বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ April ২০১৮

কৃষি স্থাপত্যশৈলীর বিকাশ হলে শহুরেদের খাবার ফলবে শহরেই


প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে সম্রাট নেবুচাদনেজার সেই খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে তৈরি করেন ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান। ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞী ও সাবেক মিডিয়ান সাম্রাজ্যের রাজকন্যা আমিতিস বড় হন পাহাড়ি পরিবেশে, প্রকৃতির মধ্যে। কিন্তু বিয়ের পর উষর ব্যাবিলনে তার মন উসখুস করত গাছ আর ফুল-ফলের জন্য। সম্রাট আমিতিসের মনের কথা বুঝতে পেরে তাকে খুশি করতে প্রাসাদের ওপরই বিশাল পাহাড়ের আদল তৈরি করেন নেবুচাদনেজার। সেই কৃত্রিম পাহাড়ের ধাপে ধাপে রোপণ করা হয় নানা জাতের গাছ। কয়েক বছরের মধ্যেই ফুলে-ফলে ভরে ওঠে সেই ঝুলন্ত উদ্যান বা ছাদবাগান। ছাদের উপরে ওঠার জন্য ছিল পেঁচানো সিঁড়ি। ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদী থেকে একদম উপর পর্যন্ত পানি উঠানোর জন্য সিঁড়ির পাশ দিয়ে ছিল মোটা নল।

প্রিয়তমাকে খুশি করতে সেই আড়াই হাজারের বেশি বছর আগেই এখনকার নগরবাগান বা নগর কৃষি ধারণার বাস্তবায়ন করেন তিনি। কিন্তু এখনকার পৃথিবীর মানুষ নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থেই নগর কৃষিতে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে। শহুরে দালানের একটুকরো বারান্দায় বা এক চিলতে ছাদে অনেকেই করছেন ফুল, ফল, সবজি এমনকি ধানের চাষও। চরমভাবাপন্ন অনেক দেশেই গ্রিন হাউজে হচ্ছে সবজি ও ফসলের চাষ।

আসলে দিন দিন আবাদি জমি যেভাবে কমেছে তাতে ভবিষ্যতে চাহিদামতো খাবার উৎপাদনের জন্য আর জমি থাকবে না। গবেষকদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই নগর এলাকায় বাস করবে। আর সেই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়বে আরো ৩০০ কোটির বেশি।

এ অবস্থায় গবেষকরা বলছেন ‘বহুতল জমিই’ হতে পারে এই সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ। কিন্তু বহুতল জমি আবার কী? গবেষকরা এই ‘বহুতল জমি’ ধারণাটির পুরোপুরি বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছেন। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মতো আস্ত দালানকেই ফসলি জমিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় আছেন তারা। কৃষিজ জ্ঞান, আধুনিক প্রযুক্তি আর স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে তারা তৈরি করছেন এমন বহুতল জমি। আর এই সমন্বিত ধারণাটির নাম দিয়েছেন অ্যাগ্রিটেকচার বা কৃষি স্থাপত্যশৈলী।

অ্যাগ্রিটেকচার বা কৃষি স্থাপত্যশৈলীর আসলে বাস্তব রূপ দিচ্ছে প্লান্টাগন ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত কম জমি, পানি, শক্তি ও কীটনাশকের সাশ্রয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল ফলানো নিয়ে কাজ করে।

যদিও ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মতো এই আধুনিক বহুতল ফসলি জমি উন্মুক্ত হবে না। সাবেক গ্রিন হাউজ ধারণারই সম্প্রসারিত ধারণা এটি। সুইডিসদের ঘরের ভেতর গাছ লাগানোর জন্য আইকা যে প্রযুক্তিতে কাজ করে প্লান্টাগনও সেই প্রযুক্তির অনুকরণেই নকশা করে তাদের এই বহুতল জমির।

গবেষকদের আশা, নগরবাসীর চাহিদামতো খাবার নগরেই উৎপাদন করতে পারবে এই কৃষি স্থাপত্যশৈলী। সেই সঙ্গে পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর এই প্রযুক্তিটি বাস্তবায়ন করা গেলে কম পরিবহন ব্যয়ে ভোক্তাদের সরাসরি পৌঁছে দেওয়া যাবে খাবার। ফলে বাজার থেকে বিলোপ হবে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবস্থাও।

প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি এমন একটি ১৬ তলা দালানের নকশা করেছে যার ভেতরেই চাষ হবে সবজি ও ফসলের। প্রচলিত কৃষিজমির মতোই সেখানে ব্যাপক পরিমাণে ফসল ফলানো যাবে। প্লান্টাগন নামে এ ধরনের বহুতল একটি সবুজ দালান থেকে বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ পাউন্ড খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে যাতে পূরণ হবে কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষের খাদ্য চাহিদা।

এ ছাড়া প্রকল্পটিতে ফসল ফলাতে বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ গ্যালন পানির সাশ্রয় হবে। আর মুক্তি মিলবে মোট ২০ লাখ মাইল পরিবহনের ঝামেলা থেকে।

এই দৈত্যাকার গ্রিন হাইজের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া অক্সিজেন আশপাশের অফিস বা বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা যাবে, বিপরীতক্রমে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ডাই-অক্সাইডের জোগান দেবে ওইসব অফিস বা বাসাবাড়ি।

শুধু তাই নয়, প্লান্টাগন মডেলের এসব কাচ বাড়ির দেয়ালে থাকবে উন্নত প্রযুক্তির সৌর কোষ বা সোলার প্যানেল, যা থেকে পাওয়া বিদ্যুতে ভবনটির প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও সম্ভব হবে।

প্লান্টাগন ইন্টারন্যাশনালের আশা, এই কৃষি স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে পরিবেশের অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, স্টকহোমে তাদের প্রথম প্রকল্পটি শুরু হলে বিশ্বব্যাপী এই ধারণা ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় দরকার হবে না।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১