আপডেট : ১১ October ২০২০
ভুয়া বিল-ভাউচারে গত ৫ বছর ধরে লাখ লাখ টাকা লুটেপুটে খাচ্ছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মোটরযান শাখার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। আরএমপি পুলিশের যত গাড়ি প্রত্যেকটিতেই তার কালো হাতের থাবা রয়েছে। ড্রাইভাররাও ভালো থাকার জন্য দ্বারস্থ হন তারই কাছে। এখানেও ওসি সাইফুল থানা ভেদে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের ঘুষ। সাইফুলের এই অনিয়ম দুর্নীতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন খোদ আরএমপির পুলিশ সদস্যরাই। তার এই কালো থাবা থেকে মুক্তি পেতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা। অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মেট্রোপলিটনে দেড়শতাধিক গাড়ি রয়েছে। এছাড়া রিকুইজিশন করা গাড়ি রয়েছে অর্ধশতাধিকের ওপরে। মোটরযান শাখার তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার কারণে পুরো গাড়িগুলো মেরামত, তেল, মবিল ও চালক সবকিছুই থাকে তার নিয়ন্ত্রণে। এই সুযোগটাই গত ৫ বছর ধরে কাজে লাগাচ্ছেন সাইফুল। সেই সুবাদে গাড়ি-বাড়ি সবই করেছেন তিনি। রাজশাহী শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় সোয়া কোটি টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি তো আছেই। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন গাড়িচালক বলেন, ওসি সাইফুলের প্রতিদিন গড় ইনকাম ১ লাখ টাকার ওপরে। আর এমপির প্রত্যেক গাড়ির জন্য প্রতিদিন তেল বরাদ্দ হয়। গাড়ি প্রতি ৫ লিটার করে বেশি বরাদ্দ লিখে নেন তিনি । প্রায় দুইশ গাড়িতে তেল লাগে। ৫ লিটার করে তেলে ৫০০ টাকা হলে ২০০ গাড়িতে তার আয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি মাসে মবিল বরাদ্দ থাকে। মবিলেও তার আয় আছে। অনেক গাড়িতে মবিল দেওয়ার নামেও লুটপাট করেন তিনি। মবিল না দিয়ে মবিল দেওয়ার ভাউচার বানান। এছাড়া টায়ার, যন্ত্রাংশ কেনা থেকে আসে মোটা অঙ্কের টাকা। এ সবকিছু হিসেব করলে প্রতি মাসে ৩০/৩৫ লাখ টাকা এই খাত থেকেই লুটপাট করেন ওসি সাইফুল। এছাড়া ঘুষ তো রয়েছে। ভালো জায়গায় পোস্টিং দেওয়ার জন্যও ঘুষ নিতেন। মাসোহারা তো আছেই। তিনি বলেন, গাড়ি যেহেতু প্রায় ২শ সেহেতু ড্রাইভারও সেই সংখ্যক। প্রতি মাসে একজন ড্রাইভার সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতেন। এই খাত থেকেও তার প্রতি মাসে ২ লাখের ওপরে আয়। এভাবেই গত ৫ বছরে লুটপাট করে টাকার কুমির বনে গেছেন তিনি। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাইফুল ইসলাম ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন। গত ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোটরযান শাখার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি আরেকটি আদেশ করিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চলমান রাখেন। মোটরযান শাখাতে এই লাভের কারণে তিনি আর এই শাখা ছাড়েননি। ৫ বছর ধরে তিনি এখানেই আছেন। অভিযোগে যে সকল খাতে তার অনিয়ম দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- সরকারি গাড়ির তেল ইস্যু সংক্রান্তে অনিয়ম, লগবই সই, স্ট্যান্ডবাই গাড়ি, মবিল ইস্যু, পোড়া মবিল, গাাড়ির যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত সংক্রান্তে অনিয়ম, এমটি শাখার ড্রাইভারদের পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং এমটি শাখার ড্রাইভারসহ অন্যদের ছুটি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম। নিজে গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত : সরকারি সাদা রঙের ডাবল কেবিনের পিকাপ গাড়িটি তিনি প্রায় সময় ব্যবহার করেন। তার নিজস্ব ক্রয়কৃত মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৬৬৮৯) পুলিশের কাজে ভাড়া দেওয়া থাকলেও গাড়িটি তার পরিবার অধিক সময় ব্যবহার করে। এছাড়া তার আরেকটি একটি মাইক্রোবাস নোহা, অ্যাসকালারের গাড়ি রয়েছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৬৬৮৯। গাড়িটি বগুড়া সদরের মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন। গাড়িটি তিনি সরকারি কাজে আরএমপি’তে পুলিশের নিকট ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। গাড়িটি তিনি সরকারি কাজে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করেন। অত্যন্ত গোপনীয়তায় ব্যবহার করা গাড়িটির তেল ও ভাড়াসহ যাবতীয় সরকারি খরচ নিজেই গ্রহণ করেন। সরকারি কাজে গাড়িটি ব্যবহার হতে তেমন দেখা যায় না। এর বাইরেও তার আরো বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। বাড়ি ও জায়গা ক্রয় : অতি সম্প্রতি তিনি নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা, চণ্ডীপুর ও বুলনপুরে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি বর্তমানে রাজপাড়া থানাধীন ঝাউতলা নামক এলাকায় উদায়ন ডেন্টালের বিপরীতে শুভেচ্ছা নীড়, চণ্ডীপুর, কাজিহাটা, বাসা নং-৬/বি (৬ষ্ঠ তলা), হোল্ডিং নং-৪৫৬, ওয়ার্ড নং-৮, দশতলা ভবনে বর্তমানের এই বাড়িতে তিনি বসবাস করছেন। এই ফ্ল্যাটটি তিনি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। পুলিশ লাইনসের শাপলা গেট হতে ৫০০ গজ পশ্চিমে বুলনপুর ঘোষ পাড়া নামক স্থানে, মন্দিরের পার্শ্বে একটি জায়গা কিনেছেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকার ওপরে এবং তিনি রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন বালিয়া নামক স্থানে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কিনেছেন। অতি সম্প্রতি এগুলো কেনা। এ বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এগুলো তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন। জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে বিভাগীয়ভাবে খোঁজখবর নেওয়া হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১