আপডেট : ০৬ April ২০১৮
যাত্রীসেবার গতি দ্রুততর করতে বাংলাদেশ রেলবহরে ২০১৩ সালে যুক্ত করা হয় ডেমু (ডিজেল ইলেকট্রিক্যাল মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন। রেলমন্ত্রী ওই বছরের ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। পর্যায়ক্রমে ২০ সেট ডেমু ট্রেন যুক্ত করা হয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে। ওই সময় যুক্তি দেখানো হয়েছিল, এতে আয়ও বাড়বে সংস্থার। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে একসঙ্গে কেনা ২০ সেট ট্রেনে বছরে কাগুজে হিসাবে আয় দেখানো হয় ১০৪ কোটি টাকা। বাস্তব চিত্র উল্টো। চালুর পর পাঁচ বছরে ডেমু ট্রেন থেকে আয় আসে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি। অন্যদিকে ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। নিট লোকসান দাঁড়ায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। রেলওয়ে বিভাগের তথ্যমতে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০ সেট ডেমুর ১১ সেট এখন অচল হয়ে পড়েছে। অচল এসব ট্রেন সচল রাখার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই বাংলাদেশ রেলওয়ের। যেগুলো চলছে সেগুলো সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় প্রকৌশলীরা। এতে ডেমু ট্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত খোদ রেলওয়ে। সব মিলিয়ে ডেমু ট্রেন প্রকল্প এখন বাংলাদেশ রেলওয়ের বোঝা। রেলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ডেমু ট্রেন মূলত শীতপ্রধান দেশ ও স্বল্পদূরত্বে যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। দ্রুত ও হালকা যান হিসেবে বিদেশে জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে আমদানি করা ডেমু ট্রেনগুলো প্রযুক্তিগত দুর্বল ও কাঠামো খুবই হালকা প্রকৃতির। ফলে পথিমধ্যে প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনগুলো মেরামতে বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ না থাকা এবং স্পেয়ার পার্টসের তীব্র সঙ্কটে দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে ১১ সেট ডেমু ট্রেন। মাত্র পাঁচ বছর ব্যবহারেই এ ট্রেনগুলো না করা যাচ্ছে বাতিল ঘোষণা, আবার ট্রেনগুলো দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না নিয়মিত যাত্রীসেবা। শুরু থেকে এই ডেমু ট্রেন নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দেয়। দাম, রক্ষণাবেক্ষণে অনভিজ্ঞতা, স্থানীয় আবহাওয়ায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। সব আলোচনা-সমালোচনা উপেক্ষা করে অনড় থাকে রেলওয়ে বিভাগ। ডেমু সার্ভিস চালুর শুরুতেই যাত্রীরা এগুলোতে ভ্রমণে অনাগ্রহী হয়। ট্রেনগুলোর জানালা ওপরের দিকে থাকার পাশাপাশি এসি সুবিধা না থাকায় গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে যাত্রীরা। এসব ত্রুটি সারিয়ে তোলেন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা। নিজস্ব পদ্ধতিতে ডেমু ট্রেনে বৈদ্যুতিক পাখা লাগানোর পাশাপাশি কাঠামোগত উন্নয়ন করেন তারা। রেলওয়ে সূত্র মতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত ১৮ সেট ডেমুর মধ্যে ৯ সেটই অচল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। চার সেট ডেমু ট্রেন (সেট নম্বর ১, ১০, ১৭ ও ১৯) পূর্বাঞ্চলে পাহাড়তলী লোকোশেডে অকেজো। পূর্বাঞ্চলের অন্য চার সেট ডেমু ট্রেন (সেট নম্বর ২, ৩, ৭ ও ৮) ঢাকা লোকোশেডে। আর ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লা সদর রসুলপুর এলাকায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে একটি ডেমু ট্রেন (সেট নম্বর ৫) লাকসাম লোকোশেডে পড়ে আছে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে পার্বতীপুর লোকোশেডে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে ২ সেট ডেমু (সেট নম্বর ১৩ ও ১৪)। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, বেশিরভাগ ডেমু দুর্ঘটনার কারণে নষ্ট হয়েছে। ট্রেনগুলো মেরামতের জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ নেই। প্রাথমিকভাবে পাহাড়তলী ডিজেল শপে ডেমু ট্রেনগুলো মেরামত করা হবে। পরবর্তীতে ডেমুর জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ করতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. শামসুজ্জামান বলেন, ডেমু মেরামতে স্পেয়ার পার্টস সঙ্কটই সবচেয়ে তীব্র। ইতোমধ্যে ডেমু ট্রেনের পার্টস সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পার্টস সংগ্রহ হলে আমাদের প্রকৌশলীরাই নিজস্ব প্রযুক্তিতে ট্রেনগুলো মেরামত করতে সক্ষম হবেন। তিনি জানান, প্রতি পাঁচ বছর পরপর ইঞ্জিন ওভারহোলিং করতে হয়। ডেমুগুলোর পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় অকেজো হওয়া ডেমু পড়ে আছে ওয়ার্কশপে। রেলওয়ের বিভিন্ন লোকোশেডে পড়ে থাকা ডেমু ট্রেন মেরামতে শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১