বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ April ২০১৮

মহাবিশ্ব সুশৃঙ্খল থাকার পাঁচ বল


মহাবিশ্বের সৃষ্টি, সম্প্রসারণ ও গ্রহ-নক্ষত্রের বিন্যাস আমাদের অবাক করে। আমাদের অবাক করে মহাশূন্যে ভারসাম্য রেখে এসব গ্রহ-নক্ষত্রের টিকে থাকা। তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা এখন জেনে গেছি প্রকৃতিতে বিদ্যমান কিছু বলের কারণেই সুশৃঙ্খলভাবে টিকে আছে আমাদের মহাবিশ্ব।

এখন প্রশ্ন হতে পারে এই মৌলিক বল কী? তবে এর জবাব পাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার বল কী?

বল হলো এমন একটি বাহ্যিক প্রভাব যা কোনো বস্তুর গতির, দিকের বা আকৃতিগত পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম। বল সম্পর্কে একটি সহজাত ধারণা হলো টানা বা ঠেলা যা কোনো ভর যুক্ত বস্তুর বেগের পরিবর্তন ঘটায়। এর মাধ্যমে স্থির বস্তু গতি লাভ করতে পারে বা গতিশীল বস্তুর বেগের পরিবর্তন ঘটতে পারে এমনকি স্থিতিশীলও হতে পারে।

আর মৌলিক বল হচ্ছে যে বল মূল বা স্বাধীন বল, যা অন্য কোনো বল থেকে উৎপন্ন হয় না বা অন্য কোনো বলের রূপও না বরং অন্যান্য বল এসব বলের রূপান্তর মাত্র, তাদেরকে মৌলিক বল বলে।

প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বলদুর্বলতার অনুক্রমে সাজালে আমরা পাই- মহাকর্ষ বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল, তাড়িত চৌম্বক বল, সবল নিউক্লিয় বল ও পঞ্চম বল। এতদিন আমরা জানতাম মহাবিশ্বের নিপুণ কাঠামো টিকে আছে চারটি মৌলিক বলের কল্যাণে। কিন্তু গত বছর হাঙ্গেরির এক দল পদার্থবিদ সর্বপ্রথম সম্ভাব্য নতুন আরেকটি (পঞ্চম) মৌলিক বলের প্রমাণ পান। এই বলটির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের সমাধান হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার রহস্যের সমাধানেরও ইঙ্গিত।

মহাকর্ষ বল

মহাকর্ষের কারণে একটা বস্তু আরেকটা টানে, যদিও কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্বের মাধ্যমে এই বল সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। প্রায় সকল ভরযুক্ত কণিকার ওপর এর কমবেশি প্রভাব আছে। খুবই দুর্বল এই বল বহনকারী কণিকা গ্রাভিটনের অস্তিত্বের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। মহাকর্ষ বলের দরুনই আমরা ওজন অনুভব করে থাকি। বলাবাহুল্য, প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের মাঝে এই মহাকর্ষ বলই সবচেয়ে দুর্বলতম।

দুর্বল নিউক্লিয় বল

আমরা জানি প্রকৃতিতে কিছু মৌলিক কণিকা আছে (পারমাণবিক ভর ৮২ এর চেয়ে বেশি) যাদের নিউক্লিয়াস স্বতস্ফূর্তভাবে ভেঙে যায়। যা তেজস্ক্রিয়তা নামে পরিচিত এবং এসব নিউক্লিয়াসকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস। ভাঙনের সময় এসব নিউক্লিয়াস কিছু রশ্মি বিকিরণ করে যারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত। ১৮৯৯ সালে রাদারফোর্ড এবং ভিলার্ড বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে বলেন, এরা হলো ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট আলফা, ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট বিটা এবং চার্জহীন গামা। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন কিছু পরিমাণ শক্তিও নির্গত হয় যা বিটা কণার গতিশক্তি অপেক্ষা সামান্য বেশি। এখন প্রশ্ন আসে, যদি বিটা কণা এ শক্তির সামান্য অংশ বহন করে থাকে তবে বাকি শক্তির উৎস কী? ১৯৩০ সালে ডব্লিউ পাউলি প্রস্তাব করেন যে অবশিষ্ট শক্তি বহন করে আরেক ধরনের কণিকা যা কিনা বিটা কণার সঙ্গেই নির্গত হয়। এই কণাকে বলা হয় নিউট্রিনো। এই বিটা কণা এবং নিউট্রিনো কণার ফলেই সৃষ্টি হয় দুর্বল নিউক্লীয় বলের।

 

তড়িৎচৌম্বক বল

ফোটন হচ্ছে এর বহনকারী কণিকা তার মানে আলো, এবং ক্রিয়াশীল যেকোনো তড়িৎচার্জযুক্ত কণিকার ওপর দুটি আহিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের ওপর যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল প্রয়োগ করে, তাকে তড়িৎচৌম্বক বল বলে। এই বল ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের সঙ্গে আবদ্ধ করে পরমাণু তৈরি করে। এই বলেরও পাল্লা অসপন্মপপপীম আর আপেক্ষিক সবলতা ১০৩৯।

সবল নিউক্লিয় বল

আমরা জানি একটি পরমাণু কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস চার্জধারী কণিকা ও চার্জ নিরপেক্ষ কণিকা নিউট্রন সমন্বয়ে গঠিত। নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে প্রোটন ও নিউট্রনগুলোকে যে বল ধরে রেখে নিউক্লিয়াসটিকে স্থিতিশীলতা দান করে সেই প্রকৃতির বলই সবল নিউক্লিয় বল নামে অভিহিত। এটি একটি কেন্দ্রীয় প্রকৃতির বল এবং প্রকৃতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। এটি চার্জ অনপেক্ষ, অর্থাৎ দুটি প্রোটনের মধ্যে, দুটি নিউট্রনের মধ্যে, আবার একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রনের মধ্যে সমভাবে ক্রিয়াশীল। এটি মূলত আকর্ষণধর্মী হলেও একটি বিশেষ দূরত্বের কমে বিকর্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এর প্রয়োজন দেখা দেয় নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের কারণে। সবল নিউক্লিয় বল মহাকর্ষ বলের প্রায় 10¼38 গুণ।

টটট

১৯৮৬ সালে মৌলিক চারটি বলের বাইরে যে আরেকটি বল আছে তার যে ধারণা পাওয়া যায় একটা এক্সপেরিমেন্ট থেকে। তখনকার এক্সপেরিমেন্টের ম্যাথমেটিক্যাল মডেল নির্দেশ করে যে, পঞ্চম মৌলিক বল থাকলে সেটা গ্রাভিটির সঙ্গে তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের একীভূতকরণে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয়, ধারণা করা হয় যদি কোনো পঞ্চম বল হতেই হয় সেটা হতে হবে সুপারচার্জড এবং এটার যে আচার আচরণ তা দিয়ে ডার্ক এনার্জির ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

তবে হাঙ্গেরিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের কয়েকজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট ২০১৫ সালে ডার্ক ফোটনের সন্ধানে গবেষণাটি করেছিলেন। ডার্ক ফোটন হলো এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পার্টিকেল যা ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে ইন্টারেক্ট করে। তারা বিরিলিয়ামের রেডিওঅ্যাক্টিভ ডিকেতে একটি এনোমালি বা বিশৃঙ্খলা দেখতে পান। এই বিশৃঙ্খলাটি ইলেক্ট্রনের চেয়ে ৩০ গুণ ভারি একটি নতুন পার্টিকেলকে নির্দেশ করে।

এরপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকি এর গবেষকগণ একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছেন। তারা বলেছেন, এই পার্টিকেলটি আসলে একটি ফোর্স কেরিয়ার, ঠিক যেমন ফোটন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স বহন করে। এই নতুন ‘এক্স বোজন’ একটি নতুন রহস্যময় পঞ্চম বল বহন করতে পারে যা কেবলমাত্র ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে ইন্টারেক্ট করবে।

নতুন মৌলিক বলটি সম্পর্কে এখনই শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। অনেক সময়ই এমন হয় যে তথ্য-উপাত্তকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে না পারার কারণে ভুল জিনিসকে প্রমাণিত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তবে মৌলিক বল খুঁজে পাওয়ার এ ব্যাপারটি সেরকম নয় বলেই মনে হয়। অন্তত এর ভাবভঙ্গি দেখে তাই মনে হচ্ছে। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত কোনো কিছুর সরাসরি বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। তাই আমরা চেয়ে থাকতে পারি নতুন কিছুর আশায়।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১