আপডেট : ০১ April ২০১৯
যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়ক— প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের চলাফেরার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের এই চলার পথ আজ আর যেন আমাদের নেই। এগুলো দিন দিন মানুষের নিরাপদ চলাচলের ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ের জন্য সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের সড়ক দুর্ঘটনার দিকে তীক্ষ নজর দিলে এর পেছনে কিছু বিশেষ কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে নেই কোনো জেব্রাক্রসিং, নেই কোনো ধরনের রোড ডিভাইডার। দেশের সব সড়কে প্রয়োজনীয় সাইন, মার্কিং ও স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থাও চোখে পড়ে না। ট্রাফিক আইন, রাস্তা পারাপার ও গাড়িতে ওঠানামার বিষয়েও অবগত নয় সাধারণ মানুষ। এছাড়া মহাসড়কের লেন সংখ্যার ঘাটতি, প্রধান সড়কে রিকশার অবাধ ও স্বাধীন চলাচল সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্যে অনেকটাই ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করি। উপরন্তু সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকদের নিদ্রাহীনতা, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না করা, বিকল্প চালক দিয়ে গাড়ি না চালানোও অন্যতম। গত সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় ২৫ হাজার ১২০ জন। আহত ৬২ হাজার ৪৮২ জন। এসব দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশের পেছনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতি। প্রাইভেট কার ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রাকচাপায় নিহত, বাসের ধাক্কায় নিহত, ট্রাক উল্টে নিহত, টমটম-অটোর মুখামুখি সংঘর্ষ— এসব আর কতদিন ভুক্তভোগী মানুষ সহ্য করবে? সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও কি আমাদের বোধ-বুদ্ধি জাগ্রত হবে না? দুর্ঘটনার আরো একটি বড় কারণ দীর্ঘ সময় চালকদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথে-ঘাটে থাকা। এতে করে তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা পেশায় মনোনিবেশ করতে পারে না। রাস্তাঘাটে ফিটনেসহীন গাড়ির চলাচলও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। আবার পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, একই সড়কে বিভিন্ন গতির যান চলাচল, সড়কের আশপাশে ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমের পরিধি বেড়ে যাওয়া, সড়কের নির্মাণ নকশায় ত্রুটি থাকা ও পথচারীর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। তবে সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার সাতটি কারণ চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে— বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অদক্ষ-লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং-ওভারটেকিং করার প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ-বিরামহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল সড়ক। তবে শুধু চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিংকে এককভাবে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, যাত্রী ও পথচারীদেরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদেরও যথাযথ দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। বর্তমান সময়ের সড়ক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সবার এই বোধোদয় হোক, এ শুধু কোনো একটি পরিবারের দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় ক্ষতি। এর প্রতিরোধে সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে গাড়ির চালক, পরিবহনকর্মী এবং যাত্রীসাধারণ— সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে কাজ করবেন এবং একই সঙ্গে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও উদ্যোগী হবেন। ক্রমেই পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বাসা থেকে রাস্তায় বের হলে চিন্তায় পড়তে হয় নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারব তো? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের কাছাকাছি সময়ে এসেও একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। এখনই সময় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা। লেখক : শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১