আপডেট : ১৬ July ২০১৯
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে শিশুসহ মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার নিহত ছয়জন হলো- উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রুনা বেগম (২৮), মহসিন আলীর মেয়ে রুপা মনি (৮), আয়নাল হকের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (৭), মনসুর আলীর ছেলে সুমন (৮) এবং রাশেদ আলীর মেয়ে রুকু মনি (৮) এবং রৌমারীর কর্ত্তিমারীর সাইফুল ইসলাম (২৫)। খবর ইউএনবির। কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মনজিল হক জানান, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে রৌমারীর কর্ত্তিমারীতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পানিতে পড়ে যান সাইফুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, সোমবার এক প্রতিবন্ধীসহ চারজন মারা যায়। এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামে প্রায় চার লাখ মানুষ বন্যা ও ভাঙনের মুখে পড়েছে। রৌমারীতে বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত কুড়িগ্রামে প্রায় চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ভাঙনে ক্ষতি হয়েছে চার হাজার ৫৩৬ জনের এবং পানিবন্দী রয়েছেন ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৭২ জন। বন্যার ফলে পানিবন্দী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সংকটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সারাদিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসিরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে গিয়ে ১২৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৫ সে.মি. এবং ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১১৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কমে গিয়ে ১০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক হোসেন জানান, উলিপুর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সাহেবের আলগার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। এই ইউনিয়নে মোট পাঁচ হাজার ৩৭০টি পরিবারের মধ্যে ৪ হাজার ৩শ’ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ১৪টি উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছে ১৮শ’ পরিবারের লোকজন। এছাড়াও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে ৮শ’ পরিবার। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, এই ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং চারদিকে পানি ওঠায় লোকজন রান্নাবান্না করতে না পেরে এক প্রকার না খেয়ে রয়েছে। এছাড়াও দিনমজুর শ্রেণির লোকেরা কর্মসংকটের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জরুরি ভিত্তিতে তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথা বলেন তিনি। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, ঘরে ধান আছে কিন্তু ভাঙতে না পারায় খেতে পারছে না বানভাসিরা। এখানে জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবার প্রয়োজন। এই ইউনিয়নের ২৪ হাজার মানুষের মধ্যে ২২ হাজার মানুষ পানিবন্দী। এদিকে যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের কর্ত্তিমারী চাকতাবাড়ী এলাকায় সোমবার রাতে ওয়াপদা বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে কর্ত্তিমারী মাস্টারপাড়ায় বাঁধের ৭০ ফিট অংশ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যাদুরচর ডিগ্রি কলেজ, যাদুরচর মডেল কলেজ এবং এমএ হাকিম আইডয়াল মহিলা কলেজসহ ১০টি গ্রাম এখন পানির নীচে অবস্থান করছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে পুরো জেলাজুড়ে। কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় নতুন করে ৩ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১