বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ May ২০১৮

অন্ধজনে দেহ আলো


পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা কোনো বস্তুর রূপ-রস-গন্ধ ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকি। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অন্যতম। যিনি চোখে দেখেন না, তার সামনে সবই অন্ধকার। চোখের আলো না থাকা মানুষজনই জানেন পথচলা কত কঠিন! অন্যের সাহায্য ছাড়া তাদের পথচলা অসম্ভব। আর একলা পথ চলতে গিয়ে পদে পদে খেতে হয় হোঁচট। আমরা এমন একজন  মহীয়সী মহিলার কথা বলতে পারি, যিনি এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জগতে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হন। সেই মহীয়সী মহিলার নাম হেলেন কিলার। ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা তাসকাম্বিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাক, শ্রবণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মহিলা হেলেন কিলার। তিনি জন্মের পর পরই বাক, শ্রবণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও অসহায়ত্বকে জয় করে মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি হাতের আঙুল দিয়ে দাগ কেটে কেটে লেখা, ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়াসহ শব্দ ও বাক্য উচ্চারণ পর্যন্ত শিখে ফেলেন। এতে তার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন অবাক হন।

১৪ বছর বয়সে হেলেন আমেরিকার নিউইয়র্কের ‘রাইট হুমাসন’ স্কুলে ভর্তি হন। এখানে বিশ্ববিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯০৪ সালে হেলেন র্যাডক্লিফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। নিজের প্রতিবন্ধকতার কথা উপলব্ধি করে তিনি বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন নতুন নতুন স্কুল এবং সমিতি। এই মহীয়সী নারীর উদ্যোগে পৃথিবীর নানা দেশে গড়ে ওঠে অন্ধজনদের চোখে আলোদানের প্রতিষ্ঠান।              

কোনো কোনো শিশু জন্মান্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে, আবার অনেকে দুর্ঘটনায়, ডায়াবেটিস জাতীয় রোগব্যাধির কারণে অন্ধত্ব বরণ করে। অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবে বয়স বৃদ্ধিজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পেতে মানুষ একসময় অন্ধত্ববরণ করে। যথাসময়ে চোখের চিকিৎসা গ্রহণ না করলে একসময় অন্ধত্ববরণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করলে আশু চিকিৎসা গ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র লোকদের চোখের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। চোখে ছানি, নেত্রনালির ক্ষত ও চোখের ভেতর মাংস বৃদ্ধি সমস্যার জন্য অপারেশন করানো ব্যয়সাধ্য ব্যাপার হওয়ায় তাদের বাধ্য হয়ে অন্ধত্বকে মেনে নিতে হয়।

আমাদের দেশে সরকারি চক্ষু হাসপাতালের সঙ্গে বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালসহ বেশকিছু এনজিও মানুষের অন্ধত্ব দূর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের আই কেয়ার, সন্ধানী, রোটারি ক্লাব, লায়নস ক্লাব প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা যায়। সরকারের আই কেয়ার বিভাগের উদ্যোগে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে বিভিন্ন স্থানে আই কেয়ার ক্যাম্প স্থাপন করে। এতদসত্ত্বেও বিনা খরচায় চোখের ছানি, নেত্রনালির ক্ষত, চোখের মাংস বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল- এটা স্বীকার করতেই হবে।

গত বছর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০০ চক্ষুরোগীকে নিখরচায় চোখের ছানি, নেত্রনালির ক্ষত ইত্যাদি রোগের অপারেশন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই কাজটি তারা এখনো করে চলেছে।

দেশের চক্ষু হাসপাতালগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে আই ক্যাম্প স্থাপন করে দেশের বিপুলসংখ্যক চক্ষুরোগীর অন্ধত্ব নিরাময় করা সম্ভব। এনজিও পরিচালিত চক্ষু হাসপাতালগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে আই ক্যাম্প স্থাপন করে গরিব লোকদের অন্ধত্ব দূরীকরণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

 

মনোজিৎকুমার দাস

সাহিত্যিক

email : monojitdas1947@gmail.com


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১