আপডেট : ৩০ April ২০১৮
বহুমুখী কর্মসৃষ্টি, কর্মসংস্থানের মানোন্নয়ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক। এ তিন খাতে নয়টি শর্ত মেনে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিতে চায় সংস্থাটি। এসব শর্তের আওতায় বেশ কিছু বিধিবিধান প্রণয়ন, কিছু কর্তৃপক্ষ গঠন, উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে কিছু ক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিস, বেসরকারি কর্মীদের বীমা ও পেনশন সুবিধা চালু করা হবে। আর শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে সংস্থাটি থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিন বছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৫ কোটি ডলার ছাড় করতে গত মাসে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডি। এ প্রস্তাবের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সংস্থাটি ঢাকায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতিবছর ২৫ কোটি ডলার করে তিন বছরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ ছাড় করবে সংস্থাটি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ব্যক্তি খাতে কর্মদক্ষতা বাড়াতে অর্থায়নের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। মূলত বাজেট সহায়তা হিসেবে এ অর্থ চাইছে সরকার। সুনির্দিষ্ট কোনো নির্মাণ বা ক্রয় কার্যক্রমে এ অর্থ ব্যয় করা হবে না। কিছু খাত সংস্কারে শর্ত সাপেক্ষে এ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। তবে কী খাতে কী ধরনের সংস্কার হবে এ বিষয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে সরকার এ অর্থ পাবে। সূত্র জানায়, বাজেট সহায়তা ছাড় করতে দ্রুত বহুমুখী কর্মসৃজনে তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ যৌক্তিকীকরণ ও শুল্ক সুবিধার আধুনিকায়নের শর্ত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর আওতায় নতুন কাস্টমস আইন ও বিধি প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় একক বাতায়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন এবং একটি সমন্বিত ও স্বয়ংক্রিয় ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। তা ছাড়া আর্থিক নিরাপদ লেনদেনবিষয়ক আইন প্রণয়ন, স্থানান্তরযোগ্য জামানতের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি, দেওয়ানি কার্যবিধির অধীনে মধ্যস্থতাবিষয়ক বিধি জারি, সালিশ আইন ও অর্থঋণ আদালতের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। মানসম্মত চাকরির সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে পেনশনের আওতা সম্প্রসারণ করা হবে। সমন্বিত পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন ও সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পোশাক শিল্পে কর্মকালীন ঝুঁকিবীমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই, ফলাফলের ভিত্তিতে এ ধরনের বীমা প্রবর্তনের আইনি কাঠামো প্রণয়ন করা হবে। তা ছাড়া শ্রম আইন প্রয়োগে সক্ষমতা বৃদ্ধি, কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন অনলাইনে প্রকাশ, শ্রম আইনের আওতায় চুক্তি ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মে প্রবেশ নিশ্চিত করতে অভিবাসীদের ওয়েজ আর্নার্স অয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন, নারী কর্মসংস্থানের অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন সমন্বয়ের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন ও বেসরকারি খাতের অর্থায়নে শিল্প দক্ষতা কাউন্সিলগুলো কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে ইআরডির সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, বাজেট সহায়তা নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের বিপরীতে দেওয়া হয় না। এ সহায়তার অর্থ সরাসরি সরকারের ট্রেজারিতে জমা হয়। তারপর সেখান থেকে সরকার প্রয়োজনমতো গুরুত্ব বুঝে যেকোনো প্রকল্পে ব্যয় করতে পারে। তবে এ সহায়তায় বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত মেনেই অর্থ ব্যয় করতে হয়। ইআরডি সূত্র জানায়, এর আগে সবশেষ ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাজেট সহায়তা হিসেবে ৬০ কোটি ডলার দিয়েছিল। ২০০৩ সালে বাজেট সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল সামান্য অর্থ। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ছাড়াও বিভিন্ন সময় বেশ কিছু সংস্থা বাজেট সহায়তা দেয় সরকারকে। তবে এসব সহায়তার পরিমাণ খুব কম। জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা পেতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে সরকার। সংস্থাটির বেশ কিছু শর্ত মেনে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়। ওই বছরের ১০-১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের ব্যাংক ফান্ড সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সম্মতিও জানায় বিশ্বব্যাংক। তবে এ জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার সাধনের প্রস্তাব ছিল। সে অর্থবছর বাজেট সহায়তা আর মেলেনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১