বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ February ২০২১

বিলাসিতা মুমিনের জন্য নয়


মানুষ আরামপ্রিয়। সবাই চায় একটু বিলাসিতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে রয়েছে মুমিনের উত্তম আদর্শ। তাই আমাদের জানতে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনচরিত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত আবু উমামা আল হারেছী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একসময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ তার কাছে দুনিয়া নিয়ে আলোচনা করলেন। তখন তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি শুনছ না? তোমরা কি শুনছ না? নিঃসন্দেহে ‘বাযাযাহ’ হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, নিঃসন্দেহে ‘বাযাযাহ’ হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। বর্ণনাকারী বলেন, এ [বাযাযাহ] দ্বারা তিনি ‘তাকাহহুল’ বুঝিয়েছেন। (আবু দাউদ) ইমাম নবভী (রহ.) বলেন, ভাষাবিদরা বলেছেন, তাকাহহুল অর্থ হচ্ছে সাধাসিধে চলা এবং আড়ম্বরপূর্ণ পোশাক পরিহার করা।

মানুষ কোনো স্বাধীন সত্তা নয়। সে এক পরাধীন প্রাণী। তার একজন মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টা ও প্রভু রয়েছেন, যিনি তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার আনুগত্যের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। তাই মানুষের জন্য পৃথিবী হলো একটি পরীক্ষার হলস্বরূপ। অতএব, এতে তাকে সর্বক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনোক্রমেই তার দ্বারা বিন্দু পরিমাণও প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ না ঘটে। মানুষকে তার প্রভু মহান আল্লাহ মৌলিকভাবে দুটি কাজেরই নির্দেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে প্রথমটির সম্পর্ক তার এবং মানুষের সাথে এবং দ্বিতীয়টির সম্পর্ক মানুষের পরস্পরে। গবেষকরা প্রথমটিকে আল্লাহর হক এবং দ্বিতীয়টিকে বান্দার হক বলে অভিহিত করেছেন। তবে গুরুত্বের দিক থেকে আল্লাহর কাছে উভয়টিই সমান। প্রথমটির উদাহরণ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যিকর, নবীর প্রতি দরুদ প্রভৃতি। দ্বিতীয়টির উদাহরণ যেমন জাকাত, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর, অসহায়ের সহায়তা, অভাবগ্রস্তদের দান, বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ প্রভৃতি।

উপরিউক্ত উভয় ধরনের নির্দেশ পালন করতে মানুষকে একদিকে যেমন প্রতিনিয়ত শারীরিক কষ্ট করতে হয়, তেমনি অন্যদিকে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হয়। এ কারণে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসে ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াটাকে মুমিনের জন্য কারাগার বলে অভিহিত করেছেন। এখানে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ‘তিনি দুনিয়াটা মুমিনের জন্য কারাগারের ন্যায়’ না বলে সরাসরি কারাগার বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে, একজন মুমিনের দায়িত্ব কত বড় এবং কত কষ্টকর। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে তিনি মুমিনদেরকে মুসাফির ও পথিকের ন্যায় জীবনযাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা, যদি একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে মুমিনের জীবনযাপন করতে চায়, তাহলে তাকে আড়ম্বর ও বিলাসিতাপূর্ণ জীবন পরিহার করেই চলতে হবে। যদি সে আড়ম্বর ও বিলাসিতাপূর্ণ জীবনের পেছনে দৌড়ায়, তাহলে সে তার উপর অর্পিত আল্লাহর নির্দেশ কখনোই সঠিকভাবে পালন করতে সমর্থ হবে না।

কীভাবে একজন মানুষ দুনিয়াতে সত্যিকারের মুমিন হিসেবে পথ চলবে, তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ পরবর্তী মুমিনদের জন্য নমুনা হিসেবে রেখে গেছেন। তাদের জীবনের প্রতি তাকালে আমরা দেখতে পাই, তাদের সবাই অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর্যুক্ত হাদিসের সাথে তাদের জীবনের বাস্তবতা নিয়ে কিছু ঘটনা জানবো। হজরত উরওয়া থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম হে ভাগ্নে! আমরা একটা নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আরেকটা নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আরেকটা নতুন চাঁদ দেখতাম। এভাবে দু মাসে তিনটা নতুন চাঁদ দেখতাম। অথচ এ দীর্ঘ সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো [স্ত্রীর] ঘরেই চুলা জ্বালানো হতো না। [উরওয়া বলেন] আমি বললাম, ওহে খালা! তাহলে আপনারা জীবনযাপন করতেন কীভাবে? তিনি বললেন, দুটি কালো বস্তু; খেজুর ও পানি দ্বারা। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কয়েকজন আনসার প্রতিবেশী ছিলেন, যাদের কিছু দুগ্ধবতী উটনী ছিল। তারা সেগুলোর দুধ থেকে কিছু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠাতো। আর তিনি তা থেকে আমাদের পান করাতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার তার ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত লাগাতার দু দিন কখনো জবের রুটি তৃপ্তি ভরে খেতে পারেনি।’ (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের সময় তার বর্মটি এক ইয়াহুদির কাছে ত্রিশ ছা যবের বিনিময়ে বন্ধক ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, ‘একসময় হজরত আয়েশা (রা.) আমাদের সামনে একটি চাদর ও একটি মোটা লুঙ্গি এনে বললেন, এ দুইটি পরিহিত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকাল হয়েছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমিই সর্বপ্রথম আরব যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। আর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে অনেক সময় এমন অবস্থায় যুদ্ধ করতাম, আমাদের কাছে বাবলা আর ঝাউ গাছের পাতা ছাড়া আর কোনো খাদ্য ছিল না। ফলে আমাদের কেউ কেউ ছাগলের বিষ্ঠার ন্যায় পায়খানা করতো, যা মিশ্রিত ছিল না।’ (বুখারি ও মুসলিম) মোহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে তার এ কথা বর্ণনা করেছেন, আমি নিজেকে এমন অবস্থায়ও দেখেছি যে, ‘ক্ষুধার তাড়নায় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিম্বার ও আয়েশা (রা.)-এর কক্ষের মাঝখানে পড়ে থাকতাম। তখন কেউ কেউ এসে পাগল মনে করে আমার ঘাড়ে পা রাখতো। অথচ আমার মধ্যে কোনো পাগলামী ছিল না; ছিল ক্ষুধার তীব্রতা।’ (বুখারি)

লেখক :মুফতি উবায়দুল হক খান

মুহাদ্দিস ও সহকারী শিক্ষাসচিব

জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া গাজীপুর


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১