কৌতূহল ছিল আন্দোলনকারীদের।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১