আপডেট : ২৫ September ২০১৯
কোন খাদ্য কতটুকু নিরাপদ সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছেও। কিছু গবেষণা হলেও সেগুলোর মধ্যে নেই সঠিক সমন্বয়। এ কারণে খাদ্য নিয়ে বারবার বিচ্ছিন্ন তথ্য ও বিভ্রান্তিকর গবেষণার ফলাফল আলোচনায় উঠে আসছে, যা গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের কারণে দারুণ আতঙ্কে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। আর এতে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিসহ খাদ্যসংশ্লিষ্ট খাতগুলো। গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেছেন আলোচকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে দৈনিক বাংলাদেশের খবর আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের খবরের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। সভায় বক্তারা বলেন, আম, পোল্ট্রি, দুধসহ বিভিন্ন খাদ্য নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা তথ্যের কারণে। একসময় শাকসবজিতে ফরমালিন নিয়েও বেশ আতঙ্ক ছিল। কিন্তু পরে গবেষণায় দেখা গেছে সেসবে ফরমালিন নেই। যা ব্যবহার হচ্ছে সেটা ইথিফেন, যা পরিমিত মাত্রায় স্বাস্থ্যসম্মত ও সারা বিশ্বে স্বীকৃত। আবার লেড, ক্যাডমিয়ামের মতো যে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান খাদ্যে পাওয়া গেলেই সেসব খাবার আতঙ্কের সৃষ্টি করে। কিন্তু পরিমিত মাত্রায় ওইসব ক্ষতিকারক উপাদানও শরীরে সহনশীল। আলোচনা সভায় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, পোল্ট্রি খাতে ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে- এমন খবরের কারণে এ খাতে এখন ধস নেমেছে। আমি বলছি না যে সেটা হয়নি। কিন্তু দশমিক শূন্য এক শতাংশে যদি তা হয়, তার জন্য পুরো খাত ধ্বংস হওয়া ঠিক নয়। আমরা এখনো অনেকেই ফার্মের মুরগি খাই না। কিন্তু বিল গেটস থেকে শুরু করে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের সবাই কিন্তু এই মুরগি খাচ্ছেন। কিছুদিন আগে ওঠা দুধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কোনো কিছু প্রচার করার আগে বুঝতে হবে, জানতে হবে। বিজ্ঞানীদের মতামত নিতে হবে, ল্যাব পরীক্ষার ফলাফল জানতে হবে। কোন খাদ্য কতটুকু নিরাপদ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিতে হবে। আবার যারা গবেষণা করছেন তাদের মধ্যেও সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তায় দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়। কারণ সবাই নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কি? আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্নার করা হবে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহারিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বলেন, ওইসব কর্নারে সম্পূর্ণ নিরাপদ খাদ্য মিলবে। জনগণের সচেতনতা বাড়বে। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে অর্গানিক খাদ্যের একটি বড় বাজার তৈরি হবে, যেটা এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এসিআই অ্যাগ্রোলিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. ফাহ আনসারি বলেন, তুলনামূলকভাবে আমাদের দেশের খাবার অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু তারপরও আমরা বিদেশি খাবারে ঝুঁকে পড়ছি। যদিও ওসব কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। তাই এখন আমাদের উচিত নিজেদের শস্য দিয়ে তৈরি খাদ্যের বেশি বেশি প্রমোশন করা। নিরাপদ উপকরণ ও প্রযুক্তি পেলেই শুধু নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব বলে মন্তব্য করে কৃষকদের পক্ষ থেকে মা-মণি কৃষি খামারের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান আলী বলেন, নিরাপদ খাদ্যের জন্য মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকতে হয়। আমাদের মাটি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। এতে রাসায়নিক কীটনাশকে ভর্তি। পানিতেও আর্সেনিক। আপনারা নিরাপদ উপকরণ ও প্রযুক্তি দেন, আমরা আপনাদের নিরাপদ খাদ্য দেবে। কৃষক পারেন না এমন কিছু নেই। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম বলেন, কৃষক যদি ফসলে লাভ পান তবে তিনি অবশ্যই গুণগত বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করবেন। কিন্তু সেটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার কীটনাশকের ব্যবসায়ীরাও দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। এ জন্য প্রয়োজনে কৃষি আইনের শাসন জোরদার করতে হবে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, খাদ্যের দূষণ নিয়ে আমাদের ধারণার অভাব রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্যও ভুল গবেষণার কারণে অনিরাপদ বলা হচ্ছে। এসব বিষয়ে সবার পরিষ্কার ধারণা প্রয়োজন। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য পরিচালক (মৎস্য) ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিয়ে আমাদের জ্ঞানের অভাব খুব বেশি। কাঁচা খাবারে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকারক উপাদান নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু গবেষণা বলছে, ৯৮ শতাংশ ক্ষতিকারক উপাদান রান্নার পড়ে থাকে না। আর ধোয়ার পড়েই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খাবার সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য ডা. মো. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, যখন পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ খাদ্য নির্ভেজাল মেলে আর বাকি ৬ শতাংশ ভেজাল, তখন শুধু ভেজালেরই প্রচারণা হয়। কেউ নিরাপদ খাদ্যের প্রচার করেন না। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. খুরশিদ জাহান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সালেহ আহমেদ। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন। এছাড়াও আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, অ্যাগ্রো প্রসেসর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মুন্সি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক সাহিনুল ইসলাম প্রমুখ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১