বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৬ April ২০১৯

সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে নতুন উদ্যোগ


সূর্যই আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র। মহাজাগতিক এই বস্তুর মধ্যে সম সময়ই তুমুল আলোড়ন চলে। গোটা মানবজাতি সারা বছর যত পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সূর্যের মধ্যে একই পরিমাণ জ্বালানি সৃষ্টি হয়। সেই জ্বালানি বা সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক কণায় ভরা মেঘ বার বার মহাকাশে বেরিয়ে আসে। আর তার থাবা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। সূর্যের বুকে ব্যাপক আলোড়নের ধাক্কা পৃথিবীতেও ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই সৌরঝড় সম্পর্কে আরো জানতে ও সময়মতো তার পূর্বাভাস দিতে উদ্যোগ নিচ্ছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা।

এর আগে সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক কণায় ভরা মেঘ মহাকাশে বেরিয়ে এসে স্যাটেলাইটের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ১৯৮৯ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই এমন ঝামেলা থেকে বাঁচতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন গবেষকরা।

জার্মান সৌর পদার্থবিজ্ঞানী ড. আলেক্সান্ডার ভারমুট সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্কও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সে সময়ে ক্যানাডার কুইবেক প্রদেশে ট্রান্সফরমার গলে যাওয়ায় গোটা বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে পড়েছিল। ফলে শীতকালের চরম আবহাওয়ার মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ আচমকা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

তাই জার্মানির পটসডাম শহরের পদার্থবিদরা সংবেদনশীল প্রযুক্তির সুরক্ষার লক্ষ্যে সৌর ঝড় সম্পর্কে পূর্বাভাষ দিতে চান। সেই লক্ষ্যে তাদের আরো ভালোভাবে সূর্য পরীক্ষা করতে হবে। একাধিক স্যাটেলাইট এর মধ্যেই সূর্য ও তার ঝড়ো বায়ুমণ্ডলের অতি সূক্ষ্ম ছবি সরবরাহ করেছে।

লাইবনিৎস ইনস্টিটিউটের সৌর পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রো. ড. গটফ্রিড মান বলেন, এমন ছবি সত্যি খুব বিস্ময়কর। এটাই সৌর পদার্থবিদ্যার বৈশিষ্ট্য। যে সহকর্মীরা নক্ষত্র বা ছায়াপথের পদার্থবিদ্যা নিয়ে চর্চা করেন, তারা এত কাছ থেকে প্রক্রিয়াগুলো দেখতে পারেন না, যেমনটা সূর্যের ক্ষেত্রে সম্ভব। তাছাড়া তাদের কাছে সময়ের মানদণ্ডও অন্যরকম।

সোলার অরবিটাল মহাকাশযানের মাধ্যমে গবেষকরা এই প্রথম সৌর ঝড়ের উৎপত্তি পর্যবেক্ষণ করতে চান। তার জন্য এই স্যাটেলাইটকে সূর্যের কাছে গিয়ে ১০ দিন ধরে একই অংশের দিকে নজর রাখতে হবে।

এই স্যাটেলাইটের জন্য পটসডাম শহরের পদার্থবিদরা গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র সৃষ্টির কাজে অংশ নিয়েছেন এবং আইনস্টাইন টাওয়ারে তা পরীক্ষাও করেছেন। ৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে সৌর গবেষণার কাজ চলছে। এই ঐতিহাসিক ভবনে তারা এখন বিশেষ ধরনের টেলিস্কোপের জন্য জটিল যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করছেন।

জোরালো রশ্মি থেকে সোলার অরবিটাল যান রক্ষা করতে বিশেষ এক তাপ নিরোধক বর্ম রয়েছে। যানের মধ্যে একটি টেলিস্কোপ ভালো করে সূর্য পর্যবেক্ষণ করবে এবং তার বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে উত্তপ্ত অংশগুলো পরীক্ষা করবে। সেইসব জায়গায়ই সৌরঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সূর্যের মধ্যে বিশাল মাত্রায় যে তোলপাড় কাণ্ড চলে, বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন তা লক্ষ করেন। এই জ্ঞান কি পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা বদলে দেবে? প্রো. ড. গটফ্রিড মান মনে করেন, এমন উপলব্ধি হলে নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হয়। বোঝা যায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা কতটা গুরুত্বহীন। মানুষ হিসেবে প্রায়ই আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কিন্তু বাস্তবে আমরা ধূলিকণার মতো। প্রাকৃতিক নিয়মের সামনে সম্পূর্ণ অসহায়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে নতুন এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। গবেষকরা এখন থেকেই এই অভিযান থেকে প্রাপ্য তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। কারণ তা থেকে সূর্যের কর্মপ্রণালী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১