আপডেট : ৩০ November ২০১৯
চিত্রশিল্প হরেক রকমের হয়। শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন। তাই বলে কলার মধ্যে ছবি আঁকা। কলা চিত্রশিল্পে পরিণত করা। এ-ও কি সম্ভব? কি বিশ্বাস হচ্ছে না। এ অসম্ভব চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন স্টেফান ব্রুশে নামের একজন শিল্পী। যিনি খাওয়ার কলাকে নিয়ে গেছেন চিত্রকলার মাধ্যমে। স্টেফান ব্রুশের কাছে কলার পাশাপাশি কলার খোসাই বেশি মূল্যবান। নিজের নেশা এবং পেশার দুটোরই মূল ভিত্তি কলার খোসা। নেদারল্যান্ডসের এই ব্যক্তি ‘বানানা আর্টিস্ট’ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশ নাম করেছেন। স্টেফান ব্রুশে বর্তমানে থাকেন আমস্টারডাম শহরে। চার বছর ধরে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর এক এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময়ে এক মোবাইল ফটো অ্যাপ পরীক্ষা করতে কোনো কিছু একটা বস্তুর খোঁজ করছিলেন। স্টেফান ব্রুশে বলেন, ‘খেয়াল করলাম, বাসা থেকে আনা কলা তখনো খাওয়া হয়নি। মনে হলো, তার ওপর একটা মুখ আঁকলে মন্দ হয় না। আঁকার পর মনে হলো, দেখতে সত্যি ভালো লাগছে। সাধারণ বল পেন দিয়ে আঁচড় টানলে অনায়াসে কলম চালানো যায়।’ সাধারণ কলম দিয়ে তিনি কলার খোসার ওপর ছবি আঁকেন। তারপর ছুরির সাহায্যে কলার খোসার বাকি অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। স্টেফান বলেন, ‘কলার মধ্যে সাদা রং অক্ষত রাখতে খুবই দ্রুত কাটতে হয়। কারণ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ধূসরের প্রলেপ ফুটে ওঠে। প্রথম অংশগুলোর চেহারা খারাপ হওয়ার আগেই তিনি তার সৃষ্টির ছবি তুলে ফেলেন। এরপর তিনি ইন্টারনেটে সেই ছবি পোস্ট করেন।’ ভাবছেন কলাটা তিনি কি করেন? এত কলা কি নষ্ট করে ফেলেন? না, খোসার ওপর আঁকা ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করার পর সেই কলা তিনি খেয়ে ফেলেন। কখনো এমনিতে আবার কখনো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে। এখন পর্যন্ত স্টেফান ব্রুশে আনুমানিক এক হাজার কলার খোসা এঁকেছেন। এর মধ্যে সব কটি তার পছন্দ হয়নি। বেশ কয়েকটি কলার ছবি পোস্ট না করেই শেক তৈরি করে খেয়ে ফেলেছেন। অনেক ছবিই খোসার ওপর মানানসই হয় না। স্টেফান বলেন, ‘কখনো আমি একেবারে ধার পর্যন্ত এঁকে ফেলি। তারপর সেই অংশ কিছুটা কেটে সামনে টেনে আনি। এভাবে আমার ক্যানভাস কিছুটা বড় হয়। তাছাড়া একটির বেশি কলাও ব্যবহার করতে পারি।’ তবে স্টেফানের সবচেয়ে প্রিয় চিত্রকর্ম হচ্ছে প্লেটের ওপর থাকা কলা দিয়ে তৈরি করা মাছের কঙ্কালের ছবিটি। এ ছবিটি আঁকতে গিয়ে ভালোই বিপাকে পড়েন এ শিল্পী। মাছের সামনের অংশ, পেছনের অংশ মেলাতে পারলেও মধ্যের অংশ মেলাতে গিয়ে ভালোই বিপাকে পড়তে হয় তার। পরে আরেকটি কলার থ্রিডি ফরম্যাট নতুন করে সেই ছবিটি তৈরি করেন। এর মধ্যে ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ছুঁয়েছে। ফলে বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানিও তার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। স্টেফান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো আমাকে বিশেষ বানানা আর্ট তৈরি করার অনুরোধ করে। যা তারা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারে। কোনো ইভেন্ট, বাণিজ্য শো অথবা মনোরঞ্জনের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের বুথে আমি কলার ওপর আঁকতে পারি।’ এখন পর্যন্ত শিল্পের জগতে কলার ব্যবহারের কোনো সীমা ছিল বলে মনে হয় না। কখনো প্রতীকী অর্থে, কখনো বিশাল আকারে কলা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্টেফান বলেন, অ্যান্ডি ওয়্যারহোল বা অন্যরা তাকে প্রেরণা জোগাননি। প্রথম দিকে তিনি আপেল ও নাশপাতির ওপরেও আঁকতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কলার নাকি কোনো তুলনা হয় না। স্টেফান বলেন, ‘কখনো আমার অনুগামীরাও কারো মন জয় করতে কলার ওপর কিছু আঁকে। সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’ কলার ওপর ছবি আকা নেহাত সহজ নয় বলে জানান স্টেফান। তিনি বলেন, ‘আমার উপকরণ কলা। আর এটা দিয়েই আমার পুরো ভিউটা বানাতে হবে। এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সময়। কারণ একটি কলা চিত্রকর্ম ফোটাতে খুব অল্প সময়ের প্রয়োজন। এর মধ্যে না আঁকলে কলাটি নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে আমার পুরো ছবি আঁকা বৃথা হয়ে যাবে। তাই সময়ের ব্যাপারটি আমার সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হয়। অন্যান্য যেকোনো চিত্রকলায় সময় কোনো মুখ্য বিষয় নয়। যে কারণে একজন শিল্পী তার মনের মাধুরী মিশিয়ে ছবি আঁকতে পারে। আমি তা পারি না। যা করি সাথে সাথে করতে হয়।’ এত তাড়াতাড়ি কীভাবে কলা দিয়ে ছবি আঁকেন স্টেফান। এর মধ্যে কী বিশেষত্ব আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে এ শিল্পী জানান, ‘আসলে যেদিন আমি কলা দিয়ে ছবি আঁকব, সেদিন সকালে উঠে মার্কেটে যাই। পছন্দমতো সাইজের কলা দেখি যেটির ওপর ছবি আঁকা যায়। সঙ্গে আমি একটা নোটবুক রাখি। কলা বাজার থেকে কেনার পর বাসায় এসে কলার একটি ছবি তুলি। তারপর সেই ছবিটির ওপর ফটোশপের কাজ করি প্রাথমিকভাবে। ডিজাইন করার পর সেটা যদি ভালো লাগে সেই অনুসারে আমি কলার ডিজাইন করি। এভাবেই তৈরি করি।’ এক সপ্তাহে সাতটি কলা কেনেন স্টেফান। শুধু ছবি আঁকার জন্য নয়। কলা খানও এ শিল্পী। মাঝে মাঝে এক সপ্তাহে ১৫টি কলাও কেনেন। তার ছবি আঁকার জন্য হলুদ রঙের কলার দরকার হয়। স্টেফানের কাছে জাপানি কলাশিল্পী আঁকা ইনাজুমা আদর্শ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১