আপডেট : ২৪ February ২০১৯
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে তার আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই। একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে স্বমহিমায়। আর এই আত্মবিশ্বাস তৈরির মূল ভিত স্থাপিত হওয়ার সময় হলো শিশুকাল। ছোটবেলা থেকেই একটি শিশুকে নিজের প্রতি আস্থা রাখা এবং আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়ের দায়িত্ব অনেক বেশি। এ বিষয়ে বাবা-মায়ের করণীয় এবং বর্জনীয় কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো। লিখেছেন সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন শিশুর কৌতুহল মেটানোর চেষ্টা করুন কৌতূহল শিশুর খুবই সাধারণ এবং সহজাত একটি বিষয়। চেষ্টা করুন শিশুর কৌতূহলকে যথাযথভাবে নিবারণ করতে। কোনো মতেই তা দমনের চেষ্টা করা উচিত নয়। সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ এড়িয়ে চলুন সন্তানের কাছে তাকে নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তার কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। তোমার রেজাল্ট নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। তুমি এই কাজটা ভালোভাবে পারবে তো? এই সংশয়মূলক কথাগুলো আপনার সন্তানের মধ্যে এক ধরনের ভয় সৃষ্টি করবে। তার আত্মবিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দিতে এই সংশয়ই যথেষ্ট। সুতরাং সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হলে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুকে উৎসাহ দিন আপনার সন্তানের যেকোনো কাজের প্রথম প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করুন। সে প্রথম আঁকল বা প্রথম অক্ষর লিখল। তার এই কাজে তাকে প্রশংসা করুন। উৎসাহ দিন। এতে করে শিশুটির নিজের প্রতি আস্থা বড়বে এবং এতে দক্ষতা লাভের জন্য নিয়মিত অনুশীলন করবে। শিশুর কর্মদক্ষতা বাড়াতে উৎসাহ এবং প্রশংসা প্রয়োজন। জীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব বোঝান ছোট বয়স থেকেই সন্তানকে জীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব বোঝান। পরিশ্রম করে জীবনে সফলতা পেয়েছে এমন ব্যক্তিদের গল্প শোনান। শিশুকে এটিও শেখাতে হবে যে, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এজন্য পরিশ্রমে উৎসাহ দিতে হবে। ছোট ছোট কাজে তাকে দায়িত্ব দিন পরিবারে ছোট বলে তাকে অগ্রাহ্য করার কিছু নেই। দৈনন্দিন কাজের মধ্যে থেকে তাকে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন। ছোট ভাইবোন কেউ থাকলে তাকে এভাবে বলতে পারেন। ‘তুমি খেয়াল রেখ, ভাইয়া যেন খাট থেকে পড়ে না যায়।’ এতে করে শিশু নিজে উৎসাহিত হয়ে কাজটি করতে চাইবে। এখানে সে বাড়ির অন্য বড়দের মতোই নিজেকে ভাবতে শুরু করে। তার মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হবে। বয়স উপযোগী কাজ দিন শিশুকে কখনই তার আয়ত্তের বাইরের কোনো কাজ দেওয়া উচিত নয় এবং তার কাছ থেকে সবসময় শতভাগ সফলতা আশাও করা ঠিক নয়। তাকে সে ধরনের কাজই দিন, যা তার বয়স এবং সামর্থ্যের সঙ্গে যায়। কারণ কাজে ব্যর্থতা শিশুর মনে হীনম্মন্যতা তৈরি করে, যা তার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে অন্তরায় হতে পারে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিন আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য শিশুকে তার দক্ষতার জায়গাটা বোঝাতে হবে। এটি বোঝানোর জন্য তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিন। একটা মোটা বই হাতে দিয়ে হয়ত তাকে বললেন দেখি তুমি এটা টেবিলে রেখে আসতে পার কি না? শিশুটি যখন বইটি জায়গামতো রেখে আসতে পারবে, তখন সে তার সামর্থ্য সম্পর্কে জানবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ফলে সে এমন চ্যালেঞ্জগুলো সহজেই লুফে নেবে। আপনার এক্ষেত্রে উচিত হবে শিশুটিকে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া। কারো সঙ্গে তুলনা নয় শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সবচেয়ে বড় যে অন্তরায়, তা হলো অন্যের সঙ্গে শিশুর তুলনা করা। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। কারো হয়ত খুব সহজেই কোনো বিষয় আত্মস্থ করার ক্ষমতা রয়েছে। কেউ বা ধীরে শেখে। ফলে একজনকে অন্যজনের সঙ্গে তুলনা করা কখনই উচিত নয়। এটি শিশুর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সমালোচনা নয় মতামত প্রকাশ করুন নেতিবাচক সমালোচনা বরাবরই আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। সন্তানের কাজের কোনো ভুল হলেও সেটি ধরিয়ে দিন ইতিবাচকভাবে। তার কাজের সরাসরি সমালোচনা না করে এ কাজটি সে সঠিকভাবে কী করে করতে পারত সে বিষয়ে আপনার পরামর্শ দিন। ভুল থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করতে শেখান। এতে তার আত্মপ্রত্যয় বাড়বে। স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দিন শিশুকে তার সব কাজে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকুন। তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কিছু কাজ একা করার জন্য ছেড়ে দিন। যখন দেখবেন সে কাজটিতে আটকে যাচ্ছে, তখনই কেবল সহযোগিতা করুন। এতে শিশুর পরনির্ভরশীলতা কমবে এবং নিজেই নিজের কাজ করতে পারার মধ্য দিয়ে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। কঠোরতা বর্জন করুন শিশুকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অভিভাবককে কখনো কখনো দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়। সন্তানের ওপর কর্তৃত্ব প্রদর্শনেরও প্রয়োজন হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার কর্তৃত্ব যেন অধিক কঠোরতায় রূপ না নেয়। আপনার কঠোরতা সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। এটি তাকে আত্মবিশ্বাসী না করে উল্টো ভীত করে তুলতে পারে। অভিভাবকই যখন হিরো প্রতিটি সন্তানের কাছে তার মা-বাবাই হিরো। সে তার বাবা-মাকে আদর্শ মেনে নিয়ে অনুসরণের চেষ্টা করে। তাই অভিভাবক যে-ই হোন না কেন সন্তানকে নিজের ভালো দিকগুলো শিক্ষা দিন। যেকোনো কাজ সহজ করে করার উপায় শেখান। কেননা আপনার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা সে সারা জীবন মনে রাখবে। সৃজনশীলতা বিকাশে উৎসাহ প্রদান শিশুকে সবসময় নতুন কিছু করতে শেখাতে হবে। শিশুর মধ্যে যে প্রতিভাই থাকুক না কেন সেটির পরিচর্যা করা এবং তাকে অনুপ্রাণিত করা খুবই জরুরি। শিশু যখন নিজে থেকেই নতুন কিছু তৈরি করতে পারবে, তখন তার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এমনিতেই।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১