আপডেট : ২৭ November ২০১৯
ধান আবাদে এ বছরও লোকসানের মুখে পড়েছেন যশোরের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আমন ক্ষেতে কারেন্ট পোকা বা বাদামি গাছফড়িংয়ের (বিপিএইচ) আক্রমণের কারণে একদিকে ফলন কমে যাওয়া ও অন্যদিকে ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় কৃষকের বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা গচ্চা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সামনে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে পোকার আক্রমণের বিষয়ে কৃষকের অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে কৃষি বিভাগ। যশোর জেলা ধান উৎপাদনের উদ্বৃত্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরে আবাদের জন্য ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১২৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে জেলার ৮ উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কেটে কৃষক নিরাপদে নিয়ে গেছে। তবে ক্ষেতের ধান বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করে দেখা যাচ্ছে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার মন ধান উৎপাদন কম হচ্ছে। কৃষকরা জানান, ধানক্ষেতে থাকাবস্থায় যখন শিষ গজাতে থাকে তখন কৃষকের ভাষায় কারেন্ট পোকা বা চুষি পোকার আক্রান্ত হয়। এসব পোকা ধানগাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় গাছ মরে শিষ কালো হয়ে যায়। যে কারণে প্রতি বিঘা জমির ধান তিন থেকে চার মণ করে ফলন হচ্ছে। পোকার কারণে একদিকে ফলন বিপর্যয় অন্যদিকে বাজারে ধানের দাম অধোগতির কারণে তারা নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়েছেন। যে কারণে ক্ষেতের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে সামনের বোরো আবাদ করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। জেলার বাঘারপাড়ার শেখের বাতান গ্রামের কৃষক ফুলমিয়া বলেন, চার বিঘা জমিতে তিনি আমন আবাদ করেছিলেন। আমন আবাদ করতে গিয়ে প্রথমেই তিনি পানি সংকটে পড়েন। আমন চাষের ভরা মৌসুমে এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকটা সেচনির্ভর হয়ে পড়েন তারা। যে কারণে ক্ষেতের ধান বাঁচাতে ইঞ্জিন চালিত ও বিদ্যুৎচালিত সেচ দিতে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে আমন আবাদ করলেও শেষ সময়ে পোকার কারণে ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার মণ করে ফলন কম হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে ধান নিয়ে গেলে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সামনে বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তায় আছি। একই কথা বলেন জেলার খাজুরার এলাকার প্রেমচারা গ্রামের শামীম রেজা। তিনি বলেন, সাধারণত আমন আবাদ বৃষ্টির পানি দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। অথচ এবছর আমাদের পুরো মৌসুমে সেচ দিয়ে চাষ করতে হয়েছে। এরপর এখন ধানের ফলন বিপর্যয়ে অনেকটা দিশেহারা আমরা। তিনি বলেন, পোকার আক্রমণ কৃষক প্রথমে বুঝতে পারেনি। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পরই অধিকাংশ আধাপাকা ধানে এ পোকার আক্রমণ হয়। পোকা ধান গাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় কৃষক বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল ধান পেকে উঠছে। এখন কেটে মাড়াই করার পর দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ চিটা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যেখানে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ মণ করে ধান হওয়ার কথা সেখানে ১৬ থেকে ১৭ ধান উৎপাদন হচ্ছে। যে কারণে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। যশোর সদর উপজেলার ইছালী গ্রামের কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, আমাদের মাঠে কারেন্ট পোকার আক্রমণের বিষয়টি স্থানীয় উপসহকারী কৃষি অফিসারকে অবহিত করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন এতে বেশি ক্ষতি হবে না। কিন্তু এখন দেখছি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়েছি। তিনি বলেন, ফলন যাই হোক না কেন, বাজারে যদি ধানের দাম ভালো পেতাম তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। তিনি রোববার খাজুরা হাটে নতুন ধানের মণ ৬৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন ধান পুরোদমে বাজারে ওঠার পর আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তিনি জানান। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেছেন, জেলার কিছু কিছু এলাকায় আমন ধানে পোকার আক্রমণ হয়েছে সত্য তবে সেটি ব্যাপক নয়। গতবারের চেয়ে অনেক কম। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় এ ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে সেখানকার কৃষকদের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে পোকার আক্রমণের বিষয়ে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ ইমদাদ হোসেন। তিনি বলেন, আসলে কারেন্ট পোকা বলতে কিছুই নেই। কিছু কিছু এলাকায় ঝড়ে ধান পড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এ বছর জেলায় নিকট-অতীত যে কোনো সময়ের চেয়ে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে এ কৃষি কর্মকর্তা দাবি করেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১