বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৯ December ২০১৯

অস্বাভাবিক চিকিৎসাব্যয়ে দরিদ্র হচ্ছে মানুষ

সর্বজনীন ও সংহতিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা চাই


অসুখ হলে মানুষের আর কোনো উপায় থাকে না। নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে কাছে যেতেই হয়। কথায় আছে রোগীর কাছে বিধাতার পরই চিকিৎসকের অবস্থান। তার মানে সাধারণ মানুষ অনেকটা অনন্যোপায় হয়েই চিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে হাসপাতাল, ওষুধ কোম্পানি আর চিকিসকদের সিন্ডিকেশনের জাঁতাকলে রোগীরা এখন আতঙ্কগ্রস্ত। অসুখ হলেই সাধারণ মানুষ অজানা আতঙ্কে ভোগেন দুটি কারণে। প্রথমটি হলো, না জানি কোন অসুখ বাসা বাঁধল শরীরে। দ্বিতীয়টি হলো, এবার না জানি কত টাকা খরচা করতে হয় চিকিৎসার পেছনে। এর কারণ হলো, চিকিৎসার খরচ এখন সাধ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জীবনযাপনের সাধারণ খরচ চালাতেই মানুষ এখন হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে চিকিৎসা বণিকদের মাফিয়া সিন্ডিকেটে পড়ে হুহু করে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টারে চলে শুধু টাকা আদায়ের গলাকাটা বাণিজ্য। রোগীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও সেবার নামে অপারেশন থিয়েটারে চলে অমানবিক গোপন বাণিজ্য। টাকা ছাড়া তারা কিছুই বোঝেন না। এছাড়া ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা থেকে কমিশন বাণিজ্য, রোগী ভর্তি, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রাইব, অপারেশন নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাইফ সাপোর্টে পাঠানো, কেবিনে রোগী ধরে রাখাসহ লাশ হস্তান্তর পর্যায়ের নানা ধাপে কমিশন লেনদেন হয়। আর রোগীকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ এক বিবৃতিতে বলেন, স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬০ শতাংশের বেশি যায় ওষুধের পেছন, বেশি দামের ওষুধের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। রোগ শনাক্তের খরচের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বেড়েছে। হাসপাতালে অবস্থানের খরচ ও যাতায়াত খরচও বেড়েছে।  তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের মূল জায়গা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকারের এই কাঠামোগুলো মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার বড় ভিত্তি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কাঠামোগুলোর কোনোটিই নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হতে পারছে না। এক পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি, শুধু মাঠপর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উপযুক্ত মানে কার্যকর করতে পারলে বছরে মানুষের পকেট খরচের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। উপজেলা থেকে রোগীদের জেলা বা বিভাগীয় শহর কিংবা রাজধানীতে ছোটাছুটি অনেকাংশে কমে যাবে; খরচও কমে যাবে, বাড়ির কাছে অনেক সমস্যার সমাধান পাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মানুষের পকেটের ব্যয় বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যের জন্য রাষ্ট্রীয় আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। একথা এখন অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই যে, চিকিৎসার জন্য উত্তম সেবা, সীমিত খরচ, ভালো ডাক্তার, ভেজালমুক্ত ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট আর অতিরিক্ত ওষুধের চাপে অসুস্থ রোগী এবং তার পরিবার যেন হাঁপিয়ে ওঠে। এ অবস্থার পরিত্রাণ দরকার। এ নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি হয় না। আলোচনা হয় না। বিরাট জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ বিষয়ে সরকারের নীরবতাও জনগণের জন্য হতাশার কারণ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষকে ‘আকস্মিক স্বাস্থ্য ব্যয়ের’ চাপ সামলাতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি পরিবার তার মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করে শুধু স্বাস্থ্যের পেছনে। অগ্রাধিকার ঠিক করে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে সংস্থাটি মত দিয়েছে। বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতি চালু করা এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি উপজেলা হেলথ কাঠামো কার্যকর করা গেলে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় কমে আসবে। অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার হাসপাতাল দিচ্ছে, পর্যাপ্ত জনবল দিচ্ছে না। প্রচুর মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠলেও মানসম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা হচ্ছে না। রোগীরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, এক চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্য চিকিৎসকের কাছে দৌড়ায়। এতে খরচ বাড়ে। অসংগতিগুলো দূর করলেই ব্যক্তির খরচ অনেক কমে যাবে।

ওষুধ বিপণন ব্যয় ৬ হাজার কোটি টাকা!

বিদেশ ভ্রমণ বা উপঢৌকন হিসেবে ফ্রিজ-টেলিভিশনই শুধু নয়, কোনো কোনো ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসকদের ফ্ল্যাট-গাড়ির মতো দামি উপহারও দিয়ে থাকে। এসবই তারা করছে ওষুধ বিপণনের প্রয়োজনে। আর বিপণন বাবদ মোট টার্নওভারের ২৯ শতাংশের বেশি ব্যয় করছে কোম্পানিগুলো। দেশে ওষুধের বাজারের আকার এরই মধ্যে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এ হিসাবে শুধু বিপণন বাবদ ওষুধ কোম্পানিগুলো বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে। যদিও ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারে বিধিনিষেধ থাকায় এ কৌশল অবলম্বন করছে তারা। কারণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রচারমাধ্যমে ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় ওষুধের বিজ্ঞাপন বাবদ বিপুল অঙ্কের এ অর্থ ব্যয় কোথায় হয়, সে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর  একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ড. রশীদ-ই-মাহবুব এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপণন ব্যয় কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধের বিপণন নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এ বিতর্ক নিরসনে বিপণন ব্যয়ে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। বাংলাদেশে নৈতিক চর্চা প্রায় অনুপস্থিত। সরকারের উচিত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিপণনের খাতগুলো নজরদারির মাধ্যমে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করা।

চিকিৎসকদের অতি মুনাফালোভী মানসিকতা

এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশিদের ওষুধের জন্য সব থেকে বেশি অর্থ আউট অব পকেট হয় অর্থাৎ পকেট থেকে খরচ হয়। সরকারি সংস্থা হেলথ ইকোনমিক ইউনিটের তথ্যমতে, দেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর দরিদ্র হচ্ছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। এতে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে আক্রান্ত ব্যক্তি, ক্ষতি হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির। রোগী এবং স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অভিযোগ, দেশে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক মানসিকতাই বেশি। যারা স্বাস্থ্যসেবা দেন তাদের বেশিরভাগেরই আচরণ ভালো নয়। চিকিৎসক রোগীর কথা না শুনে আগেই প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলেন। তাছাড়া ভুল চিকিৎসা ও ডায়াগনসিসের অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সিপিআই প্রতিবেদন বলছে, দেশে চিকিৎসার খরচ প্রতি বছর বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে এই খরচ বেড়েছে ২৭ শতাংশেরও বেশি। আর চিকিৎসাসেবার পেছনে মানুষের যে ব্যয়, তার ৬৪ শতাংশই খরচ করতে হয় পকেট থেকে, সরকার থেকে বহন করা হয় এই খরচের মাত্র ২৪ শতাংশ। ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের হিসাবমতে, সার্কভুক্ত দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে এটিই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য ব্যয়। এ কারণেই দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ এ আস্থার সংকট তৈরি করেছে।

অবাক কান্ড, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হলেও দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। ফলে চিকিৎসার জন্য মানুষ বিদেশে ছুটে যায়। বিভিন্ন বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, রোগীর পেছনে সবচেয়ে কম সময় ব্যয় করেন বাংলাদেশের ডাক্তাররা। তারা একজন রোগীর পেছনে গড়ে মাত্র ৪৮ সেকেন্ড সময় দেন। চিকিৎসা সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ৬৭টি দেশের ওপর করা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইডেনের চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা একজন রোগীর পেছনে সবচেয়ে বেশি সময় দেন, ২২ মিনিটের বেশি। বাংলাদেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের চিকিৎসকরা রোগীপ্রতি গড়ে ২.৩ মিনিট, পাকিস্তানের চিকিৎসকরা রোগীপ্রতি গড়ে ১.৩ মিনিট এবং চীনের চিকিৎসকরা রোগীপ্রতি গড়ে ২ মিনিট সময় দেন। আর এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগীপ্রতি গড়ে সাড়ে ৯ মিনিট সময় দেন। চিকিৎসকদের অতি মুনাফালোভী মানসিকতা, কমিশন বাণিজ্য, সিন্ডিকেট করে সরবরাহ নেই বলে দফায় দফায় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি, কারণে-অকারণে নানা ধরনের পরীক্ষা ইত্যাদি এর প্রধান কারণ।  সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেশি। ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশ সাফল্য দেখাচ্ছে; অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকেই স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে ১০০ কোটি মানুষ

একজন দিনমজুরের ৫০০ টাকা উপার্জন করতে দিন পার হয়ে যায়। অথচ সাধারণ একজন ডাক্তারের ভিজিট ৫০০ টাকার নিচে নেই। অনেকের ফি আবার ২০০০ টাকাও। তা ছাড়া রয়েছে নানারকম অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধের বাহার। এজন্য গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার ও অল্পশিক্ষিত ফার্মাসিস্টরা হয়ে উঠছেন নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে প্রত্যেক নাগরিক প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন সেবা পাবে। আর্থিক অসামর্থ্যের কারণে কেউ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না। আবার সেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে কেউ নিঃস্ব হবে না বা তার অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে যাবে না। স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা উন্নত বিশ্বে যাব আর সেদিকেই দেশ এগুচ্ছে। সেখানে যদি অসুস্থতার কারণে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমায় নেমে যায়, তাহলে এই উন্নতির ধারা কমে যাবে। প্রতি বছর সারাবিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে এবং প্রতি বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের হিসাব অনুযায়ী, যে কোনো পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য ৬৭ শতাংশ ব্যয় ব্যবহারকারীর নিজেরই বহন করতে হয়। সরকার ২৬ শতাংশ এবং এনজিও, প্রাইভেট সেক্টর ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অবশিষ্ট ব্যয় বহন করে।

লাগামহীন চিকিৎসকের পরামর্শ ফি

রাজধানীতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এক হাজার টাকা বা তার বেশি নেন রোগী দেখার ফি বাবদ। নামিদামি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাঁরা বসেন তাদের ফি ১২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার বাইরেও অনেক চিকিৎসকই এখন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেন। ফলে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রোগীরা প্রথমেই চিন্তায় পড়ে চিকিৎসকের ফি নিয়ে। ফি বেশি হওয়ায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসকরা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। তাদের ভরসা একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষের পক্ষে কাজ ফেলে দিনের বেলা সরকারি হাসপাতালে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও সেখানে বর্তমানে দালালদের উৎপাত ও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে নানাভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয় রোগীদের।

বন্ধ হোক অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বাণিজ্য

‘যত টেস্ট তত টাকা’, এই কমিশন বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই চলছে একশ্রেণির চিকিৎসকের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। প্রেসক্রিপশনে যত বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকবে, ততই কমিশন পাবেন তিনি। ‘ডাক্তারদের কমিশন ছাড়া সিংহভাগই লাভ’ এ মূলমন্ত্র হূদয়ে ধারণ করে যে কেউ যেখানে-সেখানে ডায়াগনস্টিক বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দেশজুড়ে ডাযাগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ব্যবসার ছড়াছড়ি। বরিশাল থেকে কামাল হোসেন বক্ষব্যাধির চিকিৎসা হাজির হন ধানমন্ডির এক পাঁচ তারকা হাসপাতালে। সেখানে কেবিন নিয়ে টানা দুই দিনের ভাড়া বাবদ আট হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধের পরই কেবল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সামনে পান। অসুস্থতার বর্ণনা শুনেই প্রেসক্রিপশনের নামে ৯ ধরনের টেস্ট (শারীরিক পরীক্ষা) সংক্রান্ত কাগজ দিয়ে জরুরিভাবে ওই হাসপাতাল থেকে তা করানোর নির্দেশ দেন চিকিৎসক। বাধ্য হয়েই কামাল হোসেন তড়িঘড়ি করে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ৯ ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করান।

এ জন্য তার কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। পরদিন যথারীতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার টেস্ট রিপোর্টগুলো দেখে ‘বড় ধরনের কোনো অসুস্থতার আশঙ্কা নেই’ বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয় এবং সামান্য কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবনের পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দেন। ওই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীর এক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে না উঠতেই তার শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। রাতে অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় আত্মীয়স্বজন দ্রুত তাকে গুলশানের অপর একটি অভিজাত হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও সাত ধরনের পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আগের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাগজপত্রের ফাইল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে তুলে দিলে তিনি তা দেখেননি। চিকিৎসক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, অন্য কোনো ল্যাব বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে হবে না। উপায়ন্তরহীন কামাল হোসেন নতুন করে একই ধরনের টেস্ট করান। এবার তার খরচ হয় ৬৫ হাজার ২৫০ টাকা। পরদিন সেসব টেস্ট রিপোর্ট দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ১০ দিন ভর্তি থেকে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন। জটিল-কঠিন কি সাধারণ সব রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে এভাবেই চলছে মহা টেস্ট বাণিজ্য। (সংগৃহিত)


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১