আপডেট : ০৭ January ২০২১
মুফতি আমিরুল ইসলাম লুকমান ঈমান এই পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সম্পদ। ঈমানবিহীন জীবন অন্ধকার জীবন, ঘৃণিত জীবন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ঈমান দ্বারা মর্যাদাবান করেছেন। হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। পরকালের সঞ্চয় ও পাথেয়রূপে যা কিছু অর্জনের প্রয়োজন, এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। জীবনপ্রদীপ স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর অর্জনের কোনো উপায় অবশিষ্ট থাকবে না। বুদ্ধিমান তিনি, যিনি দুনিয়ার জীবন পুরোটাই পাথেয় অর্জনের পেছনে ব্যয় করেছেন। ভীষণরকম গুনাহগার ব্যক্তিও যদি ঈমানসমৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত তিনি একদিন হবেনই। কিন্তু যদি ঈমানহারা অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়, তাহলে কোনোকালেই মুক্তির সনদ লাভের সামান্য সম্বলও তিনি নিয়ে যেতে পারলেন না। পরকালের জীবনে আফসোস-বিলাপ ছাড়া আর কিছুই তার থাকল না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বস্তুত আমি এক আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করে দিলাম, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বহস্তে সামনে পাঠানো কর্মসমূহ প্রত্যক্ষ করবে আর কাফের ব্যক্তি বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম’ (সুরা নাবা : ৪০)! হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, কেয়ামতের দিন সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব, জিন, গৃহপালিত জন্তু ও বন্য জন্তু সবাইকে একত্র করা হবে। জন্তুদের মধ্যে কেউ দুনিয়ায় অন্য জন্তুর ওপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এমনকি কোনো শিংবিশিষ্ট ছাগল কোনো শিংবিহীন ছাগলকে মেরে থাকলে সেদিন তারও প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এই কর্ম সমাপ্ত হলে সব জন্তুকে আদেশ করা হবে, মাটি হয়ে যাও। তখন সব মাটি হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে কাফেররা আক্ষেপ করবে- হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম! এরূপ হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আজাব থেকে বেঁচে যেতাম (মাআরিফুল কোরআন : ১৪৩৩)। অন্যত্র মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যেদিন জাহান্নামকে সামনে আনা হবে, সেদিন মানুষ বুঝতে পারবে; কিন্তু সেই সময় বুঝে আসার কী ফায়েদা? সে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি আমার এ জীবনের জন্য কিছু অগ্রিম পাঠাতাম! সেদিন আল্লাহর সমান শাস্তিদাতা কেউ হবে না’ (সুরা ফজর : ২৩-২৫)। কাফেররা সেদিন বুঝতে পাারবে যে, দুনিয়ায় তার কী করা উচিত ছিল, আর সে কী করেছে। কিন্তু তখন এই বুঝে আসা নিষ্ফল হয়ে যাবে। কেননা পরকাল কর্মজগৎ নয়- প্রতিদান জগৎ। অতঃপর কাফেররা এই অভিলাষ ব্যক্ত করবে যে, হায়! আমি যদি দুনিয়ায় কিছু সৎকর্ম করতাম! কিন্তু কুফর ও শিরকের শাস্তি সামনে এসে যাওয়ার পর এ আকাঙ্ক্ষায় কোনো লাভ নেই। এখন আজাব ও পাকড়াওয়ের সময়। আল্লাহতায়ালার পাকড়াওয়ের মতো কঠিন পাকড়াও কারো হতে পারে না (মাআরিফুল কোরআন : ১৪৫৬)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেদিন জালেম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে আর বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সঙ্গে একই পথ অবলম্বন করতাম! হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল’ (সুরা ফুরকান : ২৭-২৯)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমণ্ডল ওলট-পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসুলের আনুগত্য করতাম’ (সুরা আহজাব : ৬৬)। অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আপনি যদি দেখেন, যখন তাদেরকে দোজখের ওপর দাঁড় করানো হবে! তারা বলবে, কতই না ভালো হতো, যদি আমরা পুনঃ প্রেরিত হতাম! তা হলে আমরা স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করতাম না। এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’ (সুরা আনআম : ২৭)। এই আয়াতে অবিশ্বাসী, অপরাধীদের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, পরকালে যখন তাদের দোজখের কিনারায় দাঁড় করানো হবে এবং তারা কল্পনাতীত ভয়াবহ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা আফসোস প্রকাশ করে বলবে, আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় প্রেরণ করা হলে আমরা পালনকর্তা প্রেরিত নিদর্শনাবলি ও নির্দেশনাবলিকে মিথ্যারোপ করতাম না; বরং এগুলো বিশ্বাস করে ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। পরবর্তী আয়াতে তাদের আফসোসের রহস্য উন্মোচন করে বলা হয়েছে, এরা চিরকালই মিথ্যায় অভ্যস্ত। আসল ব্যাপার হলো, পয়গম্বরের মাধ্যমে যেসব বাস্তব সত্য তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল এবং তারা তা জানা ও চেনা সত্ত্বেও শুধু হঠকারিতা বা লোভলালসার বশবর্তী হয়ে এসব সত্যকে পর্দায় আবৃত রাখার চেষ্টা করত (মাআরিফুল কোরআন : ৩৭৪)। উপরোক্ত আয়াত ও তাফসির থেকে প্রমাণিত হলো, ঈমানবিহীন জিন্দেগির পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ফলে ঈমানের শক্তি ও মাত্রা কীভাবে আমাদের জীবনে পূর্ণতা পায়, সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া অত্যাবশ্যক। সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের পরবর্তী সোনালি প্রজন্ম যেমনভাবে ঈমান হেফাজত ও রক্ষার জন্য সদা সচেষ্ট থেকেছেন, আমাদেরকেও তেমন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে, এমন কোনো কাজ, কথা কখনোই আমাদের থেকে যেন প্রকাশ না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। ঈমানের ভেতর কোনো ধরনের ত্রুটি ও দুর্বলতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ কোনোক্রমেই দেওয়া যাবে না। আল্লাহতায়ালা তৌফিক দান করুন। লেখক : খতিব, আল-মক্কা জামে মসজিদ, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১