বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৬ October ২০২০

কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম


আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদরা বলেন, করোনায় অনেকের আয় কমে গেছে, কেউ বেকার হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে এসেছে নিত্যপণ্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক গতি। এতে করে মধ্যবিত্ত ও ফিক্সড আয়ের লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

দ্রব্যমূল্য উঠানামার পেছনে একটা সিন্ডিকেট সবসময়ই কাজ করে। তবে সরকার সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাচ্ছে-এ কথা ঠিক নয়। গত শুক্রবার এমন মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতার এ মন্তব্য থেকে বোঝা যায় বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজির ব্যাপকতা। তবে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা।

বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা। অন্য সবজির তুলনায় এ দামকে বেশি বলার সুযোগ নেই। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ থেকে আলুর দাম ৫০ টাকায় পৌঁছার কারণ কী তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। বাণিজ্যমন্ত্রী আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা মান্য করার প্রয়োজনবোধ করছে না কেউ। চলতি বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে কিছুটা কম। তবে এ পরিমাণ স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু একদিকে করোনাকাল অন্যদিকে একের পর এক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে অন্য সব সবজি নষ্ট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আলুর ওপর চাপ পড়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আলুর ব্যবহার বেড়েছে অন্তত ১০ ভাগ বেশি। এ বছর বিপুল পরিমাণ আলু বিদেশে বিশেষত নেপালে রপ্তানি হয়েছে।

আলু রপ্তানিতে রপ্তানিকারকদের শতকরা ২০ ভাগ প্রণোদনা দেওয়ায় বিদেশি আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে আলু কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এমুহূর্তে দেশের হিমাগারগুলোয় যে আলু রয়েছে তাতে সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে মজুতকারীরা আলু বিক্রিতে ধীরে চল নীতি গ্রহণ করায় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দাম ভোক্তাদের ক্ষমতার মধ্যে রাখতে টিসিবির উদ্যোগে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে ২৫ টাকা কেজিতে, যা একটি ভালো উদ্যোগ। আলুর দাম বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা না থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এব্যাপারে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের উচিৎ ছিল অন্যসব সবজির ফলন মার খাওয়ায় আলু যে শেষ ভরসা তা বুঝে সময় থাকতে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। দেরিতে হলেও রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিলম্বই যে এনিত্যপণ্যটির দাম রাতারাতি বৃদ্ধি করেছে তা এক বড় সত্য। এ ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিরা ভবিষ্যতে চোখ-কান খোলা রাখবেন এমনটিই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত সমাজ। বিশেষ করে ফিক্সড ইনকাম যাদের তারা খুবই করুণ জীবনযাপন করছেন। পাশাপাশি নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগও চরম আকার ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকের আয়ের উৎস কমে গেছে, কারো আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক চাকরিজীবীর বেতনভাতা কমেও গেছে কিংবা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিটা খুবই অপ্রত্যাশিত এবং উদ্বেগজনক। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টা এমন হয়নি যে চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু বাজারে পণ্য সরবরাহ নেই; বরং বাজারে প্রচুর আলু, পেঁয়াজসহ সবধরনের পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? এর কারণ হলো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এইক্ষেত্রে খুচরা ও পাইকারি উভয় ব্যবসায়ীরাও মিলেই এই কারসাজিটা করছে। ফলে পণ্যর দাম মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, সরকার কোনোভাবেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১/২ জনকে জরিমানা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। কারণ হাজার হাজার লোকের মাঝে ১/২ জনকে জরিমানা করলে কি আসে যায়? বরং জরিমানার পরে তারা আবার দাম বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেয়। ফলে মোবাইল কোর্ট কোনো সমাধান নয়। সমাধান হলো সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করতে হবে। সরকারকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সবধরনের সিন্ডিকেট পরিচালনাকারীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। এই ধরনের কঠোর অবস্থান না নিলে তা কোনো কাজে আসবে না।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে। কারণ আগে যে ট্রাকভাড়া ৫ হাজার টাকা ছিল সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০/১২ হাজার টাকা হয়ে গেছে। দাম বাড়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে আশপাশের এলাকা থেকে কিংবা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার কথা না। কিন্তু বর্তমানে সবস্থানে সবধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে বলা যায় দাম বাড়ার প্রধান কারণ সিন্ডিকেট। তাই সরকারকে যেকোনো মূল্যে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এটা করতে না পারলে করোনার সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি খাদ্যঝুঁকি, পুষ্টিঝুঁকি তথা দারিদ্র্যও বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে কম বেশি সমাজের সবস্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ আলু, পেঁয়াজ কোনো বিলাসিতার পণ্য না।

তিনি বলেন, করোনার কারণে সমাজের অনেক মানুষের আয় কমে গেছে। কেউ পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে কঠোর থেকে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। শুধু ধমক দিয়ে দাম কমানো যাবে না।

মির্জা আজিজ বলেন, বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই, তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? এর কারণ হতে পারে বাজারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ নেই। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১